বলাৎকারে ব্যর্থ হয়েই হত্যা করা হয়েছিল শিশু রাজনকে
`চুরির দায়ে নয়, বলাৎকারে ব্যর্থ হয়েই হত্যা করা হয়েছিল শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনকে। আর হত্যার দায় থেকে বাঁচতেই চুরির অপবাদ দেয়া হয়েছিল।’
সোমবার সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে এমন কথা জানালেন রাজন হত্যা মামলার আলোচিত সাক্ষী স্থানীয় ইউপি সদস্য গিয়াস উদ্দিন ওরফে গিয়াস মেম্বার। গিয়াস ছাড়াও সোমবার বেলা ১টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত আরও তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন মহানগর দায়রা জজ মো. আকবর হোসেন মৃধা।
রাজন হত্যা মামলায় মোট ৩৮ সাক্ষীর মধ্যে এ পর্যন্ত ২১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হল। এছাড়া মঙ্গলববার ও বুধবার সাক্ষ্যগ্রহণ করবেন আদালত। এ মামলায় আরও ১৭ জনের সাক্ষগ্রহণ করা হবে।
রাজন হত্যার পরপরই আসামিদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা ও অর্থের বিনিময়ে পুলিশের মাধ্যমে আপোস কারার চেষ্ঠার অভিযোগ ওঠেছিল এই গিয়াস মেম্বারের বিরুদ্ধে। কামরুলকে সৌদি আরবে পালাতে গিয়াসই পুলিশের সঙ্গে মধ্যস্থকারীর ভূমিকা পালন করেন বলেও অভিযোগ ওঠে।
পুলিশের উচ্চপর্যায়ের তদন্তে হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে গিয়াস মেম্বারের সম্পৃক্ততার প্রমাণও পাওয়া যায়। পুলিশের ওই তদন্ত প্রতিবেদনেও গিয়াস মেম্বারের নাম ওঠে আসে। এরপর অজ্ঞাত কারণে তাকে সাক্ষী করে আদালতে চার্জশিট দেয় ডিবি পুলিশ।
এদিকে, রাজনকে বলাৎকারের ব্যর্থ হয়ে হত্যার অভিযোগ শুরু থেকেই ছিল। কুমারগাঁও এলাকার নৈশপ্রহরী চৌকিদার ময়না রাজনকে একা পেয়ে বলাৎকারের চেষ্টা করে। এতে ব্যর্থ হয়ে রাজনের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনে মারধর শুরু করে।
একপর্যায়ে চোর ধরার কথা বলে কামরুলসহ তার ভাইদের খবর দিয়ে আনে ময়না। তারা এসে রাজনের ওপর বর্বর নির্যাতন চালায়।
সোমবার আদালতেও এমন সাক্ষ্য প্রদান করেন গিয়াস মেম্বার। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. মসরুর আহমদ চৌধুরী শওকত জাগো নিউজকে বলেন, `আদালতে গিয়াস মেম্বার বলেছে, ভোরে সবজি বিক্রি করতে আসা রাজনকে একা পেয়ে বলাৎকারের চেষ্টা চালায় চৌকিদার ময়না। এতে রাজন বাধা দিলে চুরির অপবাদ দিয়ে তাকে নির্যাতন চালানো হয়।’
অ্যাড. শওকত বলেন, প্রথমে গিয়াস মেম্বার আসামিদের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়া শুরু করেছিল। তখন বাদীপক্ষের আইনজীবীরা তাকে বৈরী ঘোষণা করলে তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে সাক্ষ্য দেন।
এর আগে সকালে রাজনের বাবা শেখ আজিজুর রহমান ওরফে আলম আদালতপাড়ায় সাংবাদিকদের কাছে গিয়াস মেম্বারের বিরুদ্ধে সাক্ষীদের হুমকি প্রদানের অভিযোগ তোলেন।
রাজন হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের ষষ্ঠ দিনে সোমবার গিয়াস মেম্বারসহ আরো তিন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেন। গিয়াস মেম্বার ছাড়াও শহরতলির কুমারগাঁও এলাকার কুরবান আলী, আফতাব মিয়া ও আবদুল করিম সাক্ষ্য দেন।
আলোচিত এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ উপলক্ষে সোমবার সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক থাকা ১০ জন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।
আসামিরা হলেন, শহরতলির কুমারগাঁও এলাকার শেখপাড়া গ্রামের মুহিত আলম ওরফে মুহিত, তার সহোদর আলী হায়দার ওরফে আলী, চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়না, টুকেরবাজার ইউনিয়নের পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের বাসিন্দা ও ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর আহমদ ওরফে নুর মিয়া, দুলাল আহমদ, আয়াজ আলী, তাজউদ্দিন বাদল, ফিরোজ মিয়া, আছমত আলী ওরফে আছমত উল্লাহ ও রুহুল আমিন ওরফে রুহেল।
গত ২২ সেপ্টেম্বর পলাতক আসামি সৌদি প্রবাসি কামরুলসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে মামলার চার্জ গঠন করা হয়। আসামিদের মধ্যে কামরুলসহ তিনজন পলাতক রয়েছেন।
গত ৩১ আগস্ট সৌদি আরবে আটক কামরুলসহ পলাতক তিন আসামির বিরুদ্ধে পত্রিকা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময়সীমার মধ্যে পলাতকরা আদালতে হাজির না হওয়ায় বিচারিক কাজ শুরুর লক্ষে মামলাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করেন।
গত ২৪ আগস্ট একই আদালত পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী পরদিন ২৫ আগস্ট জালালাবাদ থানা পুলিশ পলাতক তিন আসামির মালামাল ক্রোক করে।
প্রসঙ্গত, গত ৮ জুলাই সিলেট শহরতলির কুমারগাঁওয়ে শিশু সামিউল আলম রাজনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার ২৮ মিনিটের ভিডিও চিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
ছামির মাহমুদ/এআরএ/পিআর