ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ২ হাজার যাত্রীর

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৫৬ পিএম, ২০ জুন ২০২৪

২৬ ডিসেম্বর ২০০৪, বড়দিন এবং বুদ্ধপূর্ণিমার ছুটি থাকায় সেদিন ট্রেনে ছিল উপচে পড়া ভিড়। কলম্বোর ফোর্ট স্টেশন থেকে সেদিন প্রায় ১৫০০ যাত্রী টিকিট কেটে ট্রেনে উঠেছিল, এছাড়াও আরও অসংখ্য যাত্রী টিকিট ছাড়াই ট্রেনে উঠেছিল, যাদের অনেকেই বন্দরনগরী গলে পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে যাচ্ছিলেন।

মাতারা এক্সপ্রেস, যাকে ‘কুইন অব দ্য সি’ বা সাগরের রানি নামেও ডাকা হত। এটি রাজধানী কলম্বো থেকে যাত্রা শুরু করে সমুদ্র উপকূল ঘেষে বন্দরনগরী গল হয়ে উপকূলীয় জেলা মাতারা পর্যন্ত নিয়মিত যাতায়াত করত। ট্রেনের এই রুটটি ছিল শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে।

স্থানীয় সময় সাড়ে ৬টার দিকে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় এক ভয়াবহ ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। ভূমিকম্পের মাত্র ৫-১৫ মিনিটের মধ্যেই ইন্দোনেশিয়ায় সুনামি আঘাত হানে। শ্রীলঙ্কার সিসমিক মনিটরিং স্টেশনও ভূমিকম্পটি রেকর্ড করে। তারা ভেবেছিল শ্রীলংকার উপকূলীয় অঞ্চলে সুনামি আসার সম্ভাবনা নেই। আনুমানিক সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে, অর্থাৎ সুমাত্রার ভূমিকম্পের প্রায় ২০ মিনিট পর ট্রেনটি বন্দরনগরী গলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

আরও পড়ুন

এদিকে ভূমিকম্পের প্রায় ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে সুনামি প্রথমে শ্রীলঙ্কার পূর্ব উপকূলে আঘাত হানে। কলম্বোর ম্যারাডানার রেল স্টেশনের অফিসে যখন সুনামির রিপোর্ট পৌঁছায়, তখন কর্মকর্তারা উপকূলীয় লাইনে চলমান ৮টি ট্রেন থামাতে সক্ষম হয়, কিন্তু মাতারা এক্সপ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তারা অম্বালংগোডা স্টেশনে ট্রেনটি থামানোর উদ্দেশ্যে সেখানে ফোন করেন, কিন্তু তখন স্টেশনের কর্মীরা ব্যস্ত থাকায় ফোনের জবাব দেওয়ার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে পূর্ব উপকূলে আঘাত হানার প্রায় ৩০ মিনিট পর ৯টা ১৫ মিনিটের দিকে সুনামি শ্রীলংকার দক্ষিণ উপকূলে আঘাত হানা শুরু করে। মাতারা এক্সপ্রেস তখনও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের রুট ধরে গলের উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলেছে। সুনামির বিষয়ে তাদের কাছে কোনও তথ্যই ছিল না। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ট্রেনটি তেলওয়াতার নিকটবর্তী পেরালিয়া নামক স্থানে পৌছায়। তেলওয়াতার রেলপথটি সমুদ্র থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরত্বে ছিল।

মাতারা এক্সপ্রেস পেরালিয়ায় পৌছানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে সুনামি আঘাত হানে। সুনামির প্রথম ঢেউটি যখন পেরালিয়ার উপকূলকে প্লাবিত করল, তখন চালক ট্রেনটি থামিয়ে দিলেন এবং যাত্রীদের সতর্ক করতে একটি অ্যালার্ম বাজালেন। তখন যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল। অনেকে ট্রেন থেকে নিচে নেমে সমুদ্রের বিপরীত দিকে ট্রেনের পাশে আশ্রয় নিল সমুদ্রের ঢেউ থেকে বাঁচার আশায়। অনেকে আবার ট্রেনের ভেতরে থাকাটাই অধিক নিরাপদ মনে করল।

১০ মিনিটের মধ্যেই একটি বিশাল ঢেউ ট্রেনটিতে আছড়ে পড়ল। ফলে ট্রেনটি লাইন থেকে ছিটকে পড়ে এবং এর বগিগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ট্রেনের পাশে যারা আশ্রয় নিয়েছিল তারা ট্রেনের নিচে চাপা পড়ে যায়, অনেকে স্রোতের মাঝে তলিয়ে যায়। এ ঘটনায় কমপক্ষে ১৭০০ জন, অনেকে বলেন ২ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে। দুর্ঘটনার প্রায় ৭ ঘণ্টা পর বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার প্রথম মাতারা এক্সপ্রেসের অবস্থান জানতে পারে।

আরও পড়ুন

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

কেএসকে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।