চেক নিয়ে প্রতারিত হলে
ব্যাংকে রাখা টাকা তুলতে হলে গ্রাহককে চেক লিখতে হয়। সেই চেক গ্রাহক বা অন্য কেউ ব্যাংকে দেবার পর ব্যাংক চেকে উল্লিখিত অংকের নগদ টাকা দেয়। আধুনিককালের ক্রেডিট কার্ড এবং ক্যাশ কার্ডকেও চেকের একটি বিশেষরূপ বলা যায়।
চেক বিভিন্নভাবে লেখা যায়:
১. বাহক চেক: এসব চেক যেকোন বাহক ভাঙাতে পারে।
২. ক্রস চেক বা একাউন্ট পেয়ী চেক: এসব চেকে প্রাপকের নাম লিখে দেয়া হয় এবং সরাসরি তাকে টাকা না দিয়ে তার একাউন্টে জমা করা হয়। পরে প্রাপক নিজের চেক বইয়ের মাধ্যমে টাকা তুলতে পারেন।
৩. অগ্রিম চেক: এধরনের চেকে অগ্রিম তারিখ লিখে দেয়া হয় এবং নির্ধারিত তারিখের আগে টাকা তোলা যায় না।
চেক ডিজঅনার হওয়া:
চেকে উল্লিখিত অংকের টাকা একাউন্টে না থাকলে ব্যাংকের পক্ষে টাকা দেয়া সম্ভব হয় না এবং চেক প্রত্যাখ্যান করা হয়, যা চেক ডিজঅনার হওয়া নামে পরিচিত।
চেক ডিজঅনার হওয়া একটি অপরাধ:
ডিজঅনার হওয়া চেকের বাহক একাউন্টধারী নিজে হলে সেটা কোন অপরাধ নয়। কিন্তু যদি এমন হয় যে একাউন্টধারী অন্য কাউকে চেক লিখে দিলেন এবং সেটি ব্যাংকে প্রত্যাখ্যাত হল, তবে সেটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
১৮৮১ সালের নেগোশিয়েবল অ্যাক্টের ১৩৮ এবং ১৩৯ নম্বর ধারায় এ সংক্রান্ত ক্ষেত্রে শাস্তির বিধান করা হয়। পরে ২০০০ এবং ২০০৬ সালে সংশ্লিষ্ট ধারায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়।
আইনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক:
১. চেক লেখার সময় থেকে ছয় মাস পর্যন্ত চেকটির মেয়াদ থাকে। তবে মেয়াদ শেষে একাউন্টধারী তারিখ কেটে পুনরায় তারিখ লিখে সাক্ষর করে মেয়াদ বাড়াতে পারেন।
২. চেক ডিজঅনার হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে একাউন্টধারীকে চেক ডিজঅনার হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে চেকে উল্লিখিত অংকের টাকা প্রদানের দাবি জানাতে হয়। আর ত্রিশ দিনের মধ্যে দাবি না জানালে সেটি আইনের দৃষ্টিতে গ্রাহ্য হয় না।
৩. নোটিশ পাওয়ার ত্রিশ দিনের মধ্যে একাউন্টধারীকে টাকা পরিশোধ করতে হয়। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা যায়।
নোটিশ জারি:
সরাসরি প্রাপক বরাবর অথবা তার সর্বশেষ বসবাসের ঠিকানা কিংবা বাংলাদেশে তার ব্যবসায়িক ঠিকানা বরাবর প্রাপ্তি স্বীকারপত্রের ব্যবস্থাসহ রেজিস্টার্ড ডাকে নোটিশ পাঠাতে হয়। এছাড়া অন্তত একটি জাতীয় বাংলা দৈনিকে নোটিশটি বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করতে হয়।
শাস্তি:
আইনানুসারে এক বছরের কারাদন্ড এবং চেকে বর্ণিত অংকের তিন গুণ পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। অন্যান্য ফৌজদারী মামলায় জরিমানার টাকা সরকারী কোষাগারে জমা হয়, কিন্তু চেক ডিজঅনার মামলায় জরিমানার টাকা চেকের বাহক পান এবং জরিমানার মাধ্যমে চেকের টাকা আদায় না হলে দেওয়ানী মামলাও দায়ের করা যায়। কোন কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হলে সংশ্লিষ্ট যিনি দোষী সাব্যস্ত হবেন তাকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।
মামলা করা:
এ ধরনের মামলা একজনের পক্ষে আরেকজন করতে পারেন না। যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে চেক দেয়া হয়েছে কেবল তিনিই মামলা করতে পারেন। মামলা করার ক্ষেত্রে তারিখ খুব গুরুত্বপূর্ণ, চেক ডিজঅনার হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে নোটিশ পাঠাতে হয়। নোটিশ পাঠিয়ে ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হয়। এরপর ৩০ দিনের মধ্যে মামলা করতে হয়।