জাতীয় সমাজসেবা দিবসের প্রত্যাশা
ড.ফোরকান আলী
১৯৭৮ সালে এই পরিদপ্তরকে সরকারের একটি স্থায়ী জাতিগঠনমূলক বিভাগ হিসেবে উন্নীত করা হয়। ১৯৮৪ সালে সমাজসেবা অধিদপ্তর হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ২০১২ সালের ৪ জুন বাংলাদেশ সরকার ২ জানুয়ারিকে সমাজসেবা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। ‘নেই পাশে কেউ যার, সমাজসেবা আছে তার’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের কাছে সরকারের সেবা পৌঁছে দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে জাতীয় সমাজসেবা দিবস ২০২৫ পালিত হতে যাচ্ছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী দিবসটি পালন করা হবে। সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নত জীবনযাপনের ব্যবস্থা করতে সরকারের পক্ষ থেকে যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, দিবসটি তারই বার্তা নিয়ে হাজির হয়ে থাকে। দরিদ্র, অসহায় শিশু, প্রতিবন্ধী, কিশোর-কিশোরী, স্বামী নিগৃহীতা, নারী ও প্রবীণ ব্যক্তিসহ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
বেঁচে থাকা মানুষের অধিকার
মানুষ বাঁচতে চায় মর্যাদা নিয়ে এবং অধিকার নিয়ে। কিছু মৌলিক চাহিদা মানব জীবনের জন্য আবশ্যকীয়। এ চাহিদাসমূহ হচ্ছে-খাদ্য, বস্ত্র, আবাসন, শিক্ষা ও চিকিৎসা। যে কোনো চাহিদার অপূর্ণতায় জীবন চলা অসম্ভব। বিশেষত আবাসন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আবাসন বা বাসস্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র। একটি নির্দিষ্ট বাসগৃহে মানুষ শান্তিতে ও স্বাস্তিতে বসবাস করতে চায়। সুন্দর আবাস প্রত্যেকের সুখের ঠিকানা। আমরা কী গৃহহীন মানুষদের জীবনচিত্র কেমন, তা কী ভাবি!
সমাজের ছিন্নমূল মানুষেরা কী মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে? একটি গৃহ হচ্ছে পরিবারের সব ধরনের উন্নয়নের মূলভিত্তি। এ গৃহকে কেন্দ্র করে মানুষ সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্ন রচনা করে। প্রাকৃতিক, অপ্রাকৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকসহ বিবিধ কারণে সমাজের অনেক মানুষ গৃহহীন হচ্ছে। আাশ্রয়হীন ব্যক্তিদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ। এক্ষেত্রে ‘আশ্রয়ণ’ হচ্ছে সরকারের একটি অন্যতম সামাজিক সুরক্ষামূলক কর্মসূচি।
বাকহীন ও শ্রবণহীন ব্যক্তির অধিকার
‘ভাষা’ মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম। মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করে নিজ প্রয়োজনে। ব্যক্তিগত চাহিদা, প্রাপ্তি, আবেগ, অনুভূতি, রাগ, অনুরাগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমরা ভাষার বহুল ব্যবহার দেখতে পাই। ভাব প্রকাশের মাধ্যম অঞ্চল, এলাকা, সম্প্রদায় ও সংস্কৃতি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। জীবনচক্রের ধাপে ধাপে মানুষ নানান ভাবে মনের ভাব প্রকাশ করে।
একজন নবজাতক মায়ের কাছে মনের ভাব প্রকাশ করে কান্নার মাধ্যমে। কৈশোর, যৌবন, পরিণত বয়স ও বৃদ্ধকালে মানুষের মনের ভাব প্রকাশে তারতম্য পরিলক্ষিত। দুঃখ, অসুস্থতা ও বিষণ্ণতার মাঝে মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করছে কাতর হয়ে। কিন্তু জন্মগতভবে যারা বাক শক্তিহীন বা শ্রবণ শক্তিহীন তাদের কী হবে? জন্মগত প্রতিবন্ধিতার শিকার বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের মনের ভাব প্রকাশের উপায় কী!
বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধীরা আমাদেরই অতি আপনজন এবং সমাজেই বসবাস করছে। তারা প্রতিনিয়ত সাধারণের কাছে ও আপনজনের কাছে মনের আকুতি প্রকাশ করে যায়। কিন্তু ভাষাগত প্রতিবন্ধকতার শিকার বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের অধিকার কী পূর্ণমাত্রায় পূর্ণ হচ্ছে? সমাজের রূপ, চাহিার অপূর্ণতা নিয়েই চলছে এসব প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জীবন। সমাজের মানুষ বাক-শ্রবণহীন ব্যক্তিদের ‘বুক, বোবা বা বুগী, বোমড়া, নাফাং’ নামে ডাকে যা একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির প্রতি ব্যঙ্গ বিদ্রুপ প্রদর্শনের শামিল।
জরিপ একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অন্যতম হাতিয়ার। সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় (ডিআইএস) নামে প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ পরিচালনা করছে। এ জরিপের অন্যতম লক্ষ্য প্রতিবন্ধিতার ধরণ চিহ্নিতকরণ, মাত্রা নিরুপণ ও সংখ্যা নির্ণয় করা। (ডিআইএস) হচ্ছে জরিপকৃত ও শনাক্তকৃত প্রতিবন্ধী ব্যক্তির হাল নাগাদ তথ্য ভাণ্ডার। এ তথ্যভাণ্ডারে ১২ প্রকার প্রতিবন্ধীর তথ্য সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং সমগ্র দেশে মোট প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ৩৩ লাখ ২০ হাজার ৮৫৪ জন।
প্রতিবন্ধিতার ধরণ অনুযায়ী তিন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ‘ইশরা ভাষা’ ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ১. বাক প্রতিবন্ধিতা যারা স্বাভাবিক ও সুস্পষ্টভাবে কথা বলতে পারে না। দেশে বর্তমান বাক প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ১ লাখ ৯৪ হাজার ৭৪১ জন। ২. শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা যারা কানে শুনতে পায় না এবং যার সংখ্যা ১ লাখ ৩৪ হাজার ২০৬ জন। ৩. শ্রবণদৃষ্টি প্রতিবন্ধীতা যারা কানে শুনে না এবং চোখে দেখতে পায় না যার সংখ্যা ২ হাজার ৬০০ জন।
বাক-শ্রবণহীন ব্যক্তিগণ জন্মগত, দূর্ঘটনাজনিত বা চিকিৎসাজনিত ত্রুটির কারণে ভাষাগত সংকটের সম্মুখীন। মানুষ হিসেবে মনেরভাব প্রকাশ ও মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকা প্রত্যেকের অধিকার। কিন্তু মনের অনুভূতি কিংবা আকুতি প্রকাশে ব্যর্থ ব্যক্তিগণ সর্বত্র অবহেলিত। ভাষাগত প্রতিবন্ধীতার শিকার ব্যক্তিদের অধিকার ও দাবি আজীবন অপূর্ণই থেকে যায়। তাই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে ‘ইশারা ভাষা’র প্রসার করতে হবে সর্বক্ষেত্রে,
শিশুর সামাজিক বিকাশ ও সামাজিক উদ্যোগ
শিশু অতি আদরের। প্রত্যেক পরিবারে একজন শিশুকে কেন্দ্র করে চলে আনন্দ ও উৎসবের আমেজ। অপরিসীম সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে পৃথিবীতে একটি শিশুর আগমন। যারা আজ শিশু, আগামী পৃথিবীর নেতৃত্ব হবে তাদের হাতেই। আজকের শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। তারা সমাজ ও দেশ পরিচালনা করবে এবং দেশ গঠনে অনন্য ভূমিকা পালন করবে। একটি সমৃদ্ধ দেশ গঠনে প্রয়োজন দক্ষ ও আদর্শ নাগরিক। ব্যক্তির আদর্শ ধারনের উৎকৃষ্ট সময় শিশুকাল। মানুষ জীবন ধারনের শক্তি সঞ্চয় করে শিশুকালে। এ সময়ে একজন শিশুর মধ্যে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ভিত সুদৃঢ় হয়। এ সময়ে তারা সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠনের শপথ নেন। তবে একজন শিশুকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজন শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ।
