যাতায়াতে অনুন্নত এক দ্বীপের করুণ কাহিনি

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক সন্দ্বীপ (চট্টগ্রাম)
প্রকাশিত: ০৪:৩১ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০

জাতীয় উন্নয়ন অগ্রগতির অপার সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে। সন্দ্বীপের পশ্চিম অংশে জেগেছে বিশাল চর, যা কাজে লাগাতে পারলে উন্নত জনপদ হতে পারে সন্দ্বীপ। জাতীয় অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে বিশদ সম্ভাবনার এ জনপদের প্রধান অন্তরায় সনাতনী যাতায়াত। প্রতিদিন সন্দ্বীপ-গুপ্তছড়া-চট্টগ্রামের কুমিরা ঘাট দিয়ে প্রায় ৫ হাজার মানুষ কাদা-মাটি মাড়িয়ে যাতায়াত করে।

সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে সাগরের তলদেশ দিয়ে গত বছরের নভেম্বর থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছে সন্দ্বীপবাসী। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর বিদ্যুৎ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা তারা। চারদিকে সাগরবেষ্টিত দ্বীপ উপজেলাটি দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। তাই ব্লক দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ হচ্ছে। দেলোয়ার খাঁ সড়ক (মেইন রোড) প্রশস্তকরণের কাজও চলমান। আরসিসি জেটি নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। ফায়ার সার্ভিস স্টেশন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। সন্দ্বীপকে অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের। এতো সব উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করে রেখেছে শুধু নিরাপদ নৌ যাতায়াত না হওয়ায়। সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাট থেকে চট্টগ্রাম পৌঁছতে ১৫ কিলোমিটার সাগর পাড়ি দিতে হয় অনিরাপদ নৌযানে। প্রতিনিয়ত সন্দ্বীপের বাসিন্দাদের উপেক্ষা করতে হয় মৃত্যুর চোখ রাঙানি।

বিশেযজ্ঞদের দাবি, স্বাধীনতার পর গত পাঁচ বছরে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হলেও শুধু অনিরাপদ নৌ-যাতায়াতের কারণে সবকিছু ধূলিস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে অনিরাপদ নৌ-যাতায়াতের কারণে।

jagonews24

 

যথাসময়ে চিকিৎসকের কাছে পৌঁছতে না পেরে কেউ চোখ হারিয়েছেন। সংকটাপন্ন বহু প্রসূতি মাকে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে নিতে গিয়ে জীবিত অবস্থায় স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। অনেক মা আবার নদীর মাঝে ট্রলারে সন্তান প্রসব করে মৃত্যুবরণ করেছেন। সন্দ্বীপে এমন হাজারো ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়। মূল ভূখণ্ড থেকে অনেক দূরে চারদিকে জলরাশি বেষ্টিত এ দ্বীপের যাতায়াত ব্যবস্থার কাছে মানুষ যেন অসহায়। প্রাকৃতিক নানামুখী প্রতিকূলতায় বিপন্ন এই মানুষগুলোর চিকিৎসা সেবা নিয়তিনির্ভর শুধু অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে।

যথাসময়ে চিকিৎসকের কাছে পৌঁছতে না পেরে চিরদিনের জন্য ডান চোখটি হারিয়েছেন ঘাট শ্রমিক নিজাম উদ্দিন। নিজের চোখ হারিয়ে তার এখন আর তেমন কোনো দুঃখ নেই। তার দাবি, আর কাউকে যাতে এভাবে চোখ হারাতে না হয়, সে ব্যবস্থা যেন সরকার গ্রহণ করে।

নিজামউদ্দিন জানান, ঘাটে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে ট্রলার থেকে বস্তা নামানোর সময় তার ডান চোখে আঘাত লাগে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি চলে চান সন্দ্বীপের উত্তরপ্রান্তে গাছুয়ায় অবস্থিত উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তাকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য গুপ্তছড়া ঘাটে গিয়ে কোনো যানবাহন পেলেন না, রাত হয়ে যাওয়ায়। সেই চোখ নিয়ে বাড়ি চলে আসেন। পরদিন একটি বালুর ট্রলারে চট্টগ্রামে চক্ষু ডাক্তারের কাছে পৌঁছতে বিকেল গড়িয়ে যায়। ডাক্তার জানান, এ চোখ ভালো করার কোনো সুযোগ নেই।

শুধু মূল ভূখণ্ডের সাথে অনিরাপদ নৌ-যাতায়াতের কারণে এমন দুর্বিষহ কষ্ট সন্দ্বীপবাসীর। বারবার নৌ-দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি ঘটে; তবুও নিরাপদ হয়নি যাতায়াত ব্যবস্থা। ২০১৭ সালের ২ এপ্রিল ১৮ জনের সলিল সমাধি আজও কাঁদায় সন্দ্বীপবাসীকে। শুধু তাই নয়, সন্দ্বীপ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে প্রয়াত সাংসদ দ্বীপবন্ধু মুস্তাফিজুর রহমানের মা, বোনও মৃত্যুবরণ করেছেন।

jagonews24

কলেজছাত্র জোবায়ের হোসেন রাজু বলেন, ‘বর্ষাকালে সন্দ্বীপ চ্যানেল খুব বেশি উত্তাল থাকে। ফিটনেসবিহীন স্পিডবোটে মৃত্যুর চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে আমাদের আসা-যাওয়া করতে হয়। আমরা নিরাপদ নৌযান চাই।’

সম্মিলিত সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসানুজ্জামান সন্দ্বীপি বলেন, ‘বর্তমান জনবান্ধব সরকার অবহেলিত সন্দ্বীপের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করেছে। আমরা বিদ্যুৎ পেয়েছি, যা ছিল অকল্পনীয়। সরকারে সব উন্নয়ন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে অনিরাপদ নৌ-যাতায়াতের কারণে।’

সন্দ্বীপের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা বলেন, ‘সন্দ্বীপে যাতায়াত ব্যবস্থার দুর্ভোগ লাঘবে আমি কাজ করে যাচ্ছি। জরুরি প্রয়োজনে রাতের বেলায়ও যাতে মানুষ সাগর পাড়ি দিতে পারে, সেজন্য বয়াবাতি দেওয়া হবে। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে নৌ-যাতায়াত নিরাপদ করা হবে।’

এসইউ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।