রূপ-লাবণ্যে ভরপুর মালয়েশিয়া


প্রকাশিত: ০৮:৪৩ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০১৫

প্রকৃতি অপার হস্তে সাজিয়েছে পূর্ব এশিয়ার পর্যটন নগরী মালয়েশিয়াকে। পরতে পরতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রূপ-লাবণ্যের অপূর্ব এক ভাণ্ডার। মালয়েশিয়ার নান্দনিক সৌন্দর্যের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক শোভা মুগ্ধ করে পলকেই। এই দেশটির প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই চোখে পড়বে পাহাড়। মেঘ ও পাহাড়ের দেশই বলা চলে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই মূলত বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের সেখানে বেড়াতে যেতে আকৃষ্ট করে। দুই পাহাড়ের মাঝে আঁকাবাঁকা পিচঢালা পথ, ছবিতে দেখা এমন দৃশ্যের ছবির মতো একটি দেশ মালয়েশিয়া। দেশটির যতো সব আধুনিকায়ন তার বেশি অংশই পাহাড় কেটে করা হয়েছে। বিশেষ করে সড়কপথ ও রেলপথ।


রাজধানী কুয়ালালামপুর থেকে এক ঘণ্টার পথ `গ্যানতিং হাইল্যান্ড`। ছয় হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ের ওপর। সেখানে যাওয়া যায় দুটি উপায়ে। গাড়িতে অথবা কেবল কারে। পাহাড় কেটে ঘুরানো পিচঢালা আঁকাবাঁকা পথে একটু একটু করে গাড়ি চূড়ায় ওঠে। গাড়ি থেকে নামলে সেখানে মেঘ ছোঁয়া যায় এবং প্রয়োজন হয় শীতের কাপড়ের। এছাড়া কেবল কারে চড়েও চূড়ায় যাওয়া যায়। কেবল কারে চড়ে যাওয়ার স্বাদ পুরোই অন্যরকম। চূড়ায় যেতে কেবল কার ব্যবহার না করলে রোমাঞ্চকর, অ্যাডভেঞ্চার অনুভূতি মিস করতে হবে। কেবল কার ও বাস চলাচল সন্ধ্যা ৭টার পর বন্ধ হয়ে যায়। তারপর সকাল ৮টা পর্যন্ত নিজস্ব গাড়ি না থাকলে যাওয়া-আসার মাধ্যম ট্যাক্সিক্যাব।


মালয়েশিয়ার `কেএলসিসি`তে অবস্থিত টুইন টাওয়ার। এটি যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানেও টুইন টাওয়ার নির্মাণের পূর্বে পাহাড়-জঙ্গল ছিল। পাহাড়-জঙ্গল ধ্বংস করে দাঁড় করানো হয়েছে টুইন টাওয়ার। এ টুইন টাওয়ারের আরেক নাম পেট্রোনাস টাওয়ার। মালয়েশিয়ায় সর্ববৃহৎ তেল ও গ্যাস কোম্পানির নাম পেট্রোনাস। মালয়েশিয়ায় সর্ববৃহৎ মোবাইল অপারেটর কোম্পানি ম্যাক্সিস ও পেট্রোনাস যৌথভাবে নির্মাণ করেছে টুইন টাওয়ার। টুইন টাওয়ারের পাশেই ম্যাক্সিস টাওয়ার।


পেনাংয়ের বাতুফিরিঙ্গি সৈকত, তেরেঙ্গানূর মসজিদ, মেলাকার মালয় রেস্তোরা, পাহাঙ্গের চা বাগান, পেরাকের রাবার বাগান, লংকাউই দ্বীপ, কুয়ালালামপুরের মসজিদ জামেক, মসজিদ নেগারা (জাতীয় মসজিদ), কে এল টাওয়ার, মালয়েশিয়ার পিং সিটি পুত্রাযায়া মসজিদ। এ স্থাপনাগুলো মালয়েশিয়ার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া সে দেশের পাহাড়গুলো জড়িয়ে অসংখ্য পার্ক রয়েছে। পার্কের ভেতরে গেলে নানা জাতের গাছগাছালি এবং বানর দেখা যায়। এর মধ্যে কিছু পার্কে প্রবেশ করতে টিকিট লাগে, কিছু পার্কে লাগে না। তবে অধিকাংশ পাহাড় এমনিতেই পড়ে আছে। সেখানে লোকসমাগম নেই। পাহাড়ের বুকে আকাশ ছুঁই ছুঁই গাছ।


পার্কগুলোর ভেতর সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে ডমিরন ফলের গাছ। এ ফলটি দেখতে কাঁঠালের মতো। তবে কাঁটাগুলো কাঁঠালের চেয়ে আরও লম্বা। ভেতরে কোষগুলোও কাঁঠালের মতো। তবে কোষগুলোর সাইজ অনেক বড়। পাহাড়ে বসবাসকারী বানরগুলো মানুষের সঙ্গে খুব মিশুক প্রকৃতির। জনসমক্ষে বেরিয়ে এলেও তারা কোনো ক্ষতি করে না। এ দেশের মানুষও তাদের কোনো ক্ষতি করে না। বন্যপ্রাণী শিকার এবং বনের গাছগাছালি কাটা থেকে এ দেশের মানুষ পুরোপুরি বিরত। তারা দুটির প্রতি যত্নবান এবং সচেতন।


মালয়েশিয়ায় এতো পাহাড়, বন-জঙ্গল। নিরিবিলি পাহাড়ি জঙ্গলের পাশ কেটে হেঁটে যাওয়া সিনেমার মতো এই বুঝি জঙ্গলের ভেতর থেকে জংলি বেরিয়ে আসবে। তবে বাস্তবে কোনোদিন জংলি বেরিয়ে আসেনি। মালয়েশিয়ার অধিকাংশ পাহাড়ি জঙ্গলগুলোর ভেতর প্রাণীর মধ্যে আছে বানর ও সাপ। এছাড়া বন্য গরু, মায়া হরিণ, বন্য মুরগি। তবে বানর ও সাপই বেশি। মালয়েশিয়াতে চাইলেই খাওয়ার জন্য মায়া হরিণ কিনতে পাওয়া যায়।


মালয়েশিয়ার কুয়ানতান নামক একটি অঞ্চলের মানুষ অত্যন্ত ধার্মিক। নারীরা অত্যন্ত পর্দানশিন। এ অঞ্চলের প্রতিটি গ্রামে মসজিদের ইমামের নেতৃত্বে একটি করে বাহিনী আছে। কিছুটা সৌদির মতোই সেখানের আইন-কানুন ও বিচার ব্যবস্থা। কুয়ানতাং অঞ্চলের কিছু কিছু পাহাড়ি জঙ্গলের ভেতর এমন জাতের মানুষ থাকে, যাদের জীবনযাপন অনেকটাই জংলিদের মতো। তারা জঙ্গলের ভেতর থেকে বের হয় না। তারা জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করে পূরণ করেন দৈনন্দিন জীবনের সব চাহিদা।

বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।