প্রবল বর্ষণে ডিএনডির মানুষ চরম দুর্ভোগে


প্রকাশিত: ০৫:৫৬ এএম, ২৫ জুলাই ২০১৫

ঈদের আগের দিন থেকে অব্যাহত ভারী ও হালকা বর্ষণে ডিএনডির (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) অভ্যন্তরে আবারও ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে কৃত্রিম বন্যায় রূপ নিয়েছে।  এতে নিচু এলাকার পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষের ঈদের আনন্দও ম্লান হয়ে গেছে।  রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরসহ নানা স্থাপনা পানিতে ডুবে যাওয়ায় পানিবন্দি মানুষজন দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।  জলাবদ্ধতার শিকার লোকজন ঘরের ভেতরে পানি যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যস্ত রয়েছে।  

ডিএনডি’র নিচু এলাকায় স্থান ভেদে এক থেকে তিন ফুট পর্যন্ত পানিতে ডুবে আছে।  ডিএনডির পানি কমাতে ৪টি পাম্পই চালু রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিদ্ধিরগঞ্জের পাম্প হাউজের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম সারোয়ার।

বৃহস্পতিবার ডিএনডি পরিদর্শনে আসেন পরিকল্পনামন্ত্রী।  এসময় নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান পরিকল্পনা মন্ত্রীর সঙ্গে ডিএনডি পরিদর্শন করেন।

মন্ত্রী এসময় ডিএনডিতে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের আশ্বাস দেন এলাকাবাসীর কাছে।

ঈদের আগের দিন থেকে গত বুধবার পর্যন্ত বর্ষণের পানিতে ডিএনডির প্রজেক্ট অভ্যন্তরে আবারও ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।  এতে ডিএনডির নিচু এলাকায় পানি জমে কৃত্রিম বন্যায় রূপ নিয়েছে বলে ভূক্তভোগীরা জানান।  সাধারণত নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা পানিতে তলিয়ে গেছে।  ময়লা-আবর্জনা ও নর্দমার সঙ্গে বৃষ্টির পানি মিশে একাকার হয়ে পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠেছে।  অব্যাহত প্রবল বর্ষণে ঢাকার ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শ্যামপুর, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা থানার বহু নিচু এলাকার বাড়ি-ঘর ও রাস্তাঘাট বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।  এতে ডিএনডির অভ্যন্তরে বসবাসরত প্রায় কয়েক লাখ লোক আবারও পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।



মিজমিজি পূর্বপাড়ার আল-আমিন নগরের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, ঈদের আগের দিন থেকে শুরু হয়েছে বর্ষণ।  ফলে বর্ষণের পানিতে চলাচলের রাস্তাটিও ডুবে গেছে।  রাস্তায় এখনও হাটু সমান পানিতে তলিয়ে আছে।  ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে।

তিনি আরও জানান, আল-আমিন নগরে প্রতিটি বাড়িতেই বৃষ্টির পানি ঢুকেছে।  জালকুড়ি পূর্বপাড়ার বাসিন্দা শাহজাহান জানায়, তাদের উঠান এখনো হাটু সমান পানিতে ডুবে আছে। চলাচলের রাস্তাটিও পানিতে ডুবে গেছে।  তিনি ডিএনডি থেকে দ্রুত পানি নিষ্কাশন করার দাবি জানান।

এভাবেই ডিএনডি’র ৬টি থানার বিভিন্ন স্থানের নিচু এলাকার লোকজন পানিবন্দি হয়ে দুবির্ষসহ জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।  বিশেষ করে মধ্য ডিএনডি’র অবস্থা খুবই ভয়াবহ বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ঢাকা যান্ত্রিক পাম্প হাউজের (শিমরাইল পাম্প হাউজ) নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম সারোয়ার ডিএনডিতে জলাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে জানান, প্রধান নিষ্কাশন খালের ডিএনডির পাম্প হাউজের মুখে প্রতিনিয়তই পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল, কাপড়, বাজার ও বাড়ি-ঘরের ময়লা-আবর্জনা ও মরা গরুসহ বিভিন্ন মরা পশুপাখি ভেসে আসছে।  এতে পানি নিষ্কাশনে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।  ফলে মিল ফ্যাক্টরির বিষাক্ত কালো পানিতে শ্রমিক নামিয়ে সেই ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, ১৯৬৮ সালে বসানো পাম্প হাউজের ৫১২ কিউসেক ক্ষমতা সম্পন্ন ৪টি পাম্প দিয়ে যে পরিমাণ পানি শীতলক্ষ্যা নদীতে নিষ্কাশন করা হচ্ছে তার চারগুণ বেশি পানি নিষ্কাশন করতে পারলে ডিএনডিবাসী উপকৃত হতো।  

তিনি বলেন, ডিএনডির পাম্প হাউজের প্রধান নিষ্কাশন খালের পানির উচ্চতা রয়েছে ১০ ফুট ১০ ইঞ্চি।  যা শুষ্ক মৌসুমে থাকে ৬ ফুট থেকে সাড়ে ৬ ফুট।  

হোসেন চিশতী সিপলু/এমএএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।