বিয়ের প্রস্তাবের অদ্ভুত রীতি!

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৩১ পিএম, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

দুই হাত ভর্তি মিষ্টি, আংটি, ফুল নিয়ে মেয়ের বাড়িতে একদল মানুষের আগমন। উদ্দেশ্য মেয়েকে বাড়ির বউ করার প্রস্তাব দেওয়া। কিংবা প্রিয় মানুষটিকে ভালোবাসার প্রস্তাব দেবেন। হাজির হলেন হাতভর্তি ফুল নিয়ে। হাঁটু গেড়ে বসে প্রস্তাব দিলেন। এমন চিত্র আমাদের দেশে খুবই সাধারণ।

বিশ্বের অনেক দেশেই এমন রীতি বা সংস্কৃতি থাকলেও এমন একটি দেশ আছে, যেখানের রীতি একেবারেই ভিন্ন। সেখানে পাত্রীর বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দিতে হলে সঙ্গে নিতে হবে পুরুষ তিমির দাঁত। পাত্র তিমির দাঁত কনের বাবা-মাকে দিয়ে প্রস্তাব দেবেন এমনই রীতি সেখানে। এ প্রথা ফিজিতে ট্যাবুয়া নামে পরিচিত। সেখানকার বাজারে বিক্রিও হয় তিমির দাঁত। মূলত তারা সমুদ্রে ভেসে আসা মৃত তিমির দাঁত সংগ্রহ করে বিক্রি করেন। যদিও প্রাচীন ফিজিরা তিমি শিকার করেই দাঁত সংগ্রহ করতেন বলে ধারণা করা হয়।

এ ছাড়াও ফিজিদের সংস্কৃতির একটি অংশ হচ্ছে, যে কোনো অনুষ্ঠানে একে অপরকে উপহার দেওয়া। কিছু সম্প্রদায় আছে, যারা যে কোনো অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে দিয়ে থাকেন খাবার। তার সঙ্গে থাকে ভার্গের কাপড় ও কাভা। কাভা হলো ফিজিদের জাতীয় পানীয়। যা তৈরি করা হয় বিশেষ একধরনের উদ্ভিদের শেকড় দিয়ে। তাদের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার হলো লোভ ফিস্ট। যা তৈরি করা হয় ভূগর্ভস্থ গরম চুল্লিতে।

jagonews24

দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত একটি ছোট্ট দেশ ফিজি। আধুনিক বহু গবেষণা মতে, সূর্যোদয়ের দেশ হলো ফিজি। এখানে প্রতিদিন সবার আগে সূর্য ওঠে। ইন্টারন্যাশনাল ডেট লাইনে অবস্থিত পৃথিবীর একমাত্র আবাদ অঞ্চল এটি। এই ডেট লাইনের পাশেই আছে একটি মনোরম মসজিদ। এখান থেকেই প্রতিদিন পৃথিবীর সর্বপ্রথম আজান শোনা যায়।

আরও একটি মজার তথ্য হচ্ছে, দেশটিতে ৪০ শতাংশ মানুষই ভারতীয়। তাই একে দ্বিতীয় ভারতীয় বলা হয়। তাদের সরকারি ভাষা ইংরেজি। তবে ফিজিয়ানের পাশাপাশি হিন্দি ভাষাও এখানে ব্যবহার হয়। ফিজির আদিবাসীদের বলা হয় ক্যাভেতে। তাদের চেহারায় আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার ছাপ বিদ্যমান। অর্থাৎ আফ্রিকা এবং এশিয়ানরা এখানে এসে এক হয়েছে। ফলে তাদের মধ্যে ভারতীয় ছাপ যতটা আছে; ততটাই আছে আফ্রিকানদের ছোঁয়া।

jagonews24

তবে শুধু চেহারায় নয়, এখানকার আদিবাসিদের জীবনযাপন, রীতি-নীতিও অনেকটা আফ্রিকান বিভিন্ন উপজাতির মতো। এ দেশের গ্রামগুলোয় সানগ্লাস এবং টুপি পরা নিষিদ্ধ। কারণ এখানে শুধু স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরাই সানগ্লাস ও টুপি পরতে পারেন।

ফিজিরা কালো জাদুতে খুবই পারদর্শী। আধুনিক ফিজিরা এখান থেকে সরে এলেও তাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন কালো জাদুতে বিশেষ দক্ষ। এমনও শোনা যায়, তারা আত্মার সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। এমনকি আত্মাকে বশ করতে পারতেন। বিশ্বে প্রথম নরমাংস খাওয়ার প্রথাও চালু হয়েছিল ফিজিতে। খ্রিষ্টধর্ম সূচনা হওয়ার আগপর্যন্ত দেশটিতে এ প্রথার প্রচলন ছিল। ফিজিয়ানরা বিশ্বাস করেন, পাহাড়ের গুহায় দিঘী নামক একটি বৃহৎ সাপ এখনো অবস্থান করছে। এমনকি স্বর্গদেবতা তাদের সমুদ্রের মধ্য দিয়ে ফিজিতে এনেছিলেন।

jagonews24

প্রশান্ত মহাসাগরের অন্য দেশগুলোর তুলনায় ফিজির অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ সচ্ছল। তাদের অর্থনৈতিক আয়ের মূল উৎস ট্যুরিজম ও চিনির উৎপাদন। তবে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি ও মৎস্য শিকারও এখানকার মানুষের আয়ের উৎস। তাদের মাথাপিছু জিডিপি প্রায় ১০ হাজার ডলার। ফিজিয়ান ডলারের মান অনেক কম। তবে থাকা-খাওয়া ও ভালো বেতনের পাশাপাশি ফিজির কাজের পরিবেশ বেশ ভালো।

১৯৭০ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পেলেও ফিজি এখনো কমনওয়েলথের অংশ। যে কারণে ফিজির পতাকায় এখনো ইউনিয়ন জ্যাক দেখতে পাওয়া যায়। যা ইংল্যান্ডের পতাকার একটি নাম। এমনকি কাগজের টাকায় রানি ভিক্টোরিয়ার ছবি ব্যবহার করা হয়।

jagonews24

এখানে শিক্ষা বাধ্যতামূলক না হলেও হার অনেক বেশি। নাগরিকদের মধ্যে প্রায় ৯২ শতাংশ মানুষই শিক্ষিত। তাদের জাতীয় খেলা রাগবি। দেশটির জাতীয় রাগবিদল আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও অত্যন্ত সফল। দেশটির সবচেয়ে বৃহত্তম শহর, প্রধান বন্দর এবং বাণিজ্যিক কেন্দ্র হলো রাজধানী সুভা। শহরটিতে প্রায় ৯০ হাজার লোকের বাস।

সুভা শুধু ফিজির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নয়। বরং পুরো দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কেন্দ্রবিন্দু। শহরটির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে পর্যটন অন্যতম। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে ফিজিরা সুভাতে আসেন তাদের পণ্য বেচাকেনা করার জন্য।

সূত্র: ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউকে

কেএসকে/এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।