মানুষ ছাড়াও স্বপ্ন দেখে যেসব প্রাণী
স্বপ্ন দেখেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কষ্টকর বটে! কেউ জেগে স্বপ্ন দেখেন ভবিষ্যৎ নিয়ে, কেউবা ঘুমিয়ে। স্বপ্ন আসলে মানুষের একটি মানসিক অবস্থা, যাতে মানুষ ঘুমন্ত অবস্থায় বিভিন্ন কাল্পনিক ঘটনা অবচেতনভাবে অনুভব করে থাকে। ঘটনাগুলো কাল্পনিক হলেও স্বপ্ন দেখার সময় সত্যি বলে মনে হয়। অধিকাংশ সময় দ্রষ্টা নিজে সেই ঘটনায় অংশগ্রহণ করছে বলে মনে করতে থাকে। তবে স্বপ্নের মূল উপাদান তৈরি হয় স্বপ্নদ্রষ্টার দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা, চিন্তা ও কর্ম এবং স্মৃতি থেকে।
তবে মানুষ ছাড়াও কিন্তু অনেক প্রাণী স্বপ্ন দেখে। শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। এমনই কিছু প্রাণীর স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন গবেষকরা। এই গবেষণা শুরু হয়েছিল ষাটের দশকেই। একদল বিজ্ঞানী মানুষের স্বপ্ন-রহস্যেরই সুস্পষ্ট সমাধান করতে শুরু করেন নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আর সেসব পরীক্ষার ফলাফলও বেশ চমকপ্রদ।
বিড়াল
৬০-এর দশকের প্রথম দিকে এমআইটি-র গবেষক মিচেল জোভেট বিড়ালকেই বেছে নিয়েছিলেন গবেষণার জন্য। ঘুমের মধ্যে যে সময়টায় স্বপ্নের মায়াজাল বোনে মানুষ, সেই সময়টাকে গবেষকরা চিহ্নিত করেন র্যাপিড আই মুভমেন্ট বা ‘আরইএম’ স্লিপ নামে। জুভেট লক্ষ্য করেন, বিড়ালের ‘আরইএম স্লিপ’-এর সময় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় তাদের হৃদস্পন্দন। পাশাপাশি সংকোচন-প্রসারণ শুরু হয় বিড়ালের পেশিতেও।
তবে জুভেট কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি ঠিকই। তবে ধারণা করেছিলেন, স্বপ্নের মধ্যে শিকার খুঁজে বেড়াচ্ছে তার পোষ্য বিড়াল। অন্তত পেশির ভঙ্গী নির্দেশ দিচ্ছে তেমনটারই। লাফানো বা দৌড়ানোর সময় যেভাবে সঞ্চালিত হয় পেশি, ঘুমের মধ্যে ঠিক সেভাবেই নড়াচড়া করে বিড়াল।
সেসময় তার এই গবেষণা যেমন একদল বিজ্ঞানীর প্রশংসা কুড়িয়েছিল, তেমনই তা নিয়ে হাসি-ঠাট্টাও কম হয়নি। নব্বইয়ের দশকে তার এই কাজ নিয়ে পুনরায় গবেষণা করেন মেক্সিকান গবেষক পেনা-গুজম্যান। তিনিও প্রায় একই মতামত জানান।
ইঁদুর
বিড়ালের স্বপ্ন নিয়ে গবেষণার প্রায় এক দশক পর একটি পরীক্ষা চমকে দেয় বিশ্বকে। ২০০১ সালে এমআইটির নিউরোলজিস্ট ড. ম্যাথিউ উইলসন একটি গোলকধাঁধাঁর মধ্যে ছেড়ে দেন একটি বিড়াল ও ইঁদুরকে। তবে তিনি এমনভাবেই এই গোলকধাঁধাঁ তৈরি করেছিলেন যাতে চেষ্টা করেও বিড়ালের নাগালের মধ্যে না আসে ইঁদুরটি। প্রাথমিকভাবে বেশ কয়েকবার একই ঘটনা ঘটান উইলসন। এর দিন তিনেক পর ফাঁকা গোলকধাঁধাঁয় ঘুমন্ত অবস্থায় ছেড়ে দেন ইঁদুরটিকে। আর তাতেই ঘটে যায় ম্যাজিক। চোখ বন্ধ অবস্থাতেই, কোনোরকম সংঘর্ষ ছাড়াই গোটা পথটি অতিক্রম করে ইঁদুরটি।
মাছ
মাছের যেহেতু চোখের পাতা নেই, তাই মাছ ঘুমালেও চোখ খোলাই থাকে। মাছেরাও ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে। এসময় তাদের হৃদস্পন্দন এবং মস্তিষ্কের কার্যকলাপ বেড়ে যায়। স্বপ্নের মধ্যেই তারা শিকারি প্রাণীর থেকে আত্মরক্ষা করে।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, সম্প্রতি জেব্রাফিশ প্রজাতির একটি বিশেষ মাছ, মাকড়শা ও পাখিদের ক্ষেত্রেও এই একই ধরনের উদাহরণ লক্ষ করেছেন সান ফ্রান্সিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল গবেষকরা। এমনকি স্নায়ুতন্ত্রের পালস সংগ্রহ করে তারা দেখিয়েছেন, আরইএম ঘুমের সময় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশের সক্রিয়তা। যার সঙ্গে স্মৃতিশক্তিরও যোগ রয়েছে ঘনিষ্ঠভাবে। বন্য প্রাণীদের ঘুম-দর্শনের ওপর ‘দ্য হিডেন ওয়ার্ল্ড অব অ্যানিম্যাল কনসায়েন্স’ নামে একটি বিশেষ প্রবন্ধও প্রকাশিত হয়েছে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এছাড়া গবেষকরা আরও জানতে পারেন প্রাণীদেরও মানুষের মতো গভীর এবং হালকা ঘুম হয়।
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
কেএসকে/জিকেএস