রোজায় ভিন্নস্বাদে রকমারি হালিম


প্রকাশিত: ০১:৪৭ পিএম, ৩০ জুন ২০১৫

রোজায় ইফতার আয়োজনে সাধারণত ভিন্নস্বাদের খাবারের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এটাই স্বাভাবিক। সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে বিভিন্ন রসনার স্বাদ নেন রোজাদাররা। আর ভোজনরসিক মানুষের খাবারের তালিকায় হালিম একটি বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। বাহারি ইফতারে হালিম না থাকলে যেন পূর্ণতা আসে না। এক সময় যে হালিম ছিল শুধু পুরান ঢাকার বনেদি মানুষের ঘরের খাবার, তা এখন ছড়িয়ে পড়েছে দেশব্যাপি। হয়ে উঠেছে ইফতারির বাজারের অন্যতম সেরা আইটেম।

মুগডাল, মসুরডাল, মাসকলাইসহ বিভিন্ন প্রকারের ডালের সঙ্গে স্বাদে বৈচিত্র্য আনতে নানা ধরনের মসলা সঙ্গে গরু, খাসি মুরগি অথবা কবুতরের মাংস দিয়ে তৈরি হয় সুস্বাদু এই্ খাবারটি। এছাড়াও পরিবেশনের সময় আরেকবার সালাদ ও পুদিনা পাতাসহ নানা প্রকারের লেবু ও তেঁতুলের টক মেশানো হয়।

রাস্তার ফুটপাত থেকে বিলাশ বহুল হোটেল, ছোট থেকে বড়, ধনী বা গরীব সবার জন্য রয়েছে বিভিন্ন পদের ও দামের হালিম। যার নামেও রয়েছে বৈচিত্র্য। মামা হালিম, চাচা হালিম, খাজা হালিম, পাঞ্চু ফকিরের হালিম, নূরানি হালিম, রজ্জবের হালিম, বিক্রমপুর হালিম, আম্বালা হালিম, নর্থসাউথ রোডে রাজ্জাকের শাহি হালিম, ফখরুদ্দীন বাবুর্চির ইফতারের শাহি মুরগি, খাসি ও গরুর হালিম, মতিঝিলে হীরাঝিলের শাহি হালিম এবং ঘরোয়ার শাহি হালিম উল্লেখযোগ্য। ছোট-বড় মাটির পাত্রে বিক্রি হয় এই হালিম।

পাঁচ তারকা হোটেল, সোনারগাঁও, ওয়েস্টিন, রিজেন্সি, র্যাডিসনেও যেমন হালিম পাওয়া যায়, তেমনি গুলশানের বিএফসি, এরিস্টোক্র্যাট, ইফিস’র মতো অভিজাত রেস্টুরেন্টে এখন হালিম পাওয়া যায়। এসব হোটেলে ৫৫০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে হালিম পাওয়া যায়।

হোটেল-রেস্তোরাঁয় পাশাপাশি ফুটপাতেও তৈরি করছে বিভিন্ন প্রকারের হালিম। মাংস ও পরিমাণভেদে হালিমের মূল্য ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। আর রাস্তার ফুটপাতে বিক্রি হয় ১০ থেকে ৫০ টাকায়।

রাজধানীর কলাবাগানের ঐতিহ্যবাহী মামা হালিমের কথা সারাদেশের লোকজনের কাছেই পরিচিত। সারা বছর জুড়েই মামা হালিমের বিশেষ চাহিদা থাকে। কলাবাগান ছাড়াও ধানমন্ডির ৪ নম্বর রোডে মামা হালিমের একটি শাখা রয়েছে। পাকিস্তান আমলে কুমিল্লার লাকসাম থেকে ঢাকা আসেন দ্বীন মোহাম্মদ মনু। তিনিই মামা হালিমের রূপকার। তিনি হালিম তৈরির পদ্ধতি শিখেছিলেন বিহারি নামে পরিচিত এক পাকিস্তানি নাগরিকের কাছ থেকে। সেই আমল থেকে কলাবাগানে অদ্যাবধি তার তত্ত্বাবধানেই চলছে মামা হালিম।

মামা হালিম তৈরির মূল উপাদান হলো- বিভিন্ন রকমের ডাল, গম ও মাংস। গরু, খাসি ও মুরগি তিন ধরনের মাংসের হালিম পাওয়া যায় এখানে। সঙ্গে ব্যবহার করা হয় নানা রকম মসলা। বিভিন্ন সাইজের মাটির পাত্রে পার্সেল করে দেয়া হয় হালিম। পাত্রের আকার ও হালিমের পরিমাণ অনুযায়ী ঠিক করা হয়েছে এর মূল্য। ১২০০ টাকা, ৭০০ টাকা, ৬০০ টাকা, ৫০০ টাকা, ৪০০ টাকা, ৩০০ টাকা, ১২০ টাকা ও ৮০ টাকা মূল্যের পার্সেলের ব্যবস্থা রয়েছে। দুপুর ২ টা থেকে হালিম বিক্রি শুরু হয়। রয়েছে হোম ডেলিভারির ব্যবস্থাও।

এছাড়াও চকের শাহী হালিম জন্য বিখ্যাত দোকানগুলোর মধ্যে রয়েছে চকবাজারের আল রাজ্জাক, ডিসেন্ট, নিউ নূরানী, আনন্দ প্রভৃতি। প্রতিটি দোকানের হালিম স্বাদে ও গন্ধে আলাদা।

রাজধানীর গোপিবাগের খাজা হালিমের বাবুর্চী জাগো নিউজকে জানান, মুগ, মসুর, মাসকলাই ডালের সঙ্গে নানা ধরনের মসলা দিয়ে গরু মাংস তৈরি হয় এ খাজা হালিম। পরিবেশনের সময় দেওয়া হয় পেঁয়াজ বাজা বিভিন্ন মসলা ও বিশেষ টক পানি। ছোট-বড় মাটির ভাড়ে বিক্রি হয় এ হালিম। মাংস ও পরিমাণ বেধে হালিমের বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ৮০০ টাকায়।

মতিঝিলে হালিম কিনতে আসা ভোজনরসিক ফয়সাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, রোজায় ইফতারে হালিম একটি অন্যতম সুস্বাদু খাবার। আমার পরিবারের সবাই এটি পছন্দ করে। রোজায় বেশিভাগ দিনই ইফতারে আয়োজনে আমাদের হালিম থাকে। তাই আজকেও কিনেছি। তবে এবার গরুর মাংসের দাম বেশি থাকায় গরুর হালিমের দাম একটু বেশি। আগে যে পাত্রটি ৪০০ টাকা বিক্রি হত এটি এবার ৬০০ টাকা বিক্রি করছে।

এসআই/আরএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।