মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য জানলে চমকে উঠবেন!

শেখ আনোয়ার
শেখ আনোয়ার শেখ আনোয়ার , বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০২:২১ পিএম, ৩১ মার্চ ২০২৩

মহাবিশ্ব সৃষ্টির সঠিক রহস্য কী? এ নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। মহাবিশ্ব নিয়ে, মহাবিশ্বের বয়স নিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে নানা রকম জল্পনা-কল্পনা। মহাবিশ্বের বয়স কত? কীভাবে এ মহাবিশ্ব সৃষ্টি হলো? কত শত বছর আগে এর উদ্ভব? মহাবিশ্বের ধ্বংসই বা কবে হবে? ইত্যাদি।

প্রশ্নগুলোর উত্তর অনুসন্ধানে বিজ্ঞানের সবচেয়ে রহস্যময় ও অবাক করা নানান উত্তর পাওয়া যায়। শুক্রগ্রহ, চাঁদ, বিভিন্ন গ্রহ অগণিত গ্যালাক্সি, ব্ল্যাক হোল, নক্ষত্র, সবকিছু আমাদের এতোটাই মুগ্ধ করে যে, আমরা কৌতূহলী হয়ে উঠি মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য জানতে।

jagonews24

আরও পড়ুন: টাই বেঁধে বিশ্বরেকর্ড গড়লেন বাংলাদেশি তরুণ

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিজ্ঞানীরাও প্রতিনিয়ত চালাচ্ছেন নানান গবেষণা। বিজ্ঞানী গবেষকদের নানান গবেষণায় পৃথিবীর বুকে উন্মেষ ঘটেছে ডিজিটাল প্রযুক্তি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন ও সাহিত্যের। যেভাবে আবার পুরোনো ভার্সন বাতিল হয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন সংস্করণ ও নতুন তত্ত্ব।

সেভাবে মহাবিশ্ব সম্বন্ধে কৌতূহলের এক যুগের বিজ্ঞান ব্যাখ্যা বাতিল হয়েছে অন্য যুগে। তবুও থেমে নেই প্রযুক্তি, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার খেলা। থেমে নেই মহাকাশ বিজ্ঞানীদের নিরলস সাধনা। বিজ্ঞানীরা শত শত বছর ধরে মহাবিশ্বের সৃষ্টি তত্ত্ব আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছেন।

এমনকি তারা একের পর এক বিস্ময়কর তত্ত্ব আবিষ্কার করে সবাইকে তাঁক লাগিয়ে দিয়েছেন। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সূত্র, যুক্তি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখিয়েছেন, এই মহাবিশ্ব কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে? কীভাবে এই অগণিত গ্রহ, নক্ষত্রসহ সমস্ত মহাজাগতিক বস্তু তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন: ২৩ বছর ধরে টয়লেট পেপার খাচ্ছেন এই নারী 

খ্যাতিমান জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডউইন হাবল তার চমকপ্রদ আবিষ্কারের তথ্যানুযায়ী বলেন, মহাবিশ্ব প্রসারমান। মহাবিশ্বের বিস্তৃতি ঘটছে। তার তত্ত্বে গাণিতিক হিসাব দিয়ে বলেন, মহাবিশ্বের বয়স ২০০ কোটি বছর। অবশ্য ৭০০ বছর আগে হাবল এ মতবাদ ব্যক্ত করেছিলেন।

তবে পরবর্তী সময়ে গবেষণালব্ধ ফলাফল থেকে জানা যায়, এই মতবাদ নির্ভুল নয়। মহাবিশ্বের জন্মরহস্য নিয়ে এ পর্যন্ত যে সূত্রটি স্বীকৃত হয়েছে তা হলো ‘বিগ ব্যাং’ তত্ত্ব। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রায় দেড়-দু’হাজার কোটি বছর আগে এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিলো এই মহাবিশ্বের।

