আজব প্রথা! এক স্ত্রী নিয়েই সংসার করেন সব ভাই

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৪৯ পিএম, ০৫ আগস্ট ২০২১

আজব এক প্রথা মানেন পাঞ্জাবারে মানসার বোহা গ্রামের আদিবাসীরা। সেখানে এক স্ত্রী নিয়েই সংসার পাতেন পরিবারের সব ভাইয়েরা। ওই গ্রামের শত শত বছরের এই প্রথা মেনেই কোনো কোনো নারীরা ৫-৭ স্বামী নিয়ে সংসার করছেন।

২০২১ সালে এসেও অদ্ভুত এই ঘটনার সাক্ষী বিশ্ব। তবে তারা ঠিকই দিব্যিই এই রীতি মেনে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছেন। কারও মনে নেই কোনো অভিযোগ। বংশপরম্পরায় চাষযোগ্য জমির সংকট, দারিদ্র্যের কষাঘাত এবং নারী-পুরুষ জনসংখ্যার আনুপাতিক হ্রাসের কারণেই এই প্রথা মানতে বাধ্য হয়েছেন তারা।

jagonews24

সাম্প্রতিক সময়ে পাঞ্জাবে নারী-পুরুষের আনুপাতিক হার হলো, ৭৯৩ জন নারীর বিপরীতে ১০০০ পুরুষ। এ অবস্থায় গড়ে প্রতিটি পরিবারের অর্ধ-ডজন ভাই মিলে বিয়ে করেন এক নারীকে।

সেখানকার নারীরা বেশ ক্ষমতাশীল। ৫ স্বামী নিয়ে সংসার করছেন রজ্জো ভার্মা। দুই সন্তানের এই জননী প্রতি রাতে পরিবারের একেক ভাইয়ের সঙ্গে শুয়ে থাকেন। প্রতি রাতে রজ্জো কার সঙ্গে থাকবে, সেটি সম্পূর্ণ তার সিদ্ধান্ত। এটাই সেখানকার রীতিনীতি। ৫ স্বামী আর দুই সন্তান নিয়ে সুখেই সংসার করছেন রজ্জো। তাদের মধ্যে নেই কোনো অশান্তি।

jagonews24

একইভাবে সুখে সংসার করছেন সুনীতা দেবী নামের আরেক নারী। তার অবশ্য ২ স্বামী। কারণ তার শ্বশুরের মাত্র ২টি ছেলে সন্তান। তাই এই ঘরে দুই ভাইয়ের বউ হয়ে এসেছেন সুনীতা। সুনীতার ভাষায় তিনি খুবই ভাগ্যবতী। কারণ তিনি দুজন স্বামীর স্ত্রী।

একজন তাকে রান্নাতে সাহায্য করে এবং অন্যজন বাচ্চা মানুষ করতে। এমনইভাবে দুই ভাইকে বিয়ে করেছিলেন বুদ্ধি দেবীও। তার বয়স এখন প্রায় ৮০ বছর। তার এক স্বামী মারা গেছে। অন্যজন এখনও বেঁচে আছেন।

এক নারীর একাধিক ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ের এই রীতি গত শতাব্দী ধরে চলে আসছে। এক পরিবারে যতটুকু জমি আছে তা ছেলেদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। পরবর্তীকালে তারা যখন বিয়ে করেন; তখন সেই জমি তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে দেওয়া হয়।

jagonews24

যেহেতু প্রতিটি ভাইয়ের একজনই স্ত্রী থাকে; তাই আলাদা করে জমি প্রত্যেকের নামে ভাগ করার প্রয়োজন হয় না। তবে এ রীতির কারণে বাল্যবিবাহের প্রকোপ এবং একই সঙ্গে অকাল মাতৃত্বের আশঙ্কাজনক হার বেড়ে চলেছে।

তবে এ পরিস্থিতি ঠেকাতে বর্তমানে ওই এলাকার পার্শ্ববর্তী রাজ্য বিহার, উত্তর প্রদেশের ধর্মগুরু ও সমাজপতিরা বাঁধ সাধছেন। অন্যদিকে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, একজনের বিয়ে করা বউকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বামীর অন্য ভাইদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে বাধ্য করা হচ্ছে।

ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং ন্যাশনাল কমিশন ফর ওমেনের নজরদারিতেও এসেছে বিষয়টি। তারাও মনে করছেন, এসব অঞ্চলের নারীরা মোটেই স্বেচ্ছায় এ দুর্ভোগ মেনে নিচ্ছেন না। প্রবল সামাজিক চাপ আর পারিবারিক দারিদ্র্যের অলঙ্ঘনীয় বাধ্যবাধকতার কারণে তারা মেনে নিচ্ছেন এই প্রথা।

jagonews24

অনুসন্ধানে দেখা যায়, পরিবারে বড় ভাই যাকে বিয়ে করছেন; সেই স্ত্রীই স্বামীর অন্য ভাইদেরকেও দেখভাল করেন। তাদের খাওয়া-দাওয়া, কাপড়-চোপড়, গরু-লাঙ্গল দেখা থেকে শুরু করে পালাক্রমে তাদের শয্যাসঙ্গীও হতে হয় তাকেই। কোনো কোনো পরিবারে দেখা ছে, এক নারী পরিবারের ৮ ভাইয়ের সহ্যাসঙ্গী হচ্ছেন। যা রীতিমতো বিষ্ময়কর ও অমানুষিক।

এ বিষয়ে ভারতের ন্যাশনাল কমিশন ফর ওমেনের চেয়ারম্যান ড. গিরিজা ব্যাস বলেন, ‘এ ধরনের একজন নারীর অনেকগলো সন্তান থাকে। যাদের কারও পিতৃপরিচয় নির্ধারিত নয়।’ এ ছাড়াও এ ধরনের বিয়ে কখনও প্রচলিত ধর্মীয় বা সামাজিক বিধি-বিধান মেনে হয় না। তাই এ সংক্রান্ত কোনো প্রমাণপত্র বা সাক্ষী-সাবুদ একেবারেই পাওয়া যায় না।

সূত্র: ডেইলি মেইল/টাইমস অব ইন্ডিয়া

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।