পৃথিবীর প্রথম যন্ত্রমানব যেভাবে সব কাজ করেন

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৩৪ এএম, ১৯ জানুয়ারি ২০২১

অডিও শুনুন

১৭ বছর বয়সে এক দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় তার দুটি হাত। এরপর একেবারে জড়বস্তুর মতো ঘরেই দিন কাটাতেন তিনি। তার নাম লেস বো। সৎ ভাইয়ের সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতার সময় তিনি পড়ে যান একটি বৈদ্যুতিক সংযোগের লাইনে। সেখান থেকে দুই হাত-পায়ে মারাত্মকভাবে কারেন্ট শক খান। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা জানান, ৫ বছরের মধ্যেই তিনি মারা যাবেন।

তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকরা তার পুড়ে যাওয়া হাত দুটি কেটে ফেলেন। জানিয়ে দেন, বো আর কোনোদিন হাঁটতেও পারবেন না। তার পা দুটি হাঁটার জন্য প্রস্তুত নয়। এরপর থেকে বো তার নতুন জীবনে হাত-পা ছাড়াই অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। সব সময়ই তার পাশে কাউকে না কাউকে প্রয়োজন হতো। নিজেকে জড়বস্তু ভেবে বো সব সময় হতাশায় ভুগতেন।

jagonews24

বর্তমানে লেস বো’র বয়স ৪০ বছর। তবে এখন তিনি স্বাভাবিকভাবে জীবন-যাপন করছেন যন্ত্রমানব হিসেবে। তিনি বিশ্বের প্রথম সাইবর্গ বা যন্ত্রমানব। মানুষ আবার যন্ত্রমানব হয় কীভাবে? এমন প্রশ্ন হয়তো অনেকের মনেই রয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, সত্যিই মানুষের শরীরে যন্ত্র স্থাপন করা সম্ভব। আর এটি প্রমাণ করেছেন জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্স ল্যাবরেটরির গবেষকরা। তারা লেস বোকে দুটি রোবোটিক হাত লাগিয়ে দেন।

বো তার যন্ত্রের হাত দুটির বিষয়ে বলেন, বর্তমানে আমার জীবনযাত্রা আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়ে গেছে। যদিও প্রথমে একটু সমস্যা হয়েছিল হাত দুটি ব্যবহার করতে। তবে এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এ হাত দিয়ে এখন যেকোনো জিনিস ওঠাতে-নামাতে পারি।

jagonews24

জন হপকিন্স হাসপাতালের ট্রমা সার্জন ডা. আলবার্ট চাই বলেন, হাত হিসেবে যন্ত্র প্রতিস্থাপনকে বলা হয় ‘টার্গেটেড মাসল ইনারভেশন’। হাতের বিভিন্ন কোষের সক্রিয়তার ওপর বিবেচনা করে এ ধরনের প্রতিস্থপান করা হয়। তার কাঁধে একটি সকেট তৈরি করেছেন চিকিৎসকরা। যন্ত্রের হাত দুটি ওই সকেটে সংযুক্ত করে দিলেই তা কাজ করে।

হাত দুটির মুভমেন্ট কিন্তু নির্ভর করে বো’র ওপর। তিনি এখন স্বাভাবিকভাবেই তার হাত দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজগুলো করতে পারেন। যন্ত্রের হাত পেয়ে বো অনেক খুশি। তার মতে, ছোটবেলার মতো এখন অনুভব করি। এখন পোশাক পরলেও আমাকে বেশ সুন্দর দেখায়।

jagonews24

যন্ত্রমানবের বিষয়ে ইসরায়েলের জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জুবাল নোয়া হারারি বলেন, মানুষ নিজেকে আগামী ২০০ বছরের মধ্যেই সাইবর্গ বা যন্ত্রমানবে রূপান্তর করতে সক্ষম হবে। দীর্ঘায়ু লাভের আশায় মানুষ শরীরে যন্ত্র বসিয়ে নিজেকে সাইবর্গ করে তুলবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি তীর্থ সিলিকন ভ্যালি হচ্ছে এমনই একটি স্থান; যেখানে সবাই বিশ্বাস করেন, সব সমস্যার সমাধান প্রযুক্তি দিয়েই করা সম্ভব। অনেক প্রতিষ্ঠানই মানুষের মধ্যে যন্ত্র বসিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন।

ম্যাজিক টেক/বিজনেস ইনসাইডার/জেএমএস/এসইউ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।