শিশু হিসেবে বিবেচিত কারা? এ বিষয়ে পাঠকের সাম্যক ধারণা আছে। সাধারণ অর্থে শিশু বলতে বুঝায় অতি স্বল্প বয়সের মানব সন্তানকে। যে বয়সে মানব সত্ত্বার বোধশক্তি, মানসিক শক্তি, শারীরিক সক্ষমতা ও মনেরভাব প্রকাশের ক্ষমতা তুলনামূলক কম থাকে। দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সী প্রত্যেক মানব সন্তান শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়। মাতৃগর্ভে সৃষ্ট মানব ভ্রুণ হতে মানব শিশুর উদ্ভব। পরবর্তী ক্রমান্নয়ে শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ ঘটে।
মানুষের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিভিন্ন দিক যেমন: আকার, আয়তন, ওজন, বৃদ্ধি, আবেগ, অনুভূতি প্রভৃতির পরিবর্তন চলে অব্যহত ধারায়। এ ধারা জীবনব্যাপী চলে। জন্ম পরবর্তী মানুষের বৃদ্ধি ও বিকাশের গতি অতি দ্রুত হয়, কিন্তু ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায়। মানুষের দৈহিক বৃদ্ধি ও মানবীয় বিকাশের মাধ্যমে গড়ে ওঠে পরিপূর্ণ মানবসত্ত্বা। মানুষের দৈহিক বা মানবীয় বৃদ্ধি হচ্ছে মানুষের ওজন, উচ্চতা ও বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যথাযর্থ বৃদ্ধি সাধনকে বুঝায়। আবার মানবীয় বিকাশ একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। এ বিকাশের মাধ্যমে জীবনচক্রের ধাপে ধাপে মানুষের দৈহিক, মানসিক, সামাজিক ও আবেগের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে। এরূপ বিকাশে মানুষ অবস্থা ভেদে ইতিবাচক আচরণ প্রদর্শন করে। মানবীয় বিকাশ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন শিশুর অপরিণত মস্তিস্কের চিন্তারশক্তি, বুদ্ধি, কল্পনাশক্তি, সৃজনশীলতা ও কর্মনৈপুণ্যতা বৃদ্ধি পায়।
প্রত্যেক রাষ্ট্র চায় সুনাগরিক। যারা দেশ-জাতির সেবায় নিবেদিত হবে। নাগরিককে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয় শিশুকাল হতে। বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ শিশু এবং প্রতিদিন ৬ হাজার ৭০ জন শিশু জন্মগ্রহণ করে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, শিশুরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার ও অধিকার বঞ্চিত। শিশু নির্যাতন ও নীপিড়নের চিত্র প্রায় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এতে একজন শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। ২০২২ সালে বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ শিশু নির্যাতন বিষয়ক একটি জরিপ পরিচালনা করে। এ জরিপে দেখা যায়, ৯৫.৩ শতাংশ শিশু বিভিন্ন সময়ে বাবা-মা ও অভিভাবক কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
জরিপে অংশ নেওয়া শিশুরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নিজ গৃহ, ঘরের বাহিরে, কর্মক্ষেত্রে বা অন্য কোনো জায়গায় নির্যাতিত হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার নিজ গৃহে। ৮৬.৯ শতাংশ শিশু শারীরিক নির্যাতনের শিকার। শাস্তিস্বরূপ নির্যাতনের ধরণসমূহ: কিল, ঘুষি, চড়, থাপ্পর, লাথি মারা, টানাহেঁচড়া করা, চুলটানা, দাঁড় করিয়ে রাখা, হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা, শরীরে ছেঁকা, অতিরিক্ত ঝাঁকি ইত্যাদি। ৫৫ শতাংশ শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার। এরূপ নির্যাতন নিকট আত্মীয় ও প্রতিবেশী দ্বারা বেশি সংগঠিত হয়। ৩০ শতাংশ শিশু পর্ণগ্রাফি দেখে এবং যার মাধ্যমে যৌন হয়রানীর প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া প্রতিবন্ধিতার কারণেও শিশুরা নির্যাতনের শিকার হয়।
