চিঠি দিও লাল ডাকবাক্সে

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:১৯ পিএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

তানজিদ শুভ্র

বাংলা ব্যাকরণের নির্মিতি অংশে চিঠি লেখা শিখে বাড়ির কাজের নোট খাতায় কিংবা পরীক্ষার উত্তরপত্রে লিখেছি। আর কোথায় বা চিঠি পাঠাব প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগে! শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই আব্বুর মোবাইল ছিল বন্ধুদের সঙ্গে ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর মাধ্যম। সেই প্রাক শৈশবেই প্রযুক্তির বিকল্প ছিল হাতের মুঠোয়।

বহু বছর আগে ইংরেজ নাট্যকার সমারসেট মম লিখেছিলেন, চিঠি লেখা এক হারিয়ে যাওয়া শিল্প। প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় তা এখন সত্যি। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ তার লেখা ‘ভালো আছি, ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’ লিখতে গিয়ে কি ভেবেছিলেন যে মানুষ একসময় শুধুই আকাশের ঠিকানায় অর্থাৎ অন্তর্জালে চিঠি লিখবে! দাপ্তরিক কাজের ক্ষেত্রেই হয়তো এখন ডাকঘরে চিঠি আসে, তেমনি ই-মেইলও পরিণত হয়েছে দাপ্তরিক বার্তা আদান প্রদানে। এখন আর কয়জনই বা আছে নিজের মনের কথা ই-মেইল করে বন্ধুকে জানায়? তবে হ্যাঁ, আমার ই-মেইলে ব্যক্তিগত কথাবার্তা আদান প্রদানের অভিজ্ঞতা আছে।

সময়ের পরিক্রমায় ব্যক্তিগত এসএমএস থেকে শুরু করে বিভিন্ন অ্যাপের সাহায্যে মুহূর্তের মধ্যেই বার্তা আদান-প্রদান করা যাচ্ছে। এসবের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে চিঠি লেখার আগ্রহ কিংবা চাহিদা। বার্তা পাঠানোর জন্য ফেসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামসহ নানা প্ল্যাটফর্ম অহরহ ব্যবহার হওয়ায় বার্তার গুরুত্ব অতটুকু থাকে না। যখন কেউ এসএমএস করে তখন একটু বিশেষত্ব থাকে যে অনলাইনের যুগে কেউ অফলাইনে কোনো বার্তা লিখল। অনলাইন বার্তায় অনুভূতির গভীরতা যেন খুঁজে পাই না তাৎক্ষণিক প্রত্যুত্তর পেয়ে।

প্রযুক্তি জীবন সহজ করতে গিয়ে কেড়ে নিয়েছে শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের স্পৃহা। একটি গবেষণা জানিয়েছে, কি-বোর্ডে লেখার চেয়ে কলমে বা পেন্সিলে লিখলে তা মনে দাগ কেটে গেঁথে বসে বেশি। কম্পিউটারে লেখার সময়ে ভুল সংশোধন, তা মুছে পরিষ্কার ভাবে লেখার সুবিধা থাকে। কিন্তু কাগজে কলমে লেখার সময়ে সংশোধনের সুযোগ কম এবং পরিশ্রমসাধ্য। শিল্পীসত্তা লালনের জন্য চিঠি লেখার অভ্যাস খুবই কার্যকর। যেখানে প্রেরকের স্পর্শ মিশে আছে তার চেয়ে অর্থবহ আর কি হতে পারে! নিভৃতে লেখা চিঠির প্রত্যেক অক্ষরে মিশে থাকে মানুষের মনের গোপনতম রহস্য, অপ্রকাশিত আবেগ, প্রতিভার স্ফূরণ, সময়ের ইতিহাস।

“চিঠি দিও লাল ডাকবাক্সে
হলুদ কিংবা নীল খামে
শব্দ লিখো বিনা অভিমানে...”

প্রযুক্তির যুগে যে একেবারে চিঠি লিখিনি এমন নয়। তবে অনেক বড় কোনো চিঠি কাউকে দেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। আমি চিরকুট লিখে অনেককেই দিয়েছি অনেকসময়। ছোট্ট কোনো উপহারের সঙ্গে কাগজে লিখে দেওয়ার ব্যাপারটাই অন্য রকম। আমি কাউকে কোনো উপহার দিলে তার সঙ্গে ছোট করে কোনো বার্তা জুড়ে দিই। বিশেষ করে বই বিনিময়ের সময় কোনো এক ফাঁকা পৃষ্ঠায় দু চার লাইনে লেখা অনুভূতি, কয়েকবছর পর আমার অনুপস্থিতিতেও হয়তো স্মৃতিচারণ করাবে।

কয়েক বছর আগে একবার রেজিস্ট্রি ডাকে চিঠি পাঠিয়েছিলাম এক বন্ধুকে। পেয়েছিল, কিন্তু বিলম্বে। এই চিঠি পাঠানোই হয়তো ডাক যোগে কাউকে পাঠানোর স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখব। চিরকুটের বিশেষত্ব মাথায় রেখে এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহকদের চাহিদা মতো হাতে লিখে কিংবা প্রিন্ট করে জুড়ে দিচ্ছে ছোট ছোট বার্তা। মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে কাউকে উপহার দেওয়ার জন্য সেখানেও বার্তা পাঠানোর সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে কোনো অ্যাপে। এখানে লেখা ছোট ছোট বার্তা অনেকসময় গভীর অর্থ প্রকাশ করে। তবুও কাগজে কলমে লেখা চিঠির অনুভূতির গভীরতা অন্য কোনো মাধ্যমে পূর্ণতা পাবে না।

সেপ্টেম্বরের প্রথম দিন বিশ্ব চিঠি দিবস। ইট পাথরের এই ব্যস্ত নগরে ডাকঘর থেকে ডাক হরকরা এসে অবাক করে দেবে না ঠিকই, তবে অপেক্ষা করবো হুট করে কারো থেকে চিঠি পাওয়ার। ডিভাইস স্ক্রিনে আসা প্রজ্ঞাপনে আলতো ছোঁয়ায় ভেসে উঠুক মনের কথা, পড়তে চাই, প্রত্যুত্তর দিতে চাই।

কেএসকে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।