পথশিশুদের মজার স্কুল

রিপন দে
রিপন দে রিপন দে মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ০৮:৪৮ এএম, ১৬ এপ্রিল ২০১৮

মজার স্কুল। নামের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে আনন্দ। আর সেই আনন্দের পরশেই বদলে যাচ্ছে পথশিশুদের জীবন। মজার স্কুলের শিক্ষার্থী কল্পনা, রিয়াজ, বাবু, শ্রাবণ, লিজা শ্রীমঙ্গলের সুবিধাবঞ্চিত শিশু। কারো বাবা-মা আছে, কারো নেই। সারা দিন ঘুরে ঘুরে কাগজ বা ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করা ওদের কাজ। ওদের শিক্ষার আলো দিয়ে সুন্দর জীবনে ফেরানোর জন্য কয়েক তরুণের উদ্যোগে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে চালু করা হয়েছে এ স্কুল।

jagonews24

শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন খোলা মাঠে পলিথিন বিছিয়ে করানো হয় ক্লাস। যারা পড়তে আসে, তারা অন্যসব স্কুলের মতো নিয়ম-কানুন মেনে চলে না। মেনে চলে না সাধারণ শিক্ষা পদ্ধতিও। ব্যতিক্রমধর্মী এই স্কুলে শিক্ষা দেওয়া হয় মজার ছলে। গল্প, গান, বিভিন্ন রকম মজার খেলার মাধ্যমে তাদের পড়াশোনা করানো হয়। স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, গণনা এখন সবার মুখস্ত, লিখতেও পারে। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ক্লাস করানো হয়। ক্লাসে আগ্রহ বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন নাস্তার ব্যবস্থা করা হয়।

jagonews24

জানা যায়, স্কুলটি ২০১২ সালে চালু হলেও ২০১৫ সালে বন্ধ হয়ে যায়। পরে আবার ২০১৭ সালে চালু হয়। এ স্কুলে পড়া পথশিশুদের প্রধান কাজ রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে বেড়ানো। বসবাস করে শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশন ও বিভিন্ন বস্তিতে। সারা দিন কাগজ কুড়ায়, ভিক্ষাবৃত্তি করে এবং ভয়ানক নেশা গ্রহণ করে। জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। এসব অবহেলিত শিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে ‘মজার স্কুল’।

স্কুলের শিক্ষক পিংকি দাশ, আর্য দেবব্রত, কেয়া পাল বলেন, প্রথম প্রথম ওরা খুবই উচ্ছৃঙ্খল ছিল। ওদের স্থির করাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। এদের পড়ানো অন্যদের চেয়ে কঠিন। তবে বহু দিনের প্রচেষ্টায় নিজেদের কিছু পদ্ধতির কারণে এখন তারা শান্ত হয়েই ক্লাস করছে।

jagonews24

শিক্ষার্থী বাবু, শ্রাবণ, লিজাসহ কয়েকজন জানায়, যে যেখানেই থাকুক না কেন। ক্লাসের সময় হলে তারা চলে আসে। স্কুলের সমন্বয়কারী তাপস দাশ জানান, আমাদের একটি ভালো ক্লাসরুম, প্রজেক্টর ইত্যাদি সরঞ্জাম থাকলে আরো ভালোভাবে পড়ানো যেত।

মজার স্কুলের তত্ত্বাবধায়ক প্রভাষক জলি পাল জানান, স্কুলের দায়িত্বে যারা রয়েছেন; তাদের সীমিত চাঁদায় স্কুল চালাতে কষ্ট হচ্ছে। তাই বিত্তবানদের সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।

jagonews24

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবাশশেরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘উদ্যোগটি ভালো। এদের যদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো যায়, তাহলে ভালো হয়। এজন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’

রিপন দে/এসইউ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।