মাসিক বেতন-বোনাসে চাকরি করছে ১৬০০ হাঁস

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:১১ পিএম, ১৯ জুলাই ২০২২

ভোরের আলো ফুটতেই শুরু হয় কর্মময় আরও একটি দিন। সবাই চলছে যে যার কাজে। সেই ১০টা-৫টা অফিস শেষ করে আবার সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরা। এই চিরাচরিত দৃশ্য বিশ্বের সব শহরেই। তবে শুধু মানুষই নয়, ১০টা-৫টা অফিস করছে হাঁসেরাও। এজন্য মাসিক বেতন-বোনাসও পায় তারা।

‘প্যাঁক প্যাঁক’ শব্দ করতে করতে মাটির রাস্তা দিয়ে হেলতে দুলতে এগিয়ে চলেছে হাঁসের দল। একটি-দুটি নয়, হাজারেরও বেশি হাঁস ছুটছে কাজে। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনের বাইরেই এরস্টে নদী-তীরবর্তী অঞ্চলের ভাইনইয়ার্ডগুলোতে এটি প্রতিদিনের দৃশ্য।

jagonews24

তবে হাঁসের দল যেদিকে ছুটছে সেদিকে নেই কোনো পুকুর। নদীর কিনারেও তোলা আছে উঁচু পাঁচিল। আসলে তারা যাচ্ছে অফিসে। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। মানুষের মতো হাঁসেরাও চাকরি করে এদেশে। ভোরের আলো ফুটলেও তারাও দল বেঁধে কাজে যায়। বেতনও পায় মানুষের মতোই। অনেক বছর ধরে চলে আসছে এখানে হাঁস কর্মী।

বিশ্বের ওয়াইন উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম দক্ষিণ আফ্রিকা। সবমিলিয়ে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করে দক্ষিণ আফ্রিকার ভিনিকালচার শিল্প। শুধু মানুষই নয়, এই শিল্পক্ষেত্রে হাঁসেরাও মানুষের সহকর্মী। কেপ টাউনের ওয়াইন এস্টেট ভেরজেনোয়েড লো-তে হাঁসেদের ব্যবহার করা হয় কৃষিক্ষেত্রে। ভাইন ইয়ার্ড দেখাশোনা ও রক্ষা করার দায়িত্ব থাকে তাদের ওপরেই।

jagonews24

দক্ষিণ আফ্রিকার এই ভাইন ইয়ার্ডে কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। এমনকি কীটনাশকও ব্যবহৃত হয় না। পতঙ্গের উৎপাত এড়াতে সেখানকার কৃষকরা বেছে নিয়েছেন এই অদ্ভুত পন্থা। প্রতিদিন সকাল হলেই ভাইন ইয়ার্ডে নামানো হয় হাঁসের ব্যাটেলিয়ন। তারাই মাটি থেকে খুঁজে খুঁজে কীটপতঙ্গ, কৃমি, শামুক খেয়ে রক্ষা করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। তাছাড়া তাদের মল-মূত্রই কাজ করে প্রাকৃতিক সার হিসেবে। ফলে এখানে কোনো কৃত্রিম ফার্টিলাইজারের প্রয়োজন হয় না।

কেপ টাউনের প্রতিটি ভাইনইয়ার্ডে ‘কাজ’ করে প্রায় ১৬০০-রও বেশি হাঁস। তবে এখানে সব প্রজাতির হাঁস নেই। এক্ষেত্রে ‘ইন্ডিয়ান রানার ডাক’ প্রজাতিকেই বেছে নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষকরা। কারণ এই বিশেষ প্রজাতির ঘ্রাণ শক্তি প্রবল। সহজে পোষও মানে তারা।

jagonews24

প্রতিদিন রাতে তাদের জন্য বরাদ্দ হয় বিশেষ প্রোটিনযুক্ত খাবার। মূলত এটিকেই ধরা হয় তাদের বেতন হিসেবে। বছরে একবার মাস খানেকের লম্বা ছুটিও পায় এই হাঁসেরা। সেটা মেলে ফসল কাটার মৌসুমে। মূলত এই সময়টায় নদীতেই সাঁতার কেটে বেড়ায় তারা। পাশাপাশি এ সময় বোনাসও পায় এই তারা। ভাইন ইয়ার্ডের সেরা আঙুরের একাংশ বরাদ্দ করা হয় হাঁসেদের জন্য।

দক্ষিণ আফ্রিকার এই প্রথা একদিকে যেমন রাসায়নিক দূষণে রেশ টেনেছে, তেমনই এই অবাক করা ‘আপিস’ হয়ে উঠেছে সেদেশের অন্যতম আকর্ষণ। হাঁসেদের এই কর্মকাণ্ড দেখতে এখন রীতিমতো ভিড় জমান পর্যটকরা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশও কৃষিক্ষেত্রে এভাবে জৈব পথে হাঁটলে এক নিমিষে বদলে যেত পরিবেশের হাল। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় এই অদ্ভুদ পদ্ধতি আজকের নয়। প্রায় ৩০০ বছর ধরে চলে আসছে এই পদ্ধতি।

সূত্র: সিএনএন ট্রাভেলস

কেএসকে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।