বিশ্বের সবচেয়ে ভাগ্যবতী নারী, টাইটানিক থেকেও বেঁচে ফিরেছিলেন

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:০৮ পিএম, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

বিশ্বের সবচেয়ে ভাগ্যবান পুরুষ বলা হয় ফ্রেন সিলাকে। কিন্তু ভাগ্যবান নারী কে তা জানেন কি? বিশ্বের সবচেয়ে ভাগ্যবান নারীর খেতাব ভায়োলেট জেসপের। তাকে এই খেতাবে ভূষিত করার অসংখ্য কারণও রয়েছে। ভায়োলেট জেসপের জীবনের ঘটনাগুলো এতোটাই রোমাঞ্চকর যা আপনাকে হতবাক করবেই।

ভায়োলেট জেসপের জন্ম ১৮৮৭ সালের ২ অক্টোবর আর্জেন্টিনার বাহিয়া ব্লাঙ্কার কাছে। তিনি ছিলেন আইরিশ অভিবাসী উইলিয়াম এবং ক্যাথরিন জেসপের বড় কন্যা। তবে তার আগে কয়েকটি সন্তান মারা গেছে এই দম্পতির। এরপর আরও কয়েকটি সন্তান হয় তাদের। জেসপ ছোটবেলা থেকেই ভাইবোনের দেখাশোনা করেই বড় হয়েছে।

একবার জেসপ যক্ষ্মায় আক্রান্ত হোন এবং খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসক তার বাঁচার আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু চিকিৎসকদের ভবিষ্যদ্বাণী এবং আশঙ্কা কাটিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন জেসপ। ১৬ বছর বয়সে বাবাকে হারান তিনি। এরপর তার পুরো পরিবার ইংল্যান্ডে চলে আসেন।

স্কুলে পড়াশোনা করা, ছোট ভাইবোনের দেখাশোনা করাই ছিল তার কাজ। কিন্তু তার মা অসুস্থ হওয়ার পর সংসারের কাজও করতে হতো জেসপকে। সংসার চালাতে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে চাকরির সন্ধানে বের হতে হয়। ১৯০৮ সালে হোয়াইট স্টার লাইন কোম্পানিতে একজন সেবিকা হিসেবে যোগ দেন জেসপ। ১৯১০ সালে ওই কোম্পানির জাহাজ এইচএমএস অলিম্পিকে কাজ শুরু করেন।

১৯১১ সালে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে অলিম্পিকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে দুইটি জাহাজই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হতাহত হন অনেকে। তবে সে যাত্রায় অক্ষতই ছিলেন জেসপ।

পরের বছরই সেই সময়ের সবচেয়ে বড় জাহাজ টাইটানিকে সেবিকার দায়িত্ব পান তিনি। একটি বিশালাকার বরফশৈলের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সেই জাহাজের করুণ পরিণতির কথা তো এখন সবারই জানা। দেড় হাজারের বেশি মানুষ এই জাহাজডুবিতে প্রাণ হারালেও বেঁচে গিয়েছিলেন জেসপ।

কিন্তু জাহাজ নিয়ে এমন বিভীষিকার স্মৃতি থাকলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আহত সৈনিকদের সেবা করার জন্য ‘ব্রিটানিক’ জাহাজে সেবিকা হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯১৬ সালের ১৯ নভেম্বর জার্মানির যুদ্ধজাহাজ ইউ-বোট’র আক্রমণে ব্রিটানিকের তলদেশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ডুবে যেতে থাকে। জাহাজের তলার একটি অংশ ধরে অলৌকিকভাবে সে যাত্রায়ও বেঁচে গিয়েছিলেন জেসপ।

বিশ্বের সবচেয়ে ভাগ্যবতী নারী, টাইটানিক থেকেও বেঁচে ফিরেছিলেন

যুদ্ধের পরে ভায়োলেট হোয়াইট স্টার লাইনের জন্য কাজ চালিয়ে যান। এরপর আবার রয়্যাল মেল লাইনে যোগদান করেন। রেড স্টারের সঙ্গে তার মেয়াদকালে, ভায়োলেট সেই কোম্পানির বৃহত্তম জাহাজ, বেলজেনল্যান্ডে সারা বিশ্বে দুটি ক্রুজে গিয়েছিলেন। ৩০ বছর বয়সে ভায়োলেট বিয়ে করেছিলেন। তবে সেই বিয়ে বেশিদিন টেকেনি।

১৯৫০ সালে তিনি গ্রেট অ্যাশফিল্ড, সাফোকে থেকে অবসর নেন। অবসর গ্রহণের কয়েক বছর পরে, ভায়োলেট এক ঝড়ের রাতে একটি টেলিফোন কল পেয়েছিলেন বলে দাবি করেছিলেন, একজন নারী তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে টাইটানিক ডুবে যাওয়ার রাতে তিনি একটি শিশুকে বাঁচিয়েছিলেন কি না। ভায়োলেট উত্তর দেন হ্যাঁ। তখন সেই নারী তাকে জানান তিনিই সেই শিশুটি। ‘দ্য আনসিঙ্কেবল লেডি’ খেতাব পাওয়া এই নারী ১৯৭১ সালে ৮৪ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

সূত্র: ব্রিটানিকা

কেএসকে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।