সৃষ্টির পূর্বে এ মহাবিশ্বে শক্তি ছাড়া কিছু ছিলো না। তাও আবার এ শক্তি ছিলো পুঞ্জীভূত অবস্থায়। একেই জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ‘বিগ ব্যাং’ বলে অভিহিত করেন। পরে কিছু পরিমাণ শক্তি রূপান্তরিত হয় পারমাণবিক কণায়। সৃষ্টি হয় আধানযুক্ত ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন ইত্যাদি।

jagonews24

আরও পড়ুন: জিহবা দিয়ে ছবি আঁকেন তিনি 

তারপর কেটে যায় কয়েক লাখ বছর। এক সময় প্রোটন কণাকে ঘিরে পরিক্রমণ করতে শুরু করে ইলেকট্রন কণা। এর ফলে সৃষ্টি হয় হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম পরমাণুর। বিস্ফোরণের পর স্বল্পকালের মধ্যেই ১০০০ কোটি থেকে ১০ হাজার কোটি নক্ষত্র নিয়ে তৈরি হয় এক একটি গ্যালাক্সি।

ওদিকে হাইড্রোজেনের পরিব্যাপ্ত মেঘ ঘনীভূত হয়ে সৃষ্টি হয় সমস্ত গ্রহ-উপগ্রহ আর নক্ষত্র। বিজ্ঞানীদের মতে, মহাবিশ্বে কমপক্ষে ১০০ কোটি গ্যালাক্সি আছে। একেকটি গ্যালাক্সির মধ্যে আনুমানিক ১০ হাজার কোটি নক্ষত্র ও নীহারিকা আছে। যা দ্বীপ বিশ্ব বলে পরিচিত। আর আমাদের সৌরজগৎ (পৃথিবী, সূর্য, গ্রহ, উপগ্রহ ইত্যাদি) যে গ্যালাক্সির অন্তর্ভুক্ত তার নাম ছায়াপথ।

মহাবিশ্বের প্রসারণের মাত্রা চিহ্নিত করতে এবার হাবলের আবিষ্কারে ফিরে যেতে হয়। তার মতে, দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলো আমাদের নিজস্ব মিল্কিওয়ে থেকে সঞ্চারমান অবস্থায় আছে। যতো বেশি দূরে অবস্থান করে ততো বেশি গতিতে সঞ্চারমান হয়। হাবলের গতি সংক্রান্ত অনুপাতকে হাবল ধ্রুবক বলা হয়।

আরও পড়ুন: পানির নিচে দীর্ঘক্ষণ চুম্বন, বিশ্বরেকর্ড দম্পতির 

এই ধ্রুবকের ব্যবহারে একটি মহাবিশ্বের বয়স দাঁড়ায় ৯-১১.৫ শত কোটি বছর। প্যালেন গ্যানভেজের নেতৃত্বে সুপারনোভারগুলোর ওপর পর্যবেক্ষণের দীপ্ত ফলাফল থেকে দেখা যায় মহাবিশ্বের বয়স ১১.৫-১৪.৫ শত কোটি বছর। আবার কারও মতে, মহাবিশ্বের বয়স ১৩.৮ বিলিয়ন বা ১৩৮০ কোটি বছর।

অথচ আগের ধারণা ছিলো, এই মহাবিশ্ব প্রায় ১৩.৬-১৩.৮ বিলিয়ন বছরের পুরোনো। বর্তমান ডিজিটাল প্রজন্ম তাদের গবেষণায় দাবি করছেন, এই মহাবিশ্ব অতটা বয়স্ক নয়। আগের ধারণা থেকে এটা কমপক্ষে এক বিলিয়ন বছরের ছোট।

এছাড়া আগের ধারণার থেকেও দ্রুতগতিতে প্রসারিত হচ্ছে এটি। তবে পৃথিবীর বয়স ৪.৫ বিলিয়ন বা ৪৫০ কোটি বছর এ ব্যাপারে বিজ্ঞানী গবেষক সকলেই নিশ্চিত। কারণ এই বয়স উল্কার রেডিওমেট্রিক বয়স নির্ণয় থেকে প্রাপ্ত ও সবচেয়ে প্রাচীন পার্থিব ও চাঁদের পাথরের রেডিওমেট্রিক বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

আরও পড়ুন: নারীকে আকৃষ্ট করতেই সুগন্ধি ব্যবহার শুরু করেন পুরুষরা 

বিপুল এই মহাবিশ্বে সূর্যের কী কাজ?

