কোথায় তুমি ঈদ অানন্দ


প্রকাশিত: ০৩:১১ এএম, ০৬ অক্টোবর ২০১৪

শেরিফ অাল সায়ার

ছোটবেলায় ঈদ ছিল অন্যরকম। এখনও মনে হচ্ছে, ঈদের মানেই ছিল স্কুল বন্ধ। মানে পড়াশোনাও বন্ধ। অাব্বু অার পড়া দিবে না, পড়া নেবে না। এর চেয়ে অানন্দ অার কী হতে পারে?

রোজার ঈদের চেয়ে কোরবানির ঈদ ছিল সবচেয়ে অন্যরকম। ছোটবেলায় ঈদের ১ সপ্তাহ অাগে থেকেই ঘ্যানর ঘ্যানর করতাম অাব্বুর কাছে। বারবার বলতাম, “অাব্বু প্লিজ তাড়াতাড়ি গরু কিনে ফেলো। অামরা গরুটাকে একটু বেশিদিন অাদর করবো।”

কিন্তু অাব্বু কোনোভাবেই অাগে গরু কিনতেন না। ঈদের ১ দিন অাগে সন্ধ্যায় অাব্বু হাটে যেত। অামি অার অামার বোন দুজনেই অপেক্ষা করতাম কখন অাব্বু গরু নিয়ে ফিরবে। অামরা তখন সরকারি বাসায় থাকতাম। সব ধরনের গাছ ছিল। ফুল গাছের মধ্যে ছিল গোলাপ অার বেলি ফুলের গাছ। অামার বোন গরুর জন্য বেলি ফুলের মালা বানাতো।

গরু অাসলেই অামরা বলবো, “গরুটাকে মালা পরিয়ে দাও।” দেখা যেত অাব্বু অাসতো অনেক রাতে। অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়েও যেতাম। তারপর অাম্মু ঘুম থেকে জাগিয়ে দিত গরু দেখার জন্য। অামরা ঘুম থেকে উঠে দৌঁড়ে চলে অাসতাম।

তখন ভাইয়াকে বলতাম, “ভাই প্লিজ মালাটা গরুকে পরিয়ে দাও না।” ভাইয়াও ভয় পেত। যদি গরু গুতো দেয়। শুধু দুই ভাই-বোনের দিকে তাকিয়ে মালাটা পরানো জন্য চেষ্টা করতো গরুর সঙ্গে ভাব জমাতে। গরুর গলায় অাদর করলে নাকি গরু বশ মেনে যায়। ভাইয়া অনেকক্ষণ গরুর গলায় চুলকিয়ে অাদর করে ভাব জমাতো। অার মালাটা পরিয়ে দিত। সে কি খুশী অামরা! অামাদের বাসার সঙ্গেই ছিল বিশাল মাঠ। নাম ছিল খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতির মাঠ। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ভাইয়ার সামনে অাবার ঘ্যানর ঘ্যানর। অার বলতাম, “ভাই প্লিজ চলো না গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যাই।”

ভাইয়া তখন ঘুমে অচেতন। খুব বিরক্ত হতো। একসময় বাধ্য হয়েই ঘুম থেকে উঠতো। তারপর রশি ধরে ভয়ে ভয়ে নিয়ে যেত মাঠে। অামি ভাইয়ার পিছে পিছে ভয়ে যেতাম। ভাইয়াও ভয় পেত। যদি গরু ছুটে দৌঁড় দেয়? তাহলে তো অাব্বুর হাতের মার একটাও মাটিতে পড়বে না। তারপরও ভয়কে জয় করে ভাইয়া গরুর রশি শক্ত করে ধরে রাখতো।

একটু খাওয়ার পরই ভাইয়া বলতো, “হইছে চলো চলো। খাওয়া শেষ।” অামি বলতাম, “কই? হয় নাই। অারও খাবে।” জোর করে ভাইয়াকে অারও কিছু সময় রেখে দিতাম। মাঠ থেকে অাবার বাসার একটা গাছের সঙ্গে গরুকে বেধে রাখতো ভাইয়া। অার বলতো, “এ-ই বেশি কাছে যেও না। গরু চেতে গেলে গুতা দিবে কিন্তু।”

অামি অার অামার বোন এরপর সারাদিন গরুর সামনেই বসে থাকতাম। তারপর তো ঈদের দিন। সেদিন ছিল খারাপ লাগার দিন। প্রিয় গরুটাকে অাজ জবাই করে দেবে। ভাবতেই কষ্ট লাগতো। একটু যখন বড় হলাম। মানে ক্লাস সেভেন-এইটে উঠলাম। তখন খুব ইচ্ছা হতো অাব্বুর সঙ্গে হাটে যাবো। অাব্বু নিত না। সবসময় অামাকে ফেলে চলে যেত। অামার এখনও মনে অাছে অাব্বু বের হলেই অামি কেঁদে দিতাম। এ নিয়ে ভাইয়া অার অাপু অনেক হাসাহাসিও করতো।

একসময় হাটে যাওয়ার বয়স হলো। ততদিনে ভাইয়া বিদেশে, বোন ঢাকার বাইরে। অামি একা। ঈদের সব অানন্দ যেন পানসে হয়ে অাসলো। গরু কিনতে যাবো। হেঁটে হেঁটে অাসবো। এই উত্তেজনাও কমে অাসলো। মাঝে মাঝে মনে হয় জীবন বদলে যায়। ঈদের অামেজও বদলে যায়। সম্পর্ক বদলে যায়। কিন্তু বছরঘুরে ঈদ ঈদের মত করেই ফিরে অাসে। শুধু ফিরে অাসে না অামার ছোট্ট বেলার ঈদ অানন্দ।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।