পাঠকের পছন্দের বই বাড়ি পৌঁছে দেন সুনীল
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম কুমরিয়া। গ্রামটি উপজেলার কলাবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমানায় অবস্থিত। ইউনিয়নের নলুয়া গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রায় ২ কিলোমিটার বিধ্বস্ত সড়ক পাড়ি দিয়ে এ গ্রামে যেতে হয়। যেখানে হাজার দুয়েক লোকের বসবাস। তাদের মধ্যে একজন সুনীল কুমার গাঙ্গুলী। তিনি অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। উপজেলা সদর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৫ বছর শিক্ষকতা করেছেন। দীর্ঘ শিক্ষকতার জীবনে অনেক ছাত্রছাত্রীর মাঝে তিনি জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন।
অবসর নেওয়ার পর ২০১৪ সালে নিজ বাড়ির পাশে একক প্রচেষ্টায় গড়ে তোলেন চন্দ্রিকা জ্ঞান পাঠাগার। তার পাঠাগারে ৬ শতাধিক বই রয়েছে। তবে এ বই নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট নন। তার ইচ্ছা- পাঠাগারটি বইয়ে বইয়ে ভরে উঠুক। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে তা পারছেন না বলে জানান তিনি।
দেখা গেছে, পাঠাগারে তেমন কোন আসবাবপত্র না থাকায় অনেক মূল্যবান বই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই ঝেড়ে-মুছে নিজের সন্তানের মতো বইগুলো আগলে রাখেন। অন্যান্য পাঠাগারের চেয়ে এটি একটু ব্যতিক্রম। এখানে কোন চেয়ার-টেবিল নেই। পাঠক সমাগমও তেমন নেই। সুনীল গাঙ্গুলী বইয়ের তালিকা নিয়ে পাঠকদের দ্বারে দ্বারে ছুটে যান। যার যে বই পছন্দ হয়, পর দিন তার কাছে বইটি দিয়ে আসেন।
বই পড়া শেষ হলে তিনি গিয়ে বইটি নিয়ে আসেন। বিনিময়ে কারো কাছ থেকে কোন টাকা নেন না। যদি কেউ খুশি হয়ে টাকা দেন, তা জমিয়ে নতুন বই কেনেন। তবে চাহিদামতো বই না থাকায় দিন দিন পাঠক কমে যাচ্ছে। বর্তমানে পাঠাগারে সহস্রাধিক পাঠক রয়েছেন।
নিয়মিত পাঠক ঘাঘর বাজারের হোমিও চিকিৎসক প্রেম রঞ্জন মণ্ডল বলেন, ‘আমি ৫ বছর ধরে পাঠাগারের নিয়মিত পাঠক। প্রায় ২০ কিলোমিটার দূর থেকে এসে সুনীল গাঙ্গুলী আমাকে বই দিয়ে যান। পড়া শেষ হলে নতুন বই দিয়ে পুরাতন বইটি নিয়ে যান। বিনিময়ে কোন টাকা-পয়সা নেন না।’
সুনীল কুমার গাঙ্গুলী বলেন, ‘ছাত্রজীবনে বইপড়ার প্রচুর শখ ছিল। তখন অর্থাভাবে বই কিনে পড়তে পারিনি। সেখান থেকেই ইচ্ছা ছিল একটি পাঠাগার করার। চাকরি জীবনে এ ইচ্ছা পূরণ হয়নি। অবসর নিয়ে সে ইচ্ছা পূরণ করেছি। কিন্তু এখনো ইচ্ছানুযায়ী বই সংগ্রহ করতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘পাঠাগারে বই ও আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে আবেদন করেছি। কিন্তু কেউ সহযোগিতার হাত বাড়াননি। আমি চাই এলাকার বিত্তবানরা এগিয়ে আসুক। পাঠাগারটি নিয়েই আমার এখন সব স্বপ্ন। আমি মৃত্যুর পরে পাঠাগার ও পাঠকের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সুনীল কুমার গাঙ্গুলীর কর্মকাণ্ড নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। আমি ব্যক্তিগত ও সরকারিভাবে চন্দ্রিকা জ্ঞান পাঠাগারে বই সরবরাহ থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা করবো।’
এস এম হুমায়ূন কবীর/এসইউ/এমকেএইচ