দুঃসময়ে পাশে থেকে সান্ত্বনা দেন মা

জুনাইদ আল হাবিব
জুনাইদ আল হাবিব জুনাইদ আল হাবিব
প্রকাশিত: ০৬:০১ পিএম, ১১ মে ২০১৯

মেঘনাপাড়ে জন্মেছেন মা। আমার মা হালিমা বেগম। একটা সুন্দর ডাকনামও আছে তার। নামটা মিনোয়ারা। সবাই ডাকেন মিনোরা বলে। শুনতেও বেশ মধুর লাগে। সমুদ্র উপকূলের নির্মল বাতাস, বৈচিত্র্যময় আলোর মাঝে বেড়ে ওঠা আমাদের। শৈশবে নানা বাড়িতে কাটিয়েছি বেশকিছু স্মৃতিময় সময়। একদিন দুষ্টুমির ছলে খেলতে গিয়েছিলাম নানার পানির কলে। দুর্ভাগ্যবশত পা পিছলে কপালটায় দাগ লেগেছে। সেটা এখনো মোছেনি। মায়ের কারণে নানাদের এলাকার নানা ও মামারা খুব স্নেহ করতেন।

মা নানার সংসারের দ্বিতীয় মেয়ে। আমি বাবার সংসারের দ্বিতীয়। এজন্য কেউ কেউ সঠিক দৃষ্টিকোণ থেকে বা যে আঙ্গিকেই বলুক, আমার চেহারা এবং শারীরিক গঠন নাকি মায়ের মতই। এটা খালা, নানি অনেকের মুখে শোনা। এখনো শুনি।

মায়ের জন্মস্থান লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের চর কালকিনির মোল্লাপাড়া গ্রামে। আমারও একই অঞ্চলের চর মার্টিন গ্রামে। মায়ের জন্মস্থান অবশ্য এখন মেঘনার বুকে। ভেঙেছে ৮ বছর আগে। ওই বাড়িতে থাকাকালে নদী বহুদূর দেখেছি। সেখান থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে। বলতে গেলে আজ ১৩ বছরের মতো সময় ধরে এ মেঘনার ভাঙন দেখেই চলছি।

নানা বাড়ি থাকাকালে নদী ভাঙনের পাঁচ বছর আগে নানা মৌলভী আবদুর রব (ছোট হুজুর) পৃথিবী ছাড়েন। নাতি হিসেবে তার আদরটাও বেশ মিস করছি। তিন বছর পর নানার কবর নদীতে ভেঙে যেতে থাকলে তার মৃতদেহ অক্ষত অবস্থায় সরিয়ে এক কিলোমিটার পূর্বে আবার দাফন করা হয়। দু’বছর পর আবারও কবরটিকে নদী গ্রাস করলে আবারও মৃতদেহ অক্ষত অবস্থায় জেলা সদরের মিয়ারবেড়ী বড় খালাদের বাড়িতে দাফন করা হয়।

আমরা যখন ছোট; তখন মা-ই বেশি দেখাশোনা করতেন আমাদের। বড় হতে থাকলে পড়াশোনার কথা চিন্তা করে আব্বু ঢাকা থেকে ফিরে এলেন। পৃথিবীর বুকে আগমনের পর প্রত্যেক মা কীভাবে লালন-পালন করে, সে গল্পটা সবারই জানা। ছোটবেলায় এ আদরটা সবার থেকে আমি বেশিই পেয়েছি। কারণ আমার আগের দুই ভাই-বোন একই দিনে মারা যান।

mother-in

আমার নাম রেখেছেন সুজন। নামটাও একটা আদর আদর ভাব। পরে অবশ্য আমার চাচাতো ভাই হেলালের জন্ম হলে বেলাল হয় আমার নাম। অন্যদিকে কাগজ-কলমে কারা যেন জুনাইদ আল হাবিব নামটা বসিয়ে দিলেন। নানা না-কি আব্বু, ঠিক মনে নেই। এখন এটাই চলছে বেশ।

পড়াশোনার শুরুটা মায়ের কোলেই। বিশেষ করে কোরআন শরীফের সুরা মুখস্ত করান তিনি। পরে অবশ্য আব্বুর কাছে মক্তবে কোরআন শিখি। আব্বু আবদুল হাদি। বয়সটা ঠিক ৬০ এর কাছাকাছি। আব্বু একজন শিক্ষক ও ইমাম। তাঁর কাছেই মাদ্রাসায় পড়েছি দু’বছর। পরে শিক্ষাজীবন স্কুলের দিকে মোড় নেয়। সকালে স্কুলে গিয়ে বাড়ি ফিরি দুপুরে। তবে কলেজ জীবনে সকালে বের হলে ফেরা হয় সন্ধ্যায়। পুরো সময়টাজুড়েই চিন্তার সাগরে ডুবে থাকেন মা।

বাড়ি ফিরে দেখি প্লেটে ভাত ও তরকারি তৈরি রেখেছেন। যেন বিড়ম্বনার শিকার হতে না হয়। কথাগুলো যখন লিখছি, তখনও মায়ের ডাক, ‘কিরে ভাত খাবি না?’ এই মায়ের ভালোবাসা পাই, এটাই বিশেষ অনুভূতি আমার। জীবনে যখন হতাশা দানা বাঁধে; তখন মায়ের কাছে পাই সান্ত্বনা, পাই অনুপ্রেরণা। এটাই কাজের শক্তি। খুশির সংবাদে তার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে আনন্দাশ্রু।

অসুখ-বিসুখ, নানা দুশ্চিন্তা যখন শরীরকে আকড়ে ধরে; তখন মা পথচলার শক্তি সঞ্চার করেন। তাই মাকে ছাড়া জীবন কাটানো আমার পক্ষে অসম্ভব। পড়ালেখার খাতিরে বেশ কয়েকমাস জেলা শহরেই অবস্থান করতে হয়েছিল আমাকে। যার মায়ায় প্রতি সপ্তাহেই আমাকে বাড়িতে যেতে হয়েছে। মাকে কাছে না পেলে আমার মনটা হাঁপিয়ে ওঠে। কাছে পেলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি।

একদিন গাছ থেকে মায়ের শরীরের ওপর ১০-১২টি নারিকেল পড়ে। সে সময় মায়ের কষ্টগুলো দেখেছি। সে কথা মনে পড়লে আমার বুক ধড়ফড় ধড়ফড় করে ওঠে। মায়ের বিপদ কোন সন্তানের কাছেই কাম্য হতে পারে না। মায়েরাও তা-ই চান।

ক’দিন আগে লেখার বিনিময়ে সম্মানি পেয়ে সর্বপ্রথম মাকে মিষ্টি মুখ করাই। টেলিভিশনের পর্দায় আমাকে দেখানোর ভিডিওটা দেখাই মাকে। মা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। সবসময় দোয়া করেন, যেন ভালো পথ ধরতে পারি। সবসময় নামাজ পড়তে তাগিদ দেন। মা আমার এগিয়ে চলার শক্তি। আমার মা ভালো থাকুক। মা হোক সব সন্তানের জান্নাতের ব্র্যান্ড। মা আমাদের ভালোবাসা।

এসইউ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।