বিস্ময় কিশোর রাব্বির সমুদ্রজয়ের গল্প

ফিচার ডেস্ক
ফিচার ডেস্ক ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৫০ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০২০

জুনায়েদ হাবীব

ভরদুপুরে রোদ আর সমুদ্রের তুমুল ঢেউ আছড়ে পড়ছিল সেন্টমার্টিনের তীরে। জমজমাট পরিবেশ দেখে না বোঝার উপায় নেই, কী হতে চলেছে এখন। সামনে এগোতেই দেখা গেল দেশের বাছাইকৃত সাঁতারুদের। সবার মধ্যে টানটান উত্তেজনা। অসংখ্য মানুষের উপস্থিতিতে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপের জেটি থেকে শুরু হয় বাংলা চ্যানেল সাঁতার প্রতিযোগিতা।

১৫তম আসরের আয়োজকরা জানান, ২০০৬ সালে প্রয়াত কাজি আব্দুল হামিদ এ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এরপর থেকেই প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ প্রতিযোগিতা। এ বছর দেশি-বিদেশি সাঁতারুদের অংশগ্রহণ ও সেন্টমার্টিনের বিনোদনপ্রেমী অসংখ্য মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। সাগরপথে দীর্ঘ ১৬ কিলোমিটার রোমাঞ্চকর এ প্রতিযোগিতায় ৪৩ জন অংশগ্রহণ করলেও সাঁতার সম্পন্ন করেছেন ৪০ জন।

jagonews24

আয়োজক সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিপটন সরকার বলেন, ‘মাত্র ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিটে প্রথম হয়েছেন বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ সাঁতারু রাব্বি রহমান। দীর্ঘদিন ধরে এ আয়োজন দেশ-বিদেশের সাঁতারুদের এক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। রাব্বিদের মতো কিশোররাও ভবিষ্যতে দেশের জন্য ভালো কিছু করুক- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

যেভাবে প্রথম হলেন রাব্বি: বগুড়া জেলার ফুলবাড়ি এলাকায় বসবাসরত বড় দুই বোনের পর রাব্বি। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান রাব্বি রহমান প্রচণ্ড মেধাবী। তাদের গ্রামের সুবিল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ছেন। ১৩ বছর বয়সী এ কিশোর বঙ্গোপসাগরে অনুষ্ঠিত ১৫তম বাংলা চ্যানেল সাঁতারে সবার আগে সাঁতার সম্পন্ন করে রেকর্ড গড়েন।

সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অংশ নেওয়া বাঘা বাঘা সাঁতারুদের পেছনে ফেলে কম সময়ে অর্জন করলেন এ সম্মান। তবে সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াটাও তার কাছে স্বপ্নের মত ছিল। প্রথম হওয়া তো পরের কথা।

রাব্বি জানান, তার বাবা আলালুর রহমান এলাকার প্রসিদ্ধ সাঁতারু। একসময় সারাদেশের সব সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ছুটে যেতেন। ফিরতেন স্বর্ণ ও ব্রঞ্জের পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা নিয়ে। তার সাগর জয়ের নেশায় একসময় পরিবারে আর্থিক সংকট দেখা দেয়। তবুও থেমে থাকেননি। দীর্ঘসময় সাঁতারবিদ্যা আয়ত্ত করে গড়ে তোলেন সাঁতার প্রশিক্ষণকেন্দ্র।

jagonews24

বাবা আলালুর রহমানের শখ, নেশা আর স্বপ্ন নিজের কাঁধে নিতে চেয়েছিলেন রাব্বি। তাই বাবা কখনোই বাধা দেননি। উল্টো আরও বেশি সহযোগিতা করেছেন। তবে বাবার মত সাঁতারু না হওয়ার বিপক্ষেই ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। তাতেও থেমে যাননি বাবা-ছেলে।

রাব্বি রহমান বলেন, ‘বাংলা চ্যানেল সাঁতার প্রতিযোগিতা অনেক কঠিন। কখনোই ভাবিনি, আমি এখানে প্রথম হতে পারবো। বাবার আগ্রহ, আমার মনোবল আর সাধনা প্রথম হওয়ার জায়গা করে দিয়েছে। আপনাদের দোয়ায় ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চাই।’

এসইউ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।