রেললাইনে শুইয়ে রোগীর চিকিৎসা!
এক রেললাইনে মানুষ শুয়ে আছে সারি হয়ে। অন্য রেললাইন দিয়ে ঝড়ের বেগে ছুটছে রেলগাড়ি। কতটা ভয়ঙ্কর দৃশ্য কল্পনা করে দেখুন! নিশ্চয়ই ভাবছেন, এটি কোনো সিনেমার দৃশ্য! মোটেও নয়, বাস্তবেই আপনি এই দৃশ্য দেখতে পাবেন ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তার রাওয়া বুয়া গ্রামের রেললাইনে।
প্রথমবার হঠাৎ এভাবে রেললাইনে মাথা দিয়ে মানুষদেরকে শুয়ে থাকতে দেখলে ভাববেন, হয়তো কোনো আন্দোলন চলছে। আসলে রেললাইনে যারা শুয়ে আছেন; তারা সবাই চিকিৎসা নিচ্ছেন। অবাক করার বিষয় হলেও সত্যিই যে এভাবে ইন্দোনেশিয়ার কিছু মানুষ রেল ট্র্যাক থেরাপি নিয়ে থাকে। এটি একটি চিকিৎসাব্যবস্থা।
শুধু বড়রাই নন, শিশু থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরি এমনকি বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষরাই এই চিকিৎসা গ্রহণ করতে রেললাইনে মাথা দেন। রেললাইন থেরাপি নিতে আসা মানুষদের সবারই যে একই রোগ, তা কিন্তু নয়।
একেকজন ভিন্ন রোগ বা শারীরিক সমস্যা নিয়েই বিপজ্জনক এই থেরাপি নিতে আসেন। তেমনই একজন হলেন শ্রি মুলিয়াতি। ৫০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি জানান, তিনি ডায়াবেটিসে ভুগছেন দীর্ঘদিন ধরে। চিকিৎসকরা সব দামী দামী ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
তবে এতো অর্থ ব্যয় করে ওষুধ খাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য ডায়াবেটিস সারাতে মুলিয়াতি রেললাইন ইলেকট্রিক থেরাপি গ্রহণ করছেন। সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তিনি এ থেরাপি গ্রহণ করতেই থাকবেন বলেও জানান মুলিয়াতি।
রেললাইনে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের ধারণা, ট্রেন চলার সময় রেলাইনে যে কম্পন ও হালকা বৈদ্যুতিক তরঙ্গ ঘটে তা শরীর মধ্য দিয়ে প্রবেশ করানো। তাদের ভ্রান্ত ধারণা হলো, এভাবে রেললাইনে শুয়ে থাকলেই সারবে বিভিন্ন রোগ। তবে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন কোনো প্রমাণ নেই যে রেললাইনে পড়ে থাকলে শরীরে কোনো উপকার মিলবে।
তবে এ চিকিৎসায় মুলিয়াতিসহ অন্যান্যদেরও পুরোপুরি বিশ্বাস আছে। মুলিয়াতির মতে, ‘১৩ বছর আগে আমার রক্তচাপ, অনিদ্রা এবং উচ্চ কোলেস্টেরলসহ শাররিক বিভিন্ন রোগ ধরা পড়ে। তারপর থেকে রেললাইন থেরাপি গ্রহণে মাধ্যমে আমি অনেকটাই সুস্থ আছি’।
আরও এক রোগী হাদি উইনোটো। তার বয়স ৫০ বছর। স্ট্রোকের কারণে বর্তমানে তিনি বেশিক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে পারেন না। এ কারণে তিনি এই বিপজ্জনক চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সুস্থ হতে চাই। তাই এই থেরাপি গ্রহণ করছি।’
সরকার কর্তৃক পরিচালিত রেলপথ কর্তৃপক্ষ অবশ্য এ বিষয়ে অনেকবার সতর্ক করেছেন জনগণকে। যদি কেউ এই অপরাধ করেন; তাহলে তার ৩ মাসের কারাদণ্ড বা ১৪০০ মার্কিন ডলার জরিমানা দেওয়ার বিধান আছে। এরপর থেকে বিপজ্জনক এই চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আসা জনগণের সংখ্যা কমলেও একেবারে বন্ধ হয়নি।
সূত্র: সিবিসি/রয়টার্স
জেএমএস/এমকেএইচ