নাস্তার উপকরণ বিক্রি করে ৩০০ কোটি টাকা আয়
এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেন পিসি মুস্তফার। তার বাবা একজন কুলি। ছোটবেলায় স্কুল থেকে ফেরার পথে বাবার সঙ্গে কুলির কাজ করতেন ছোট্ট মুস্তফা। স্কুলব্যাগের বদলে ঘাড়ে তুলে নিতেন ভারী কাঠের বাক্স। আবার সন্ধ্যায় ঘরে এসে পড়তে বসে ক্লান্ত মুস্তফা ঘুমিয়ে পড়তেন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ফেল করে বসেন তিনি।
না খেয়ে অনেক দিন কাটিয়েছেন ছোট্ট মুস্তফা। এমনকি অভুক্ত অবস্থায়ই অনেক রাত কাটাতে হয়েছে পুরো পরিবারকে। আজ সেই কুলির ছেলে মুস্তফা বছরে শত শত কোটি টাকা উপার্জন করেন।
বর্তমানে একটি খাবারের সংস্থার মালিক মুস্তফা। জানলে অবাক হবেন, সকালের নাস্তার উপকরণ বিক্রি করেই কোটিপতি বনে গেছেন তিনি। তাকে সবাই ‘ব্রেকফাস্ট কিং’ নামেই চেনেন এখন। ভারতীয়দের প্রাতঃরাশ ইডলি, দোসা, রুটি-পরোটার উপকরণ বিক্রি করে তার সংস্থা। তার সংস্থার নাম ‘আইডি ফ্রেশ ফুড’।
কেরালার ওয়ানাদ জেলার চেন্নালোডের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে ওঠেন মুস্তফা। প্রথমদিকে নিজ এলাকায় দিনে ৫০ প্যাকেট খাবার বিক্রি করতেন। এখন প্রতিদিন পুরো ভারতে কয়েক হাজার প্যাকেট সরবরাহ করে মুস্তফার ‘আইডি ফ্রেশ ফুড’ সংস্থা।
মুস্তফার বাবা কফির বাগানে কুলির কাজ করতেন। মা ছিলেন গৃহিণী। মুস্তফা জানান, ‘কোনো বাবা-মা চান না তার সন্তান নিরক্ষর থাকুক। আমার বাবা-মা নিরূপায় ছিলেন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ফেল করার পর পড়়াশোনায় আরও মনোযোগ দেই। এর ৫ বছর পর দশম শ্রেণি শেষ করে বোর্ড পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করি।’
এভাবেই মুস্তফা দ্বাদশের গণ্ডি পেরিয়ে এনআইটিতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পান। চাকরি পান বহুজাতিক সংস্থায়ও। তবে নিজে কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন। যদিও ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক সংস্থায় ততদিনে কাজ করে যাচ্ছিলেন তিনি। তবে কিছুতেই সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না।
২০০৫ সালে দেশে ফিরে মুস্তফা তার চাচাতো ভাইদের নিয়ে ৫৫০ বর্গফুটের একটি অফিস নেন। শুরুতে ৫ হাজার কেজি চাল থেকে ১৫ হাজার কেজি ইডলির উপকরণ তৈরি করে মুস্তফার সংস্থা। এখন তারা দেশের সব বড় শহরে নিয়মিত এর চারগুণ বেশি উপকরণ বিক্রি করেন।
১০ বছরের মধ্যেই মুস্তফার সংস্থার বছরে আয় হয় ১০০ কোটিরও বেশি। ২০১৭-২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৮২ কোটিতে। শেষ আর্থিক বছরে ২৯৪ কোটি টাকা আয় করে মুস্তফার সংস্থা, যা আগের বছরের তুলনায় ২৩৮ কোটির থেকে ২৩.৫ শতাংশ বেশি।
তার উত্তরণের এই কাহিনি সবাইকে উৎসাহিত করে। দুই বছর আগে জাতীয় স্তরের একটি সংবাদ সংস্থা দেশের প্রথম ১০ ‘সেল্ফ মেড ম্যান’র একটি তালিকায় জায়গা করে নেন মুস্তফা। তিনি নিজ সংস্থার মাধ্যমে বেকারদের কাজের সুযোগ করে দিচ্ছেন। প্রায় ৫০০ মানুষ এ সংস্থার সঙ্গে যুক্ত।
সূত্র: ডিএনএ ইন্ডিয়া/ইন্ডিয়া টাইমস
জেএমএস/জিকেএস