দেশে যেদিন প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশ হয়

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:০৪ পিএম, ২৯ জুলাই ২০২১

অনেকেই শখের বশে ডাকটিকিট সংরক্ষণ করে থাকেন। ডাকটিকিট হলো এক খণ্ড কাগজ। যা ডাক মাসুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নানা বর্ণের এই ডাকটিকিটগুলো দেখতে খুবই সুন্দর। এই ডাকটিকিটে ফুটে ওঠে দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, বরেণ্য ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি বিষয়।

ডাকটিকিট সাধারণত চারকোণা বা বক্স আকৃতির হয়ে থাকে। তবে ত্রিকোণাকার, গোলাকার, স্টারসহ আকৃতির ডাকটিকিটও পাওয়া যায়। বিশ্বের প্রতিটি দেশের ডাক ব্যবস্থায় ডাকটিকিটের ব্যবহার আছে। তাই প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ ডাকটিকিট প্রকাশ পায়।

jagonews24

বিশেষ দিনগুলোকে স্মরণীয় করে রাখতে বিভিন্ন দেশের ডাক বিভাগ ডাকটিকিট প্রকাশ করে থাকে। ডাকটিকিট সাধারণত কাগজের তৈরি হয়ে থাকে। তবে কাঠের ফাইবার, সিনথেটিক কাপড় ইত্যাদির ডাকটিকিট ও পাওয়া যায়। অনেক ডাকটিকিটের উপর বিভিন্ন মনিষীর ছবিও ছাপানো থাকে।

বাংলাদেশের ডাকটিকেট প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়েই ডাকটিকিটের প্রচলন ঘটে। ১৯৭১ সালের ২৯ জুলাই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশ নামে প্রথম ৮টি ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়। আজ ডাকটিকিট দিবস। প্রতিবছর ২৯ জুলাই এই দিবসটি পালিত হয়ে থাকে।

দেশে প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশ

১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয় এবং ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করে। দেশে তখন চলছে মুক্তিযুদ্ধ। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিল বিচ্ছিন্ন। এ সময় একটি কেন্দ্রীয় ডাকঘরসহ বেশ কিছুসংখ্যক ফিল্ড পোস্টঅফিস স্থাপন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের খবর পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই ডাকব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছিল।

jagonews24

১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের শেষ দিকের ঘটনা। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য ও ব্রিটিশ ডাক বিভাগের পোস্টমাস্টার জেনারেল জন স্টোন হাউজ মুজিবনগর সরকারের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তিনি বলেন, মুক্তাঞ্চলে চিঠি আদান-প্রদানের জন্য বাংলাদেশ নামে ডাকটিকিট ব্যবহার করার কথা। তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব সত্য হিসেবে বিশ্বের কাছে প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে।

মুজিবনগর সরকার এই প্রস্তাব গ্রহণ করে। তারপর বাংলাদেশ নামে ডাকটিকিট প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ১৯৭১ সালের ২৯ এপ্রিল জন স্টোন হাউজ টেলিফোনের মাধ্যমে লন্ডন প্রবাসী ভারতীয় বাঙালি অধ্যাপক ও শিল্পী বিমান মল্লিককে ডাকটিকিট ডিজাইনের দায়িত্ব দেন। বিমান মল্লিক বিনা পারিশ্রমিকে ডিজাইন করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ৮টি ডাকটিকিটের ডিজাইন করেন এবং ডাকটিকিটগুলো মুজিবনগর সরকার অনুমোদন করে।

