ইশারায় বিক্রি হয় পলাশের ভেলপুরি

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:০০ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২৪

জিহাদুল ইসলাম

ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ভেলপুরি প্রস্তুত করে ইশারার মাধ্যমে বিক্রি করেন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এক ভেলপুরিওয়ালা। কথা বলতে না পারলেও অর্ডার নেওয়া, ঝাল কম বা বেশি দেওয়া, কিংবা টাকা বুঝে নেওয়া সবই ইশারায় করেন তিনি। নাম তার পলাশ। জন্ম থেকেই তিনি কানে শুনতে পান না এবং কথা বলতে পারেন না।

পলাশের তৈরি মজাদার ভেলপুরি খেতে প্রতিনিয়ত ভিড় করেন তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ। প্রায় ১ যুগের বেশি সময় ধরে ফুটপাতে এভাবেই ভেলপুরি বিক্রি করেন তিনি। বাক প্রতিবন্ধী হলেও কারও কাছে সাহায্য না চেয়ে বরং ভেলপুরি বিক্রি করে সংসারের খরচ মেটাচ্ছেন তিনি।

আরও পড়ুন: নীলক্ষেতে পুরোনো বইয়ের ঘ্রাণ

সকাল হলে বড় একটি পাত্রে ভেলপুরির সঙ্গে মসলা, টকসহ সবকিছু সাজিয়ে রিক্সায় তুলে দেন পরিবারের অন্যরা। এরপর রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় তেজগাঁও কলেজের সামনে রাত পর্যন্ত ভেলপুরি বিক্রি করে ফের রিক্সায় বাড়ি ফেরেন বলে জানান বাক প্রতিবন্ধী পলাশের বাবা। তিনি বলেন, ‘সকালে আমরা সব রেডি করে দেই। এরপর সে রিক্সা ডেকে আনে। প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত পলাশ ভেলপুরি বিক্রি করে বাড়ি ফেরে।’

প্রথমে ময়দা, বেসনসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে খামির করে তেলে ভেজে তৈরি করা হয় ভেলপুরি। এরপর ডাবলি বুট সিদ্ধ করে পেঁয়াজ, শুকনো মরিচ, ধনিয়া পাতা দিয়ে দোকানেই তৈরি করা হয় ভেলপুরির পুর। এরপর ভেলপুরির মাঝে পুর ভরাট করে তার উপরে টক দিয়ে পরিবেশন করা হয় ক্রেতাদের সামনে।

বাক প্রতিবন্ধী পলাশের দোকানে ভেলপুরি খেতে আসা তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী সাদত ইসলাম বলেন, ‘মামার ভেলপুরি অনেক মজা। অনেক দিন ধরে প্রায় খাই আমরা।’ চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকায় বেড়াতে আসা আরেক ক্রেতা রুমকি জাহান বলেন, ‘ইশারা দিয়ে প্রথমবার বলছি মামারে ভালো মতো খুব মজা করে বানাই দিছে। এছাড়া মরিচ হাতে নিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করছে বেশি দিবে কি না। খুব ভালো লাগলো মামার এখানে ভেলপুরি খেয়ে।’

আরও পড়ুন: ধুলি দূষণে ভালো নেই রাজধানীর বৃক্ষ ও প্রাণীকুল!

ফার্মগেট এলাকার বাবুল নামে এক ভেলপুরি বিক্রেতার সঙ্গে ৫ থেকে ৭ বছর ধরে কাজ করেন পলাশ। এরপর ফুটপাতে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে নিজেই শুরু করেন ভেলপুরি বিক্রি। জনবহুল এলাকায় ভেলপুরি বিক্রিতে সহায়তা করতে মাঝে মাঝেই পলাশের সঙ্গে আসেন পরিবারের অন্যরাও।

বাবা-মা, স্ত্রী,সন্তান নিয়ে বাক প্রতিবন্ধী পলাশের সংসার। বাইরে যেমন ক্রেতাদের সঙ্গে ইশারায় কথা বলেন তেমনি পরিবারের অন্যদের সঙ্গেও ইশারার মাধ্যমে সব যোগাযোগ করেন। পলাশের বাবা জানান, বাবা-মা ছাড়াও পলাশ ছেলে-মেয়েসহ পরিবার এবং বাইরের সবার সঙ্গেই ইশারাতে প্রয়োজনীয় সব যোগাযোগ করে।

ফুটপাতে ভেলপুরি বিক্রি করে সংসারের খরচ মিটিয়ে ভালো ভাবে জবনযাপন করছেন পলাশ। বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় মাঝেমধ্যে সহায়তা করেন অন্য দোকানদাররা। তবে কথা না বলতে পারায় কখনো কখনো বিড়ম্বনায়ও পড়তে হয় তাকে। পাশের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এক প্লেট ইশারাতে দুই দেখায় তাতে অনেক কাস্টমার ২ টাকা পিস মনে করে। ৫ টা খেয়ে ১০ টাকা দিতে চাওয়ায় অনেক সময় ঝামেলা হয়। তবে আমরা সবাই প্রতিবেশী হিসেবে সহায়তা করি’।

শারীরিক প্রতিবন্ধীরা ভিক্ষা না করে পলাশের মতো ছোট পরিসরে হলেও কাজ করে আয় করলে পরিবার ও সমাজ উপকৃত হবে বলে মনে করেন সচেতনমহল।

লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী

কেএসকে/এসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।