প্রিমিয়াম বাণিজ্য : অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে নতুন কোম্পানি
দেশের শেয়ারবাজারে একের পর এক দরপতন অব্যাহত রয়েছে। এরপরও থেমে নেই নতুন কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম বাণিজ্য। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিগুলো প্রিমিয়ামের নামে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে বাজারের কোটি কোটি টাকা বেরিয়ে জমা হয়েছে নতুন কোম্পানিগুলোর পকেটে। আর পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে (২০১১ থেকে ২০১৫-এর নভেম্বর পর্যন্ত) ৭৫টি নতুন প্রতিষ্ঠান (৬৫টি কোম্পানি ও ১০টি মিউচুয়াল ফান্ড) শেয়ারবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে উত্তোলন করেছে ছয় হাজার ২৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা। যার অভিহিত মূল্য (ফেস ভ্যালু) ছিল মাত্র দুই হাজার ৫৫৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে প্রিমিয়ামের নামে শেয়ারের অতিরিক্ত মূল্য নিয়েছে তিন হাজার ৪৬৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এবিএম মির্জা আজিজুর ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, নতুন কোম্পানি বাজারে আসার ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম নেবে এটা স্বাভাবিক, কিন্তু অতিরিক্ত নয়।
তিনি আরো বলেন, ‘ভালো কোম্পানি প্রিমিয়াম নিয়ে বাজারে আসবে, আর এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে প্রশ্ন হচ্ছে প্রিমিয়াম মাত্রা কতটুকু নির্ধারণ করা হবে। তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে মার্কেটে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’ এছাড়া কোম্পানির পিই রেশিওসহ অন্যান্য দিক বিবেচনা করে প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা উচিত। সেই সঙ্গে কোম্পানির রেকর্ড দেখে প্রিমিয়ামসহ বাজারে আসা কোম্পানিতে বিনিয়োগের পরামর্শ দেন তিনি।
এসইসির আইন অনুযায়ী কোনো কোম্পানি তার ক্যাটাগরি অনুসারে প্রিমিয়াম নিতে পারে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের দাবি এসইসির উচিত প্রিমিয়ামের একটি নির্দিষ্ট ছক বেঁধে দেয়া। যাতে করে কোম্পানিগুলো ইচ্ছা মতো প্রিমিয়াম না নিতে পারে।
ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করে বলেন, কোনো নীতিমালা না থাকায় কোম্পানির পরিচালনা পরিষদ ইচ্ছা মতো প্রিমিয়াম আদায় করার সুযোগ নিচ্ছে। পুঁজিবাজারে নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো অধিকহারে প্রিমিয়াম নির্ধারণের কারণে বিনিয়োগকারীরা প্রত্যাশিত মুনাফা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অধিক প্রিমিয়ামের কোম্পানিগুলোর আইপিওতে বিনিয়োগ করে প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। এ অবস্থায় শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে অতিরিক্ত প্রিমিয়াম নিয়ে আইপিও অনুমোদন বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে কোম্পানির আইপিও অনুমোদন নিয়েও কিছুটা প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাদের অভিযোগ, নতুন কোম্পানি আসার আগে ইস্যু ম্যানেজাররা কিছুটা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে আইপিও অনুমোদন নিয়ে আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। পরে সেই দামে শেয়ার কিনে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ বিষয়ে এআইবিএল ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী মো. গোলাম সারোয়ার ভুঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনতে হলে তাদের প্রিমিয়াম দিতে হবে। কারণ তাদের সম্পদ মূল্য বেড়েছে এবং বাজারে সুনাম আছে। তবে প্রিমিয়াম নেওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
এর মধ্যে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) এবং শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) পিই রেশিও দেখতে হবে। তবে যদি ইস্যু ম্যানেজাররা তথ্য ম্যানুপুলেট করে তাহলে কিছু করার নেই। তাই আইপিও অনুমোদনের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অধিক দায়িত্বশীল হতে হবে।
এসআই/এসকেডি/একে/পিআর