১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই প্রবাসে মুজিবনগর সরকারের বিশেষ দূত বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এই ৮টি ডাকটিকিট দেখিয়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য জোর দাবি উত্থাপন করেন। ১৯৭১ সালের ২৯ জুলাই ওই ৮টি ডাকটিকিট একযোগে লন্ডন, মুজিবনগর ও কলকাতাস্থ বাংলাদেশ মিশন থেকে প্রকাশিত হয়। এটি ছিল মুজিবনগর সরকারের কূটনৈতিক বিজয়।

jagonews24

দেশের প্রথম ৮টি ডাকটিকিটের একটিতে বাংলাদেশের মানচিত্র ছিল। অন্য একটিতে ছিল ব্যালটবাক্স। যাক্স গণতন্ত্রের প্রতীক। আরেকটি ছিল শিকল ভাঙার ছবি। এর দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে বাংলাদেশ পাকিস্তানের পরাধীনতা থেকে মুক্ত হয়েছে।

একটি টিকিটে ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, আরেকটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যার চিত্র। ১৯৭১ সালের ২৯ জুলাই বাংলাদেশের প্রথম ৮টি ডাকটিকিট ও ফাস্ট ডে কাভার বিভিন্ন দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ উপলক্ষে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আটটি ডাকটিকিট বিশিষ্ট্য প্রতি সেটের মূল্য ছিল ২১ টাকা ৮০ পয়সা।

jagonews24

প্রথম ৮টি ডাকটিকিটের মূল্য

> ১০ পয়সা বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান।
> ২০ পয়সা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হত্যাকাণ্ড।
> ৫০ পয়সা সাড়ে সাত কোটি মানুষ।
> ১ টাকা ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফল।
> ৩ টাকা ১০ এপ্রিল ১৯৭১ এ স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা।
> ৫ টাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
> ১০ টাকা বাংলাদেশকে সমর্থন করুন।

jagonews24

ডাকটিকিট দিবস

বাংলাদেশ নামে প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশ পায় ২৯ জুলাই। এ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০০৩ সাল থেকে ফিলাটেলিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (পিএবি) ‘ডাকটিকিট দিবস’ হিসেবে উদযাপন করে আসছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ২০০৮ সালের ২৯ জুলাই প্রথমবারের মতো সুভেনির শিট প্রকাশ করে।

২০১৫ সালে বিমান মল্লিক ডাকটিকিট দিবসের জন্য ডাকটিকিটের নতুন ডিজাইন করে ২৯ জুলাই প্রকাশিত হয়। ২০১৬ সালের ২৯ জুলাই ও ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট ডাকটিকিট দিবস উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়েছে।

jagonews24

ডাকটিকিটের ইতিহাস

বৃটেনের রোল্যান্ড হিলকে ডাকটিকিটের জনক বলা হয়। ১৮৩৭ সালের কথা। সে সময় প্রেরককে নয় প্রাপককেই ডাক মাশুল দিতে হত। চিঠির পাতার সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে ডাক মাশুল নির্ধারিত হত। প্রাপক অনেক সময় বিভিন্ন কারণবশত ডাক মাশুল দিতেন না।

এসব অসুবিধা দূর করতে রোল্যান্ড হিল ডাক বিভাগের সংস্কারে বিভিন্ন প্রস্তাব আনেন। যার অন্যতম ছিল ডাকটিকিটের প্রচলন। ১৮৪০ সালে তার প্রস্তাবানুসারেই প্রাপকের পরিবর্তে প্রেরক কর্তৃক ডাকমাশুল দেবার রীতি প্রবর্তন করা হয়। ওজনের ভিত্তিতে ডাক মাশুল দেবার পদ্ধতিও এ সময় চালু করা হয়।

ইতিহাস মতে, পেনি ব্লাক পৃথিবীর প্রথম ডাকটিকিট। ১৮৪০ পৃথিবীর প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশিত হয় ১৮৪০ সালে। যুক্তরাজ্যে প্রকাশিত এই ডাকটিকিট দেখতে ছিল কালো রঙের। রঙের কারণে এর নাম হয়েছে ব্লাক। আর ডাকটিকিটের মূল্য মান ১ পেনির হওয়ায় দুটো মিলে পেনি ব্লাক নামকরণ করা হয়। বৃটেনের রানীর প্রতিকৃতি ছিল বিশ্বের প্রথম ডাকটিকিটে।

জেএমএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।