পৃথিবীর একমাত্র প্রাণী, পুরুষ হয়েও যারা সন্তানের জন্ম দেয়

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:২৮ পিএম, ০৫ আগস্ট ২০২৪

সন্তান গর্ভে ধারণ করা, জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র নারীর আছে। প্রাণীকুলের সব নারীর এই ক্ষমতা পান তার জন্মগত ভাবেই। এ কারণে মায়ের মর্যাদা দেওয়া হয় পৃথিবীতে সবার উপরে। কিন্তু প্রকৃতি রহস্যময়। যা ভেদ করা আমাদের মানুষের পক্ষে সামন্যই সম্ভব হয়েছে। জানেন কি, পৃথিবীর একমাত্র প্রাণী যারা পুরুষ হয়েও সন্তান জন্ম দেয়।

নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীর স্ত্রী প্রজাতি তার ছানাগুলোকে পেটের মধ্যে রাখে। এরপর দীর্ঘ প্রসব বেদনা সহ্য করে সন্তান জন্ম দেয়। বেশ কিছু পাখি প্রজাতি আছে যাদের ক্ষেত্রে ডিমে তা দেওয়া, এরপর ছানার জন্য খাবার সংগ্রহ, নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে পুরুষেরা। তবে পুরুষ প্রজাতির গর্ভে সন্তান ধারণের ঘটনা বিরলই।

প্রাণী জগতে একটি ক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনা দেখা যায়। সিংনাথিডি পরিবারের একটি মৎস্য গোষ্ঠীর মধ্যে পুরুষেরা গর্ভে সন্তান ধারণ করে। এরা মূলত সি-হর্স এবং এই জাতীয় মৎস্য যেমন পাইপ ফিশ এবং সি-ড্রাগন। এরা সবাই সামুদ্রিক প্রাণী। সারা বিশ্বেই সামুদ্রিক অঞ্চলে কমবেশি এসব প্রাণী দেখা যায়।

এদের শরীরের গঠনও অনন্য। এই গঠনের কারণেই শিশু ধারণ ও লালন পালনের দায়িত্ব নারীর কাছ থেকে পুরুষের কাছে স্থানান্তরিত হয়। প্রথমে স্ত্রী প্রাণীটি পুরুষ প্রাণীটির পেটে ডিম স্থানান্তর করে। এর মধ্যে সি-হর্সের পেটে বিশেষ থলি আছে, যেখানে সেটি ডিমগুলো তা দিতে পারে।

ডিমগুলো নিষিক্ত হয় পুরুষের দেহেই। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ডিমে তা দেয়। এই সময়টাতে ডিমে পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করে এবং ছানা ফুটে বের হওয়ার পর জীবাণু থেকে রক্ষা করার সব ব্যবস্থা নেয়।

সি-হর্সের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হওয়া ও প্রসব পর্যন্ত দুই থেকে চার সপ্তাহ সময় লাগে। প্রসবের দৃশ্যটা খুবই মজার। একটি সি-হর্স এক সঙ্গে ৫০ থেকে ১ হাজার ছানার জন্ম দেয়। এই প্রসব বেদনাটা ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। জন্মের দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত ছানাগুলো সমুদ্রের প্ল্যাঙ্কটনের সঙ্গে ভেসে বেড়ায়। এই সময় শিকারি প্রাণীর কবলে পড়ার ভয় থাকে বেশি। দেখা যায় হাজারে মাত্র একটা সি-হর্স ছানা বয়ঃপ্রাপ্তি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

অপরদিকে পাইপ ফিশের ক্ষেত্রে পদ্ধতিটা একটু আলাদা। সি-হর্সের মতোই এদের মুখ এবং ক্ষুদ্র শরীর। তবে সি-হর্সের চাইতে বেশি লম্বা। সি-হর্সের মতোই স্ত্রী পাইপ ফিশ পুরুষের জনন থলিতে ডিম পাড়ে। এটি থাকে তাদের মাথার কাছে। থলিতে ডিমগুলো নিষিক্ত হয় এবং দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ডিমে তা দেয় পুরুষ পাইপ ফিশ। এরপরই বাচ্চা ফুটে বের হয়। পুরুষ পাইপ ফিশ তাদের জনন থলিতে ৫ থেকে ৪০টি ছানা ধারণ করতে পারে।

তবে এই পাইপ ফিশরা তাদের একেক বাচ্চার জন্য একেক ধরনের যত্নআত্তি করী। পুরুষ পাইপ ফিশ তার সঙ্গী যে স্ত্রী পাইপ ফিশের থেকে ডিম এনেছে, তাকে যদি পরবর্তিতে আর পছন্দ না হয় তাহলে ছানাগুলোর খুব একটা যত্ন নেয় না পুরুষটি। অন্যদিকে বড়, আকর্ষণীয় স্ত্রী পাইপ ফিশের ডিম ও বাচ্চার জন্য পুরুষটি বেশি পুষ্টি সরবরাহ করে ও যত্ন নেয়। ছানা যদি সুস্থ সবল হয় তাহলে সেটির প্রতি তেমন একটা আর খেয়াল দেয় না। তবে যদি দুর্বল হয় কোনো বাচ্চা তাহলে তাকে যত্ন করে বড় করে বাবা পাইপ ফিশ।

সূত্র: রেড্ডিড, ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ

কেএসকে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।