পুরুষের স্তন ক্যান্সার বাড়ছে
শুধুমাত্র নারীদের মধ্যে নয়। পুরুষদের স্তন ক্যান্সারও বাড়ছে। এ জন্য দায়ী করা হচ্ছে বদলে যাওয়া অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনকে। কারণ, পরিবর্তিত জীবনযাপনে নিয়ন্ত্রণ আনতে সমর্থ হলেই ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে এড়ানো সম্ভব স্তনের ক্যান্সার। অথচ, সাধারণ মানুষের মধ্যে সেভাবে সচেতনতাও বাড়েনি। যার জেরে, বিশেষত শহরাঞ্চলে বাড়ছে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা। আর যে কারণে, পুরুষদের মধ্যেও এখন আগের তুলনায় স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে।
পুরুষদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার কত শতাংশ হারে বাড়ছে, সে বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে কোনো সমীক্ষা অবশ্য এখন পর্যন্ত হয়নি। যদিও, নারী এবং পুরুষ মিলিয়ে যত সংখ্যক আক্রান্ত স্তনের ক্যান্সারে, তার মধ্যে মাত্র এক শতাংশ রয়েছেন পুরুষরা। তবে, এ শহরের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেম্বারে বর্তমানে এমন অনেক পুরুষ রোগী আসছেন, যাঁরা স্তনের ক্যান্সারে আক্রান্ত।
সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য যেমন কোনও কোনও ক্ষেত্রে স্তনের ক্যান্সারে আক্রান্ত পুরুষ রোগী ডাক্তারের কাছে আসছেন। তেমনই, বদলে যাওয়া অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে স্তনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন, এমন বহু পুরুষ রোগীও তাঁদের চেম্বারে ভিড় করছেন বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কান্সার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মেডিক্যাল ডিরেক্টর আশিস মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘গত কয়েক বছরে দেখা যাচ্ছে কলকাতায় পুরুষদের মধ্যেও স্তনের ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এর পিছনে জিনগত কারণ যেমন রয়েছে। তেমনই, পুরুষদের স্তনের ক্যান্সারের জন্যেও ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রেই দায়ি বদলে যাওয়া অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে পারলে পুরুষরাও এড়াতে পারেন স্তনের ক্যান্সার।’
এক সময় এমনও হয়েছে, স্তনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন কোনও পুরুষ, অথচ তা নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। তবে, সচেতনতার জন্য এখন অনেক পুরুষের ক্ষেত্রে তাঁদের স্তনের ক্যান্সার দ্রুত নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে, চিকিৎসার মাধ্যমে তাঁরা সুস্থও হয়ে উঠছেন।
এ কথা জানিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘কলকাতায় পুরুষদের স্তনের ক্যান্সার আগের তুলনায় এখন বেশি দেখা যাচ্ছে। পুরুষদের স্তন স্বাভাবিকভাবেই আকারে ছোট। যে কারণে, পুরুষদের স্তনে কোনওরকম টিউমার হলে, তা সহজে নির্ণয়ও করা সম্ভব হয়। আর এ সবের জন্যই কোনও পুরুষ স্তনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেও, বহু ক্ষেত্রেই তাঁর চিকিৎসাও দ্রুত শুরু করা সম্ভব।’
নিয়মিত ফাস্ট ফুড খাওয়া এবং মদ্যপান ও ধূমপানসহ তামাকজাত বিভিন্ন দ্রব্য সেবনের মতো বিষয়গুলি যেমন রয়েছে বদলে যাওয়া অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের মধ্যে, তেমনই রয়েছে অতিরিক্ত নোনতা খাবার খাওয়া, পরিমাণের কম জল পান করা, নিয়মিত শরীর চর্চা না করার মতো বিষয়গুলিও। বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার মিলিয়ে বর্তমানে গোটা বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা যতজন, তার ১০ ভাগের এক ভাগ রয়েছেন এ দেশে।প্রতি বছর ভারতে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার মিলিয়ে নথিভুক্ত আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে এখন আট থেকে ১০ লক্ষ করে। এই সংখ্যা এ রাজ্যে ১৪ হাজার এবং কলকাতায় তিন হাজার।বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার মিলিয়ে বর্তমানে এ রাজ্যে নথিভুক্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮ হাজার। আর, কলকাতায় এই সংখ্যা ১২ হাজার।
কাজেই, যেভাবে বদলে যাওয়া অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের জন্য কলকাতায়ও পুরুষদের মধ্যে স্তনের ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাতে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকরা। স্বাভাবিকভাবেই, ক্যান্সার এড়াতে তাঁরা আরো বেশি সচেতনতার ওপরই গুরুত্ব দিচ্ছেন।