মাটিতে শুয়েই ডুবি আকাশের বিশালতায়
রনি রেজা
মায়ের সঙ্গে সম্পর্কটা যত সহজ হয়, বাবার সঙ্গে ততটা নয়। ভালোবাসি, কিন্তু প্রকাশ করতে পারি না। মুখ ফুটে বলা! সে তো বোমা ফাটানোর চেয়েও কঠিন। ওই যে প্রজন্মদূরত্ব বলে, ওটার কারণেই হোক আর বাবার কর্মব্যস্ততার কারণেই হোক; বাবার কাছে ঘেঁষাটা একটু কষ্টসাধ্য। তবু বাবাকে অনুকরণ করি আড়ালে। সেই ছোট্টবেলা থেকে।
বাবা বাসায় নেই নিশ্চিত হয়েই তার শার্ট-চাদর পরে বড় সাজতাম। তার জুতোর ভেতর কাগজ গুঁজে পরতাম, হাঁটতে গিয়ে আঁছড়েও পড়েছি কত। কচিমনে সর্বাগ্রে যে ভাবনাটা ঠাঁই পেত—‘বড় হয়ে বাবার মতো হবো।’ এখনো বাবার কথা বলা, হাঁটা এমনকি অন্যের ওপর রাগ করার ধরনও অনুকরণ করি।
বাবা যা-ই করেন, ভালো লাগে। কিন্তু বলতে পারি না। প্রজন্মদূরত্ব তো আছেই। মতের যে কত অমিল! বলে শেষ করা যাবে না। মাঝে-মধ্যে তো দু’একটা বলিও। তবু দিন শেষে মনে হয় বাবাই ঠিক। তবু কাছে গিয়ে স্যরি বলার সাহস হয় না। মনে মনে দুঃখিত হই। বাবার কাছে ক্ষমা চাই। পরক্ষণে দেখি বাবা ক্ষমা করেছেন।
তিনি কীভাবে বুঝলেন আমার ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি? জানি না। হয়তো বাবা হলে এমন ক্ষমতা অর্জন করা যায়। বাতাস নিজ দায়িত্বে পৌঁছে দেয়।
আকাশ ছোঁয়া যখন অসাধ্য; তখন মাটিতে শুয়েই অনায়াসে ডুবে যাই আকাশের মাঝে। বাবার ভালোবাসার শক্তি সব ভুলিয়ে দেয়। তার প্রতিটি স্পর্শ বীণার তারের মতো আন্দোলিত করে...
লেখক: কবি, কথাশিল্পী ও সাংবাদিক।
এসইউ/এমএস