মাহে রমজান ও আল কোরআন
ইসলামে রোজার তাৎপর্যের শেষ নেই। রোজাদারকে আল্লাহ তায়ালা নিজ হাতে পুরস্কার দিবেন। যে ব্যক্তি ঈমান ও এহতেসাবের সাথে রোজা রাখবে তার অতীতের গুনাহ-অপরাধ মাফ করে দেয়া হবে। রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের সুগন্ধি থেকেও উত্তম।
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, ‘রোজা খাস করে আমার জন্য রাখা হয়। আর আমিই এর প্রতিদান দেবো।’ এ মাসে এত করুণা, মা, সওয়াব ও মর্যাদার পেছনে মৌলিক কোন কারণটি নিহিত রয়েছে? এ মাসে এমন কোন বিষয় বা ঘটনা রয়েছে, যা এ মাসকে মহিমান্বিত করেছে? যেকোনো বিরাট আয়োজন ও অতি মর্যাদার পেছনে অবশ্যই একটি বিশেষ ঘটনা বা বিশেষ কারো আগমন উপল হয়ে থাকে। হ্যাঁ, এ মাসেই বিশ্বের সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছিল। মহাবিশ্বের বিস্ময় আল কুরআন এ মাসেই নাজিল হয়েছিল। আর এ মহিমান্বিত কুরআনের মাধ্যমে সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা:) কে রেসালাতের মহান আসনে অভিসিক্ত করা হয়।
মহান আলাহ বলেন, ‘রমজান এমন মাস যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে, যা সমগ্র মানবজাতির জন্য পথনির্দেশিকা আর তা এমন সুস্পষ্ট উপদেশাবলিতে পরিপূর্ণ, যা সঠিক ও সত্য পথ প্রদর্শন করে এবং যা সত্য মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য নিরূপণকারী।’ (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)।
মহান আল্লাহ আরও বলেন, ‘অবশ্যই আমি এ কোরআনকে লাইলাতুল কদরে নাজিল করেছি। আপনি জানেন লাইলাতুল কদর কী? তা হচ্ছে এমন রাত যা হাজার মাস হতে উত্তম।’ (সূরা কদর : আয়াত ১-৩)।
তাহলে সুস্পষ্ট পবিত্র কুরআনের কারণেই একটি রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম হয়ে গেল আর এ মাসটিও অন্যান্য মাসের তুলনায় বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হলো। যে কুরআনের কারণে রমজানের এত বড় মর্যাদা। আমাদেরকে সর্বপ্রথম সেই কুরআনের দিকেই মনোসংযোগ করতে হবে। এ জন্য কুরআন শিখতে হবে, বুঝতে হবে, মানতে হবে, প্রচার করতে হবে এবং সাথে সাথে কুরআন প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। তাহলেই রমজান আমাদের জীবনকে সার্থক করে তুলবে এবং রোজার হক আদায় করা সম্ভব হবে।
রোজার সাথে কুরআনের আর কুরআনের সাথে রমজানের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। রোজার উদ্দেশ্য জানতে পারলে আমরা এ সম্পর্কটি বুঝতে পারব এবং রোজার সঠিক তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারব। মহান আল্লাহ বলেন ‘হে ঈমানদার লোকেরা, তোমাদের ওপর রোজাকে ফরজ করা হয়েছে যেমনি ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। সম্ভবত তোমরা খোদাভীতি অর্জন করতে পারবে।’ (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮২)।
একজন রোজাদার আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় রোজা পালন করে, আল্লাহর ভয়ে গোপনেও কিছু খায় না, রোজার সওয়াব নষ্ট হয় এমন অনেক বিষয় পরিহার করে এভাবে রোজা বান্দাকে আল্লাহর হুকুম মানতে অভ্যস্ত করে। দীর্ঘ এক মাসের কঠিন সাধনার মাধ্যমে সে সৎ পথে চলতে অভ্যস্ত হয় এবং অন্যায় ও অসৎ কাজের ব্যাপারে তার মধ্যে ঘৃণাবোধ সৃষ্টি হয়। ফলে সে নির্মল চরিত্রের একটি পূর্ণাঙ্গ মানুষে পরিণত হয়। এখানে উল্লেখ্য, পবিত্র কুরআন এ মানুষটিকেই মুত্তাকি বলেছে। সিয়াম সাধনাই মানুষকে মুত্তাকি বানায়। আর পবিত্র কুরআন থেকে যথার্থ কল্যাণ লাভ করতে হলে মুত্তাকি হতে হবে।
আল্লাহ বলেন, ‘এটা আল্লাহ তায়ালার কিতাব, এতে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই। এটা জীবনযাপনের ব্যবস্থা মুত্তাকিদের জন্য।’ (সূরা বাকারা : আয়াত ১-২)।
পবিত্র কুরআন মুত্তাকিদের পথ দেখায় আর রোজা সেই মুত্তাকি তৈরি করে। তাই রমজান এবং কুরআন উদ্দেশ্য-লক্ষ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে একই সূত্রে গাঁথা। কিন্তু রোজা সবাইকে মুত্তাকি করে না। আর সবাই রমজানের কল্যাণ ও বরকত লাভেও সমর্থ হয় না। যে রোজা মানুষকে ভালো হতে উৎসাহিত করে না, যে রোজার মাধ্যমে মানুষ খারাপ কাজ পরিহার করতে শেখে না সেই রোজা যথার্থ রোজা নয়। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলা ও মিথ্যা আচরণ থেকে বিরত হলো না তার ক্ষুধার্থ ও তৃষ্ণার্থ থাকায় আল্লাহর কোনোই প্রয়োজন নেই।’ (বুখারি)
তাহলে কার রোজা যথার্থ রোজা? মহানবী (সা:) বলেন, ‘ঈমান ও আত্মপর্যালোচনার সাথে যে রোজা রাখবে তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ কাজেই মাগফিরাত ও নাজাত পেতে হলে ঈমানের পাশাপাশি আমাদের কথা ও আচরণগুলোকে নিজেদের নিখুঁত পর্যালোচনা করতে হবে এবং খারাপ আচরণগুলো বর্জন করতে হবে। তাহলেই রোজা আমাদের সৌভাগ্যের দুয়ার খুলে দেবে। এ ধরনের রোজাদারদের জন্যই মহানবী সা: ‘রাইয়ান’ নামক জান্নাতের উন্মুক্ত দরজার সুসংবাদ দিয়েছেন।