অভিশপ্ত যেসব গুপ্তধন কেড়ে নিয়েছে মালিকের প্রাণ

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৫৩ পিএম, ১৬ মে ২০২১

গুপ্তধন পেলে মানুষের ভাগ্য খুলে যায়! এমনটিই ধারণা সবার। তবে গুপ্তধন যে কখনো কখনো জীবননাশের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, তা হয়তো অনেকেই সিনেমায় বা রূপকথার গল্পে জেনে থাকবেন!

তবে সত্যিই যে, রূপকথার গল্পের মতোই বিশ্বে এমন কিছু দুর্লভ গুপ্তধন আছে; যেগুলো মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এসব গুপ্তধন যদের হাতে গিয়েছে; তারাই দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন। অভিশপ্ত এসব গুপ্তধন ভুতুড়ে বলেও পরিচিত। জেনে নিন তেমনই কয়েকটি অভিশপ্ত গুপ্তধনের রহস্য-

হোপ ডায়মন্ড

৪৫.৫২ ক্যারেটের এই হীরাটি ১৭ শতাব্দীর পর থেকে একের পর এক উত্তরাধিকারের মাধ্যমে মালিকানা পরিবর্তন হয়েছে। ১৯১১ সালের ২৯ জানুয়ারি, দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের একটি নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়, এই রত্নটি যারা উত্তরোধিকার সূত্রে পেয়েছেন; তাদের অনেকেরই অকাল মৃত্যু হয়েছে।

যুবরাজ ইভান ক্যানিটভস্কি এই হীরার মালিকদের একজন ছিলেন। তিনি রাশিয়ান বিপ্লবীদের আক্রমণে নিহত হন। আরেকজন মালিক ছিলেন সাইমন ম্যানচারাইডস, যিনি তার স্ত্রী এবং সন্তানসহ একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। এ ছাড়াও ফরাসি হীরা ব্যবসায়ী জিন ব্যাপটিস্ট তাভার্নিয়র কাছে যখন হীরাটি ছিল; হঠাৎ একদিন বন্য কুকুরের আক্রমণে নিহত হন তিনি। তার মৃতদেহ ছিন্নভিন্ন করে ফেলে বন্য কুকুরেরা।

jagonews24

অভিশপ্ত এই হীরাটির বর্তমান বাজারদর ৭.৪ মিলিয়ন ডলার। তবে এর শেষ মালিক ম্যাকলিন ১৯৫০ সালের দিকে ৩ লাখ ডলারে নামমাত্র মূল্যে হীরা বিক্রির বিজ্ঞাপন দেন। তবে কেউই অভিশপ্ত এই হীরাটি কিনতে রাজি হয়নি। অন্যদিকে মৃত্যুভয়ে ম্যাকলিন হীরাটি ১৯৫০ সালের শেষ দিকে স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশনে দান করেন।

অভিশপ্ত চিত্রকর্ম

একটি চিত্রকর্ম কীভাবে অভিশপ্ত হতে পারে? জানলে অবাক হবেন, ‘দ্য হ্যান্ডস রেজিস্ট হিম’ নামক একটি চিত্রকর্ম শুধু অভিশপ্তই নয় বরং ভুতুড়েও বটে। ক্যালিফোর্নিয়ার চিত্রশিল্পী বিল স্টোনহ্যাম ১৯৭২ সালে এই চিত্রকর্মটি প্রকাশ করেন।

তার ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, এই চিত্রকর্মটি যে গ্যালারিতে প্রদর্শিত হয়েছিল; সেই গ্যালারির মালিক মারা যান। এ ছাড়াও লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস শিল্প সমালোচক; যারা চিত্রকর্মটি পর্যালোচনা করেছিলেন; তারাও প্রদর্শনীর এক বছরের মধ্যেই মারা গিয়েছিলেন।

jagonews24

বিবিসির এক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০০ সালে এই চিত্রটি এক দম্পতি ইবে থেকে কিনেন। এরপর তারা খেয়াল করেন, রাতারাতি চিত্রকর্মটির উপরের অংশ বদলে গেছে। ১,০৫০ ডলারের ছবিটি মোট ৫ বার মালিকানা বদল হয়েছিল, তাও আবার ১৯৯ ডলারের বিনিময়ে। যুক্তরাজ্যের লেখক ড্যারেন কে. ও’নিলের লেখা গল্প অবলম্বনে এই চিত্রকর্ম নিয়ে একটি চলচ্চিত্রও তৈরি হয়েছে।

