বিশ্ব পরিবেশ দিবস
বাড়ছে পরিবেশ দূষণ কমছে সচেতনতা
‘সবাই মিলে করি পণ, বন্ধ হবে প্লাস্টিক দূষণ’ স্লোগান ও ‘প্লাস্টিক দূষণ সমাধানে শামিল হই সকলে’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস-২০২৩। প্রতি বছর ৫ জুন জনসচেতনার উদ্দেশ্য পালিত হয় এই দিবস। এবারের প্রতিপাদ্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্লাস্টিক। যেটি ছাড়া জনজীবন প্রায় অচল। পানি কিংবা খাদ্যসামগ্রী বহন সবক্ষেত্রেই চাই প্লাস্টিকের ব্যবহার। পরিবহনে সুবিধা হওয়ায় এর চাহিদা আকাশছোঁয়া। অথচ এই সুবিধাই পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা যায়, পচনশীল না হওয়ায় ব্যবহারের পরেও প্রকৃতিতে প্লাস্টিক টিকে থাকে যুগের পর যুগ। একটি গবেষণায় দেখা যায়, মুদি দোকানের পলি ব্যাগ প্রকৃতিতে মিশতে সময় লাগে ২০ বছর, কোমল পানীয় বহনকারী প্লাস্টিকের কাপ ৫০ বছর টিকে থাকে। এদিকে প্লাস্টিক বোতল ৪৫০ বছর পর্যন্ত প্রকৃতিতে টিকে থাকায় আবর্জনার স্তুপে পরিণত হচ্ছে গোটা পৃথিবী।
এদিকে দৈনন্দিন জীবনে আমরা যা ব্যবহার করি তার অধিকাংশই প্লাস্টিক। প্লাস্টিকের বোতল, প্লাস্টিকের গ্লাস, প্লাস্টিকের বাটি, পলিথিন কোথাও কমতি নেই প্লাস্টিকের। কৃত্রিমভাবে রাসায়নিক উপায়ে তৈরি প্লাস্টিকের পণ্য সস্তা ও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় সব পরিবারেই দেখা যায় প্লাস্টিকের ব্যবহার।
আরও পড়ুন: চা পানে যেভাবে অভ্যস্ত হলো বাঙালি
মাটিতে, পুকুরে, গাছের নিছে, নদী-নালা, সমুদ্র এমনকি এভারেস্টের চূড়া, গভীর সমুদ্রের তলদেশ এবং মেরু অঞ্চলেও বিস্তৃত প্লাস্টিক। প্লাস্টিকের পলিথিন ব্যবহারের পর মাটিতে ফেলে দিলে সেখানে নতুন গাছ জন্মের সম্ভাবনা কমে যায় পাশাপাশি অন্যান্য গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
নদী ও সমুদ্রে যে পরিমাণ প্লাস্টিক রয়েছে এতে জলজ প্রাণিদের জীবনযাত্রায় প্রভাব পড়ছে। খাদ্য ভেবে বিশালাকার তিমিসহ অন্যান্য জলজ প্রাণিরা প্লাস্টিক খেয়ে রোগাক্রান্ত হচ্ছে। জলজ প্রাণিদের হাঁটার রাস্তায় বাধার সৃষ্টি করছে প্লাস্টিক। এদিকে মাছ শিকার করতে আসা পাখিরা মাছ ভেবে প্লাস্টিক খেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরছে। মৎস্য শিকারীদের জালে উঠছে কেবল প্লাস্টিকের বোতল আর পলিথিন।
এছাড়াও প্লাস্টিক পরিবেশের সঙ্গে মিশে প্রকৃতি ও মানব স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাচ্ছে। প্লাস্টিকের কণা ও রাসায়নিক পদার্থ মানুষ ও অন্যান্য জীবের হরমোনাল সিস্টেম ধ্বংস করে দিচ্ছে। মানুষ ও অন্যান্য জীবের প্রজননক্ষমতা নষ্ট সহ স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রান্ত করে দুরারোগ্য ব্যাধি সৃষ্টি করছে। প্লাস্টিকের ছোট কণা ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মানুষ ও অন্যান্য জীবের কোষাভ্যন্তরে অবস্থিত ডিএনএ ও আরএনএ অণুর পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্যানসার ছাড়াও স্নায়ুতন্ত্র বিকলের ঘটনা ঘটাচ্ছে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের পেছনে প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানো অনেকটাই দায়ী। পোড়ানো এই পদার্থ বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়াচ্ছে। এছাড়াও মেঘের সঙ্গে মিশে এসিড বৃষ্টির সৃষ্টি করছে। প্লাস্টিকের প্রভাবে আমাদের পরিবেশ এখন হুমকির মুখে, এর জন্য দায়ী জনসচেতনার অভাব।
সেজন্য ব্যবহার শেষে প্লাস্টিক যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে, বাড়াতে হবে পাবলিক ডাস্টবিন। পলিথিনের বদলে পাটের তৈরি ব্যাগের যোগান বাড়াতে হবে। প্লাস্টিকের বোতলের উৎপাদন কমিয়ে বাড়াতে হবে কাচের বোতলের ব্যবহার। পাশাপাশি শক্ত আইন, জনসচেতনা, পাঠ্যবইয়ে প্লাস্টিক সম্পর্কে ধারণাই পারে প্লাস্টিক থেকে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যেকে রক্ষা করতে।
কেএসকে/জিকেএস