কিশোর গ্যাং: সংঘবদ্ধ অপরাধ ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ
সাম্প্রতিক দেশের অন্যতম বহুল আলোচিত বিষয় কিশোর অপরাধ। দেশের কিশোরেরা দলবদ্ধ হয়ে অপরাধ করছে। কিশোরদের এরূপ দলবদ্ধতা ‘কিশোর গ্যাং’ হিসেবে সর্বত্র পরিচিত। বর্তমানে দেশে কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা ক্রমেই বিস্তার লাভ করছে। প্রতিদিন সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে উঠে প্রকাশ হচ্ছে ‘কিশোর অপরাধ’ বা ‘কিশোর গ্যাং’ বিষয়ক বিরূপ সংবাদ চিত্র। এতে জনমনে ভ্রান্তি ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। ‘কিশোর গ্যাং’ এর বিষয়ে পাড়া-মহল্লা, মিটিং, টকশো ও সুধী সমাবেশে আলোচনায় মুখরিত।
বর্তমান সময়ে সামাজিক শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে ‘কিশোর গ্যাং’ তৎপরতা উদ্বেগজনক। সমাজের আদর্শচ্যুত কিশোরগণ দলবদ্ধ হয়ে অপরাধ করছে। তারা ‘কিশোর গ্যাং’ নামে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে তৎপর। গ্যাং কিংবা সংঘবদ্ধ হয়ে খুনোখুনি, জায়গা দখল, অপহরণ, মারামারি, অপহরণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, ভাড়াটে খাটা, উত্ত্যক্তসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে কিশোরেরা। কিশোর অপরাধ সংশ্লিষ্ট প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ‘বড় ভাইয়া’ গণই শিশু-কিশোর কর্তৃক সংগঠিত সব অপরাধের নিয়ন্ত্রক। বা মাস্টার মাইন্ড। ‘বড়ভাইয়া’ গণ সমাজের পেশাদার অপরাধী, মাস্তান কিংবা মুখোশধারী কাউন্সিলর কিংবা জনপ্রতিনিধি। ছদ্দবেশী ‘বড়ভাইয়া’গণ অবুঝ কিশোর দ্বারা সংঘঠিত অপরাধের মূল নায়ক ও মাস্টার মাইন্ডার। অন্তরালে গডফাদাররাই কিশোরদের প্রলুব্ধ করে এবং অপরাধে জড়িত করছে। কিশোরদের এ মর্মে আশ্বস্ত করা হচ্ছে যে, কিশোর বয়সের অপরাধ শাস্তিযোগ্য নয়, বরং সহজ জামিনযোগ্য। ‘কিশোর গ্যাং’ আজ প্রভাবশালীদের ক্ষমতা, দাপট, দখলদারিত্ব, আধিপত্য বিস্তার ও অবৈধ উপার্যনের মাধ্যম। আদর্শচ্যুত কিশোরেরা আজ মোহগ্রস্ত। স্বীয় কৃত অপরাধের সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে মোটেও ভাবে না। কিশোরেরা স্বল্প লোভের শিকার এবং ‘বড়ভাইয়া’দের নজরবন্দি। তাই ‘কিশোর গ্যাং’ নির্বিঘ্নে দিন দিন ভয়ানক রূপে অবতীর্ণ হচ্ছে।
শিশু-কিশোরেরা দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক। তাদেরকে যথা সময়ে নৈতিকতাবোধ, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও জাতীয়তাবোধ ধারণে সমৃদ্ধ করতে হবে। পারিবারিক শিক্ষা, ধর্মীয় শিক্ষা ও সামাজিক চেতনা জাগ্রতকরণের মাধ্যমে কিশোরদের চারিত্রিক উৎকর্ষ সাধন সম্ভব। সবাইকে উপলদ্ধি করতে হবে যে, আদর্শহীন শিশু পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য বোঝা। দেশের শৃঙ্খলা লঙ্ঘনকারী এবং আদর্শচ্যুত কিশোরদের হেফাজত, সংশোধন ও আত্মশুদ্ধির সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। বিদ্যমান আইনসমূহে কিশোর অপরাধীদের সংশোধনের সুযোগ প্রদান করা হয়েছে। কোনো শাস্তির বিধান নাই। কিশোর অপরাধীদের যারা ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করছে, তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। শৃঙ্খলিত ও চরিত্রবান শিশু-কিশোরেরাই হবে একটি আদর্শ রাষ্ট্রের রূপকার। চারিত্রিক উৎকর্ষিত শিশুরাই হবে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার। আমরা আশাকরি এবারের জাতীয় সমাজ সেবা দিবসে আলোচিত বিষয়গুলো বাস্তবে রুপ পাক।
লেখক: গবেষক ও সাবেক অধ্যক্ষ
কেএসকে/জিকেএস