বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত স্থান

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৫৮ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০২৩

মামুন রাফী
বলিউডের ধুম সিনেমার সিরিজগুলো দেখেছেন নিশ্চয়ই। যেখানে একদল চোর কিংবা একা কেউ মূল্যবান কোনো বস্তু চুরি করার পরিকল্পনা করে। সফলও হয়, সেই সঙ্গে পুলিশ চোরের ইঁদুর দৌড়ের খেলা সিনেমাপ্রেমীদের আলাদা আনন্দ দিয়েছে।

আমরা আমাদের মূল্যবান কোনো জিনিস সংরক্ষণ করতে বিভিন্ন ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করি। যেমন-সিন্ধুক, লকার অথবা অন্য কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা। আপনি যদি মনে করেন যে তালাবদ্ধ করেই বেশি সুরক্ষা দেওয়া সম্ভব, তাহলে ভুলের জগতে বসবাস করছেন।

jagonews24

আজ আপনাদের এমন কয়েকটি সুরক্ষিত স্থানের কথা জানাব, যার সুরক্ষা ব্যবস্থা অনেক কঠিন। এগুলোর সুরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানলে আশ্চর্য হবেন। চলুন জেনে আসা যাক এমন কিছু স্থানের সম্পর্কে যার নিরাপত্তা স্তর ভাঙতে পারবে না কেউ-

আরও পড়ুন: রহস্যময় যে প্রাচীর নির্মাণ করতে গিয়ে মৃত্যু হয় ৪ লাখ মানুষের 

ফোর্ট নক্স
আপনি হয়তো এর নিরাপত্তা সম্পর্কে শুনেছেন অনেক। এই বিল্ডিংটিতে ১০ হাজার টন স্বর্ণ, ঐতিহাসিক মূল্যবান ডকুমেন্টের (যেমন: মেঘনাকার্ট) মতো মূল্যবান জিনিস রাখা হয়েছে। ১৯৩৬ সালে তৈরি করা হয় এই বিল্ডিংটিকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিল্ডিংটিকে প্রযুক্তিগতভাবে অনেক উন্নত করা হয়েছে। এমনকি সরকার এখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ দিয়েছে, তাদের কাছে রয়েছে নিজস্ব মেশিনগান এবং এটির দরজা এমনভাবে বানানো যে এটম বোমাও এটির কিছু করতে পারবে না।

শুধু তাই নয়, এর ভেতরে প্রবেশ করার দরজার ওজন ২২ টন, তাই চাইলেও যে কেউ দরজা খুলে যেতে পারবে না। আর বিল্ডিংটির দেওয়াল ৪ ফুট পুরু, সুতরাং তাই চাইলেও দেয়ালটি সহজে ভাঙতেও পারবে না। এরপরও বিল্ডিংটি প্রতি ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে রয়েছে সিকিউরিটির বিভিন্ন স্তর এবং কঠিন নজরদারি।

jagonews24

হোয়াইট হাউজ
হোয়াইট হাউজের কথা শুনে আপনার মনে হতেই পারে এ আর অসম্ভব কি। কিন্তু আপনাদের আগেই জানিয়ে দেই যে এখানে আপনাদের চিন্তা শক্তির চেয়েও বেশি সিকিউরিটি সিস্টেম রাখা হয়েছে। কাটাযুক্ত তার, লোহার দেয়ালে ঘেরা গেট থেকে শুরু করে বুলেট প্রুপ দরজা পর্যন্ত যেতেই প্রয়োজন হবে আপনার বায়োমেট্রিক স্ক্যান। আপনারা হয়তো এতটুকুই শুনেছেন কিন্তু আসল সিকিউরিটি সিস্টেম তো পুরোটাই সিক্রেট সার্ভিস। এর আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে যে কোনো উপায়ে প্রেসিডেন্টের সুরক্ষা প্রদান। এখানকার সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে শুধু আমেরিকার নয় বরং পুরো পৃথিবী থেকে দক্ষ, বুদ্ধিমান এবং কৌশল বিদ্যায় পারদর্শী গার্ড নিয়োগ দেওয়া হয়। এখানে ২ হাজার ৩০০ কমান্ডো নিযুক্ত রয়েছে ২৪ ঘণ্টা। যার দ্বারা মাঝারি ধরনের যুদ্ধও ঠেকানো সম্ভব। এছাড়াও ১ হাজার ৩০০ কমান্ডো ব্যাকআপ রাখা হয়েছে এবং ইউনিটটি সবসময় একটিভ।