পারমাণবিক সংযোজন প্রক্রিয়ার ফলে সূর্যের অভ্যন্তরে প্রচণ্ড শক্তি উৎপন্ন হয়। এই প্রক্রিয়ার ফলে ৪টি হাইড্রোজেন পরমাণু মিলে একটি হিলিয়াম পরমাণুর সৃষ্টি হয়। ফলে উৎপন্ন হয় প্রচণ্ড তাপ ও উজ্জ্বলতা। সূর্যের এই চুল্লিকে জ্বলন্ত রাখার জন্য প্রতি সেকেন্ডে খরচ হয় ৫০-৬০ কোটি টন হাইড্রোজেন জ্বালানি।

মহাকাশ বিজ্ঞানীদের ধারণা এভাবে চলতে থাকলে এক সময় জ্বালানি নিঃশেষ হয়ে যাবে। মৃত্যু হবে সূর্য নামের নক্ষত্রের। আমাদের এ সুন্দর পৃথিবীতে জীবনের অস্তিত্ব সূর্য ছাড়া কল্পনা করা যায় না।

আর সূর্যের মৃত্যু ঘটলে পৃথিবীতে জীবনের বিলুপ্তি ঘটে যাবে। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় হাল আমলের বিজ্ঞানীরা দেখেছেন সূর্যের আয়ু আছে আর মাত্র ৫০০ কোটি বছর। আর তার পরই মৃত্যু ঘটবে সূর্যের ও পৃথিবী নামক গ্রহসহ মহাবিশ্বের প্রলয় ঘটবে।

আরও পড়ুন: চা বেচেই মার্সিডিস বেঞ্জ কিনলেন যুবক

মহাবিশ্ব সৃষ্টির রহস্য নিয়ে, মহাবিশ্বের সঠিক বয়স অথবা কীভাবে এর উদ্ভব হলে তা নিয়ে প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন মনীষী ও বিজ্ঞানীদের অসংখ্য মতবাদ আছে। মহাবিশ্বের সৃষ্টি ব্যাখ্যায় বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময় নানান তত্ত্ব দিয়েছেন।

অনেক সময় মহাবিশ্বের সৃষ্টি তত্ত্ব ও এর মহাজগতিক বস্তুর সৃষ্টি হওয়া নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের অবতারণা হয়েছে। গবেষকদের অনেকেই আবার এই তত্তগুলোকে সম্পূর্ণই ভিত্তিহীন দাবি করে থাকেন। তবে হ্যাঁ, তত্ত্বগুলো যে একদমই ছেলেখেলা অলীক কোনো কল্পনা নয় তা বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন গাণিতিক সূত্রের মাধ্যমে প্রমাণ করিয়েও দেখিয়েছেন।

jagonews24

আরও পড়ুন: ইংরেজিতে এমএ পাস করেও চা বিক্রি করেন টুকটুকি 

মানুষের জ্ঞানের পরিসীমা খুবই নগণ্য। তাই নির্মম সত্যটি হলো মানুষ কখনো এই মহাবিশ্বের কুলকিনারা করে উঠতে পারবে কি না বলা কঠিন। হয়তো আমরা মানুষরা অনেক কিছু জেনেছি বা অনেক ডিজিটাল যন্ত্র আবিষ্কার করেছি।

তবে এই অসীম মহাবিশ্বের অজানা রহস্যের কাছে আমরা অতি নগণ্য। তবুও বলা যেতেই পারে, হয়তো একদিন মহাকাশ বিজ্ঞানী-গবেষকদের নিরলস সাধনা প্রমাণ করবে মহাবিশ্বের সঠিক বয়স। আগামী প্রজন্ম হয়তো জেনে যাবে মহাবিশ্ব সৃষ্টির সঠিক রহস্য।

লেখক: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক, এম.ফিল স্কলার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।