নিজের দেহকে যেভাবে মমি করেছেন সন্ন্যাসীরা!

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:০৫ এএম, ১৭ জানুয়ারি ২০২১

সন্ন্যাস জীবন লাভ করা অতোটা সহজ নয়। সংসার, পরিবারের মায়া কাটিয়ে যুগযুগ ধরে ধ্যানে মগ্ন থাকতে হয়। তবে জানেন কি? সন্ন্যাসীরা নিজের দেহটিকে মমি বানিয়ে রাখার এক রোমাঞ্চকর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যান। শুধু জাপান নয়, চীনসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও এর প্রচলন ঘটে।

তবে ধ্যানমগ্ন সন্ন্যাসের মমির সন্ধান সবচেয়ে বেশি মিলেছে জাপানের উত্তরে অবস্থিত ইয়ামাগাতা শহরে। ১১-১৯ শতাব্দী পর্যন্ত সেখানকার বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা নিজের দেহকে মমি করার রীতি অনুসরণ করতেন। যদিও জাপান সরকার বিষয়টি জানার পর তা নিষিদ্ধ করে দেয়।

কারণ বিষয়টিকে তারা আত্মহত্যা বলে মনে করেন। সেই নিষেধাজ্ঞার পরও এ রীতি একেবারে গায়েব হয়ে যায়নি। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা এরপরেও একই কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন বহুবার।

jagonews24

মমি নামটি শুনলেই সবার প্রথমে নিশ্চয়ই চোখে ভেসে ওঠে মিশরের পিরামিডের দৃশ্য! তবে ভাববেন না আবার জাপানের এ সন্ন্যাসীদের মমির মিল রয়েছে মিশরের মমির সঙ্গে। সাধারণত ধনী ফারাওদের মৃত্যুর পর তাদের দেহটিকে রাসায়নিক মাখিয়ে প্রস্তুত করা হতো, যাতে পচন না ধরে।

তবে জাপানের বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা এমন এক পদ্ধতি জানতেন, যাতে জীবিত অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে পরিণত হওয়া যায় মমিতে। একসময় তাদের শরীর নিষ্প্রাণ হয়ে যেত। বৌদ্ধ ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী, এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে আলোকপ্রাপ্ত হওয়া যায়। যাকে তারা ‘সোকুশিনবুৎসু’ বলেন।

যেভাবে নিজেদের মমি করতেন: তাদের মমি হওয়ার পদ্ধতি অনেক রোমাঞ্চকর। এজন্য তাদের কঠোর ডায়েট চার্ট মেনে চলতে হতো। প্রথমে সব খাবার ছেড়ে শুধু পানি, ফল, বাদাম এসব খেতেন তারা। ফলে শরীরের মেদ ঝরে যেত দ্রুত। পরের ধাপে সেসবও খাওয়া বন্ধ করে দিতেন।

jagonews24

তখন শুধু পাইন গাছের শেকড় ও ছাল-বাকল খেতেন। আর সেই সঙ্গে এক বিশেষ ধরনের চা। যা তৈরি হতো বার্নিশ গাছের বিষাক্ত রস দিয়ে। এ চা সন্ন্যাসীদের শরীরকে সব ধরনের জীবাণুর বিস্তার থেকে মুক্তি দিতো। বিষাক্ত চা নিয়মিত খাওয়ার পর মৃত্যুর পরেও তাদের শরীরে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়ত না। যে কারণে তাদের দেহেও পচন ধরত না।

শেষে যখন শরীর একেবারে মৃতপ্রায় অবস্থা হতো; তখন সেই শরীরকে মাটির নিচে এক কক্ষে রেখে দেওয়া হতো। সেই কক্ষের ভেতরেই ধ্যানমগ্ন অবস্থায় সমাধিস্থ হয়ে থাকতেন মমি হতে যাওয়া সন্ন্যাসী। সেখানে একটি বাঁশের চোঙার সাহায্যে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতেন তিনি। ওই ঘরে রাখা হত একটি ঘণ্টা। সেটি বাজিয়েই নিজের বেঁচে থাকার জানান দিতেন। একসময় আর সে ঘণ্টা বাজত না। তখন সবাই বুঝে নিতেন, তিনি আর বেঁচে নেই।

এরপর তার মুখের সামনে থেকে বাঁশের চোঙা সরিয়ে নেওয়া হত। ওই ঘরের দরজা বন্ধ রাখা হতো এক হাজার দিনের জন্য। নির্ধারিত দিন ফুরালে দেখা হতো, সেই সন্ন্যাসী মমি হয়ে গেছেন কি-না। পদ্ধতি সফল হলে সেই দেহ তুলে এনে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হতো। তবে সবসময় প্রক্রিয়া সফল হতো না। দেখা যেত, কোনো কোনো দেহে পচন ধরেছে। সেই দেহগুলো কবর দিয়ে দেওয়া হতো।

jagonews24

ধ্যানমগ্ন মমি সন্ন্যাসি: বৌদ্ধদের কাছে ধ্যানরত অবস্থায় মরে যাওয়া মমিদের কদর ছিল অনেক। তাদের ধারণা ছিল, ভবিষ্যতে আবার তারা জেগে উঠবেন। জাপানে গেলে এমন মমি দেখা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মমিটি শিন্নোকাই-শনিনের।

১৬৮৭ সালে জন্ম হয় তার। ৯৬ বছর বয়সে তিনি সিদ্ধান্ত নেন মমি হওয়ার। দৈনিচিবু মন্দিরে রয়েছে তার মমি। টানা ৪২ দিন নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে তিনি মমি হয়েছিলেন। সবচেয়ে তরুণ মমিটি ১৯০৩ সালের। বুক্কাই নামে এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর। ১৯৬০ সালে বিশেষজ্ঞরা তার দেহ পরীক্ষা করে চমকে উঠেছিলেন। এমনই চমৎকারভাবে সংরক্ষিত রয়েছে সেটি। আজও জাপানের বৌদ্ধ মন্দিরে ভিড় জমায় মানুষ এসব মমি দেখতে।

jagonews24

ঐতিহাসিকদের মতে, লিভিং বুদ্ধদের সংখ্যা পৃথিবীজুড়ে মাত্র ২৪টি। অথচ এ সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি সন্ন্যাসীর মমি রয়েছে বলে অন্যদের মত। জাপানেই সবচেয়েং বেশি লিভিং বুদ্ধের দেখা মেলে।

দ্য ভিনটেজ নিউজ/জেএমএস/এসইউ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।