কোহ-ই-নূর ডায়মন্ড

১০৫ ক্যারেটের কোহ-ই-নূর হীরাটি ১৪ শতকে প্রথম রেকর্ড করা হয়েছিল- ভারতের সানডে টাইমসের তথ্য অনুযায়ী। জানা যায়, ‘যিনি এই হীরাটির মালিক; তিনি বিশ্বের মালিকানাধীন থাকবেন। তবে ঈশ্বর অথবা একজন সৎ নারী ছাড়া এই হীরাটি অন্য কেউ ব্যবহার করলেই তার উপর দুর্ভাগ্য নেমে আসবে।’

jagonews24

কথিত এমন অভিশাপেই না-কি অভিশপ্ত ছিল কোহ-ই-নূর হীরাটি। জানা যায়, মুঘল সম্রাট বাবরের পুত্র এই অভিশপ্ত হীরার কারণেই নিজ রাজ্য থেকে নির্বাসিত হয়েছিলেন। শুধু বাবর পুত্রই নন; শাহজাহান নিজের ছেলের হাতে বন্দি হয়েছিলেন এবং নাদির শাহকে হত্যা করা হয়েছিল। ইতিহাসবিদদের ধারণা, অভিশপ্ত হীরার অভিশাপেই তাদের মৃত্যু হয়েছিল।

তুতানখামুনের সমাধির কোষাগার

তুতানখামুন ছিলেন একজন মিশরীয় ফেরাউন। যার সমাধি ১৯২২ সালে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ববিদ হাওয়ার্ড কার্টার আবিষ্কার করেছিলেন। তার সমাধিতে সোনার মুখোশসহ মূল্যবান সব ধন-রত্ন উদ্ধার করা হয়। যা প্রাচীন মিশরের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই সমাধিরে সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি মারাত্মক অভিশাপ।

jagonews24

এই সমাধি উদ্ধারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কার্টারের ১২ সদস্য। এ ছাড়াও এই উদ্ধারকাজে অর্থায়ন করেছিলেন কর্নারভনের পঞ্চম আর্ল জর্জ হার্বার্ট। এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে রক্তের বিষক্রিয়াতে মারা গিয়েছিলেন তিনি। কার্টার অবশ্য পরবর্তী ১৬ বছর বেঁচে ছিলেন।

‘অ্যামিটিভিল হরর’ হাউজ

নিউ ইয়র্কের অ্যামিটিভিলে ‘১১২ ওশান এভে’র বাড়িটি সত্যিকার অর্থেই ভুতুড়ে স্থান হিসেবে বিবেচিত। ১৯৭৪ সালের নভেম্বরে স্থানটি গণ-হত্যার নির্দশন পাওয়া যায়। এর এক বছর পরে, জর্জ এবং ক্যাথি লুটজ তাদের বাচ্চাদের সঙ্গে বাড়িটিতে ওঠেন।

jagonews24

তবে এক মাসেরও কম সময়ের মধেই তারা বাড়ি ছেড়ে চলে যান। তারা যেসব ভৌতিক বিষয়ে সম্মুখীন হয়েছিলেন; তা নিয়ে ১৯৭৭ সালে ‘দ্য অ্যামিটিভিল হরর’ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। এই নামেই ১৯৭৯ সালে একটি সিনেমা প্রকাশ পায়।

এই বাড়িটি এখনো রহস্যে ঘেরা। তবে ক্যাথি লুটজরা ছাড়ার পর জেমস ক্রোমার্টি বাড়িটি কিনেন। ১৯৭৭ সালে তবে তিনি ও তার পরিবার কোনো অতিপ্রাকৃত ঘটনার উদ্ধৃতি দেয়নি। তিনি ১০ বছর ধরে এ বাড়িতে বাস করেন। রিয়েল এস্টেটের ওয়েবসাইট জিলোডটকমের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালের অক্টোবরে সর্বশেষ বাড়িটি বিক্রি করা হয় সাড়ে ৯ লাখ ডলারে।

জেএমএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।