দ্য ফ্যাডারেল রিজার্ভ ব্যাংক
ম্যানহাটনে অবস্তিত এই বিল্ডিংটি খুবই সুরক্ষিত একটি বিল্ডিং। এটি এতটাই সুরক্ষিত যে কেউ যদি তার নিজের দেশের সম্পত্তি নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখতে চায় তাহলে এই রিজার্ভ ব্যাংকেই রেখে যায়। পুরো আমেরিকায় মোট ১২ টি ফ্যাডারেল রিজার্ভ ব্যাংক আছে, এর মধ্যে নিউইয়র্কের ব্যাংকটি সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত বলে দাবি করা হয়। এটি মাটির নিচে ৮০ ফুট খোদাই করে বানানো হয়েছে এবং পুরো বিশ্বের ১০ শতাংশ সোনা এই ব্যাংকটিতেই মজুত রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ভয়ংকর চেহারার পুতুলের বাস যে দ্বীপে 

শুধু তিনজন ব্যক্তিই এই ব্যাংকটিতে প্রবেশ করতে পারেন এবং প্রবেশ করার প্রয়োজন হলে এই তিনটি ব্যক্তিকেই একই সময়ে সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে। যেখানে সোনা রাখা হয়েছে সেটি ৯০ টনের মতো। একটি সিলেন্ডার এবং যখন এটি বন্ধ রাখা হয় তখন এখান থেকে বাতাসও বের হতে পারে না। সিলেন্ডারটির সুরক্ষার জন্য এর চারপাশে ৭ ফুট মোটা দেওয়াল রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং ২৪ ঘণ্টা সার্বক্ষণিক সর্বোচ্চ সিকিউরিটির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

jagonews24

কোরিয়ান ডিমিলিটারাইজ জোন
আপনি জানেন কি উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়াকে আলাদা করার জন্য পাতলা একটি লাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে আর এটি কোরিয়ান ডিমিলিটারাইজ জোন নামেও পরিচিত। এটি বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত স্থানের মধ্যে একটি। এর জন্য যে বিশেষ কারণটি রয়েছে তা হলো অনেকেই সীমান্ত প্রতিবেশী দেশে প্রবেশ করার জন্য উৎ পেতে থাকে, এমনকি অনেক সময় হাতে-নাতে ও ধরা পরেছে। এই জোনটিতে উঁচু কাঁটা তারের সঙ্গে সবসময় একটিভ মাইল ফিল্ডের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যদি কাউকে বর্ডার ক্রস করতে দেখা যায় তাহলে কোনো কথা ছাড়াই গুলি করার নির্দেশ রয়েছে।

আইরন মাউনট্যাইন
এটি পেনিসেলভিয়ার পাহাড়ে অবস্থিত। বিভিন্ন দেশের অনেক মূল্যবান জিনিস বা সম্পত্তি এখানে মজুত রাখা হয়েছে। এটি ১৭ লাখ স্কয়ার ফুট আয়তন নিয়ে তৈরি। যার মধ্যে আইনস্টাইনের আসল ছবিসহ লাখ লাখ মূল্যবান জিনিসপত্র মজুত রয়েছে। ব্যাংকটি বর্তমানে বিল গেটসের একটি কোম্পানি কিনে নিয়েছে। ঠান্ডা রাখার জন্য এসি নয় বরং লিকুইড কুলিং সিস্টেম রাখা হয়েছে এখানে। তাদের দাবি এই ব্যাংকটি প্রকৃতির যে কোনো ধরনের দুর্যোগ সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে এবং বড় বড় দক্ষ পারদর্শী সিকিউরিটি এখানেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

লেখক: কবিও সাংবাদিক

কেএসকে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।