আলো ছড়াচ্ছে নাজমুল হুদার পথ পাঠাগার

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৫১ পিএম, ২৭ জুন ২০২১

সাজেদুর আবেদীন শান্ত

নাজমুল হুদা সারোয়ারের জন্ম নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার পৌর শহরের বাগিচাপাড়ায়। বাবা হাজী মো. নজরুল ইসলাম ছিলেন উপজেলা অফিসের পেশকার। মা মরহুম হেলেনা বেগম ছিলেন গৃহিণী। চার ভাই এক বোনের মধ্যে সবার ছোট নাজমুল। তিনি ২০০২ সালে দুর্গাপুরের এম কে সি এম পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও সুসং মহাবিদ্যালয় থেকে ২০০৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ২০০৬ সালে নাসিরাবাদ কলেজ ভর্তি হলেও অনার্স শেষ করেননি। ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।

নাজমুল ছাত্রাবস্থা থেকেই শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি দুর্গাপুর সাহিত্য সংসদের প্রতিষ্ঠাতা। পাহাড়ঘেঁষা প্রত্যন্ত আঞ্চলে জন্ম নিলেও বইপড়া তার নেশা। সব সময় চেয়েছেন নতুন প্রজন্মের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে। তার হাত ধরেই ২০২০ সালের জুনের ২ তারিখে যাত্রা শুরু হয় পথ পাঠাগার নামে একটি ভিন্নধর্মী পাঠাগারের। এরপর ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ১২টির মতো পথ পাঠাগার স্থাপন করেন।

jagonews24

নাজমুল নিজস্ব অর্থায়নে নতুন প্রজন্মের মাঝে বইপড়ার চর্চা, পাঠকদের মনের তৃপ্তি আর সমাজের নানা অবক্ষয়মূলক কর্মকাণ্ড রোধে ব্যতিক্রমধর্মী পথ পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি গ্রামের লোকালয়, হাট-বাজার, দোকান, চা স্টল, সেলুন, ফার্মেসিতে বই, সেলফ ও পাঠাগারের ব্যানার দিয়ে বইপড়ার স্থান তৈরি করে দেন। যেখানে বইপড়ার সুযোগ পান সব শ্রেণিপেশার মানুষ।

দুর্গাপুর পৌর শহরে এম কে সি এম মোড়ের সুমন সাহার টি-স্টল, চণ্ডিগড় ইউনিয়নের সাতাশি বাজারের আজিজুল ইসলামের ফার্মেসি, উপজেলা প্রেসক্লাব মোড়ের খোকন মিয়ার হোটেল, নাজিরপুর মোড়ের তোতা মিয়ার অল ম্যান সেলুন, রিক্শাচালক তারা মিয়ার ব্যাটারি চালিত অটোরিক্শায়, কুল্লাগড়া ইউনিয়নের ভেন্নাকান্দা চৌরাস্তার আশরাফুল ইসলামের ফার্মেসি, বহেরাতলীর মোবারক হোসেন মিলনের সেলুন, দুবাউড়া উপজেলার চারুয়াপাড়া গ্রামের শামসুল হক মৃধার ফার্মেসি, ধোবাউড়া তিলক সরকারের গার্মেন্টসের দোকান, ধর্মপাশার ধনা মিয়ার নৌকায়, পাঁচগাঁও বকুল মাস্টারের ফার্মেসিতে পাঠাগার স্থাপন করেন।

jagonews24

নাজমুল শুরু থেকেই একদল উদ্যমী তরুণ নিয়ে পথ পাঠাগারের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেন। পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্বে আছেন মাসুদ রানা, সাংবাদিক রাজেশ গৌড়, তন্ময় সাহা, পলাশ সাহা, জিয়াউল হক শুভ, শিপন, রবি দাস প্রমুখ। তারা বইপড়া আন্দোলনের পাশাপাশি জাতীয় দিবস, সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে নানা কর্মসূচি, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসামগ্রী দান, শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতা, কুইজসহ এলাকার উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকেন।

jagonews24

দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজীব-উল-আহসান বলেন, ‘পাঠকের উন্নত মানসিকতা সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে পাঠাগারটি। আমি পথ পাঠাগারের কিছু শাখা উদ্বোধনের সময় ছিলাম। নাজমুল হুদার কাজ সত্যি প্রশংসনীয়। তার এ বইপড়া বা পাঠাগার আন্দোলন সফল হবে। আমরা সব সময় তার পাশে আছি। আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।’

jagonews24

প্রবীণ লেখক ও আদিবাসী গবেষক মতিলাল হাজং বলেন, ‘পথ পাঠাগার মানুষকে আলোকিত করার যে স্বপ্ন দেখাচ্ছে; তা থেকে সবার শিক্ষা নেওয়া উচিত। তরুণরা এভাবে কাজ করলে এগিয়ে যাবে প্রিয় বাংলাদেশ। সেইসঙ্গে উদার ও মননশীল ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা উচিত।’

jagonews24

নাজমুল হুদা সারোয়ার এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, ‘পাঠকের উপস্থিতি বলে দেয় আমাদের পথ পাঠাগারটি সফল। হোটেল ও সেলুন ভিত্তিক পাঠাগারে সব সময় পাঠক থাকে। তাদের উপস্থিতিতে পাঠাগার সুরভিত হয়ে ওঠে। তথ্যনির্ভর আধুনিক সমাজ বির্নিমাণে নতুন প্রজন্ম এগিয়ে যাবে। সবার সহযোগিতায় পথ পাঠাগার এগিয়ে যাবে। বিভিন্ন অপকর্ম থেকে দূরে থাকবে তরুণ সমাজ।’

লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী।

এসইউ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।