উল্টো ইঞ্জিন চালানো ট্রেন দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ
মোহাম্মদ সোহেল রানা
নিরাপদ ও আরামদায়ক যাতায়াতের জন্য সবার প্রথম পছন্দ ট্রেন ভ্রমণ। ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে দেওয়ানগঞ্জ বাজার পর্যন্ত দূরত্ব ২১২ কিলোমিটার। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থেকে সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নয়। সে কারণে এ অঞ্চলের মানুষ ঢাকা যাতায়াতে ট্রেনের ওপর নির্ভরশীল। ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর জেলার লোকজন ছাড়াও সহজে দ্রুত যাতায়াতের জন্য কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর, রৌমারী, গাইবান্ধা জেলার বালাসী, ফুলছরির অনেক যাত্রীও চলাচল করেন। তবে ময়মনসিংহ হয়ে চলাচল করা এই রুটে যাত্রীর চাহিদা বাড়লেও সেই তুলনায় উন্নতি চোখে পড়ার মতো নেই।
ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস নামের দুটি আন্তঃনগর ট্রেনের পাশাপাশি ব্যক্তি মালিকানার কমিউটার নামে দুটি ট্রেন ও মেইল ট্রেন চলাচল করে। এছাড়া শিক্ষা ও ব্যবসার প্রয়োজনে যাতায়াতের জন্য ময়মনসিংহ থেকে দেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত মেইল ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে।
এই রুটে যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমাণ ট্রেন নেই, এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। তাই নতুন এক জোড়া ট্রেন চালু করার দীর্ঘদিনের দাবি জামালপুরবাসীর। তবে এরচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এই রুটে লাইনের দুর্বলতা। ঢাকা কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার পর গাজীপুরের জয়দেবপুর স্টেশন পর্যন্ত ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের মতো গতিতে ছুটে চলে। তবে এরপরে থেকেই লাইনের দুর্বলতা দেখা যায়।
রেললাইনের স্লিপারের পাশে পর্যাপ্ত পরিমাণ না থাকা, মাটি সরে যাওয়া, কোন কোন জায়গায় কাঠের স্লিপার নষ্টসহ নানা ধরনের সমস্যা দেখা মিলে। শুধু তাই নয় কোথাও কোথাও স্লিপার ও গার্ডার আটকানোর জন্য ব্যবহৃত নাটবল্টুও নেই। এছাড়া কিছু কিছু জায়গায় লাইন দিয়ে যখন ট্রেন চলছে দেখে মনে হবে যেন কোনো দোলনা হেলে দুলে যাচ্ছে। ঝুঁকিতে থাকা এসব রেলপথে ট্রেনের লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। দেশে কাগজে-কলমে ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৬৫ কিলোমিটার। তবে দুর্ঘটনা এড়াতে গতি কমিয়ে ট্রেন চলাচল করতে হচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ের বেশ কিছু ইঞ্জিনে (লোকোমোটিভ) দুদিকে (যখন যে অংশ সামনে থাকে) বসার সুযোগ থাকলেও কিছু সিরিজের ইঞ্জিনে বসা যায় একদিকে। যাত্রা শুরুর প্রান্ত বা শেষ প্রান্ত থেকে এসব ইঞ্জিনের চালকের বসার অংশটি গন্তব্যের দিকে ঘুরিয়ে সামনে আনা হয়। এতে দিনে ও বিশেষ করে রাতে চালকের ইঞ্জিনের সামনে দেখতে কোনো অসুবিধা না হয়। এমনকি কোনো সিগন্যালও যেন মিস না হয়।
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ স্টেশনটি ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রেলপথের সর্বশেষ স্টেশন। তবে এ স্টেশনে ইঞ্জিন ও কোচ ঘোরানোর ‘টার্ন টেবিলভ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে আছে। মাঝে মাঝে ব্যবহার করা গেলেও বেশিরভাগ সময়ই এই ‘টার্ন টেবিল’ কোনোই কাজে আসে না। ফলে ট্রেনের ইঞ্জিন ঘুরানো হয় না। তাই উল্টো করে ইঞ্জিন চালাতে বাধ্য হোন চালকরা। এতে সামনের অংশ থেকে কমপক্ষে ১৫/২০ ফিট দূরে বসে ট্রেনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। উল্টো করে ট্রেন চালাতে নিয়মিতই বিভিন্ন সমস্যা ও ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হচ্ছেন চালকরা। অনেক স্থানে নিরাপদ দূরত্ব থেকে সিগন্যাল ও লেভেল ক্রসিং দেখা যায় না। ফলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
বিশেষ করে চলতি শীতের ঘন কুয়াশার সময়ে সিগন্যাল ও লেভেল ক্রসিং দেখা আরও কঠিন হয়ে পড়বে। যার ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে গতি কমিয়ে ট্রেন চালাতে হবে। এতে ট্রেনের রানিং টাইম বজায় রাখা সম্ভব হবে না। শুধু তাই নয় সিগন্যাল ও লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যাবে।
নিরাপদ যাতায়াতের জন্য অতি দ্রুত দেওয়ানগঞ্জের টার্ন টেবিল মেরামত এবং রেললাইনের বিভিন্ন ত্রুটি সমাধানের জন্য বাংলাদেশের রেলওয়ের কর্তৃপক্ষের প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করছি। একইসঙ্গে ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটের যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে নতুন ট্রেন চালুর ব্যবস্থা করা।
লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী।
কেএসকে/জিকেএস