মঞ্চ নাটকে ঝড় তুলেছে রিজওয়ান

সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ সালাহ উদ্দিন মাহমুদ , লেখক ও সাংবাদিক
প্রকাশিত: ১১:১৪ এএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মঞ্চ নাটক যেন বহুদিন পর প্রাণ ফিরে পেয়েছে। মঞ্চে ঝড় তুলেছে একটি নাটক। টানা দশ দিনে দুটি করে প্রদর্শনীর পরও টিকিট না পেয়ে ফিরে গেছেন অনেকেই। প্রায় সব টিকিটই অগ্রীম বিক্রি হয়ে গেছে। মঞ্চ নাটকের ক্ষেত্রে এটি একটি বিশাল ব্যাপার। এই অসম্ভব কাজটিই সম্ভব হয়েছে ‘রিজওয়ান’র জন্য।

নাটবাঙলা নাট্যোৎসবে ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে রিজওয়ানের প্রদর্শনী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদের পরিকল্পনা-নির্দেশনায় ‘রিজওয়ান’ মঞ্চে আনে নাটবাঙলা।

উর্দু ভাষার কবি আগা শহীদ আলীর কাব্যগ্রন্থ ‘আ কান্ট্রি উইদাউট আ পোস্ট অফিস’ অবলম্বনে ইংরেজি, উর্দু ও হিন্দি ভাষায় ভারতের অভিষেক মজুমদার রচিত বিয়োগাত্মক নাট্য-আখ্যান ‘রিজওয়ান’। আখ্যানটি ‘নাটবাঙলা’র জন্য বাংলা ভাষায় রূপান্তর করেছেন নাট্যজন ঋদ্ধিবেশ ভট্টাচার্য্য। রিজওয়ান নাট্য-আখ্যানের আনুমানিক ব্যাপ্তিকাল ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের মতো।

rizwan

নাটকটি নিয়ে চারিদিকে ব্যাপক আলোচনা। সে বাতাস ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও। এছাড়া শিল্পকলা চত্ত্বরেও ‘রিজওয়ান’কে ঘিরে সত্যিকারের উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা গেছে। শিক্ষার্থী, দর্শনার্থী, নাট্যকর্মী, সংবাদকর্মী, অভিনয়শিল্পী, কবি, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবীসহ সব ধরনের মানুষের মুখে রিজওয়ানের জয় গান।

সাংবাদিক তুহিন মাহমুদ বলেন, ‘এই নাটকের পেছনের শ্রম, কষ্টকে যে দর্শকরাই সার্থক করে তুলেছেন তা এ কয়দিনে বোঝা গেছে। টিকিট না পেয়ে অনেককে ফিরে যেতে হয়েছে। এমনকি টিকিট কেটেও দেখতে না পারার অভিজ্ঞতার কথাও শোনা গেছে। আমার মঞ্চ নাটক দেখার অভিজ্ঞতা খুব বেশি নয়, তবে এটি যে সত্যিই অন্যতম সেরা মঞ্চ নাটক তা সহজেই বলা যায়।’

rizwan

সংস্কৃতিকর্মী পাভেল রহমান বলেন, ‘‘রিজওয়ান’ ঢাকার তরুণ নাট্যনির্দেশকদের ‘নীরিক্ষাধর্মী’ কাজে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। আগামী পাঁচ বছর ঢাকার মঞ্চে বেশকিছু নীরিক্ষাধর্মী কাজ হবে। যেখানে ‘রিজওয়ান’র প্রভাবমুক্ত থাকাটাই হবে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।’

কবি সাইয়েদ জামিল বলেন, ‘‘রিজওয়ান’ নাটকের নাম হওয়া উচিত ছিলো ‘ফাতিমা’। ফাতিমাই এই নাটকের একমাত্র বলিষ্ঠ চরিত্র। অথবা এই নাটকের নাম মূল কবিতার নামে হওয়া উচিত ছিলো বলে মনে করি। মূল কবিতার নাম ‘দ্য কান্ট্রি উইদাউট অ্যা পোস্ট অফিস’।’

rizwan

অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি বলেন, ‘আমাদের ফ্যামেলি অ্যালবাম, আমাদের গোলাপ বাগান, আমাদের ঝিল-বিল-নদী, আমাদের ’৭১... আমি ‘রিজওয়ান’কে এভাবে কানেক্ট করি। ‘রিজওয়ান’ কোন নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে আটকে নেই, দুনিয়ার যেকোন ভূখণ্ডের নিপীড়ক ও নিপীড়িতের গল্প। ‘এই দুনিয়ায় যদি কোন জান্নাত থেকে থাকে তবে সে-জান্নাত এই মাটিতে, এই মাটিতে, এই মাটিতে’। সত্যি এ যেন আমারই মাটি! রিজওয়ান, এ গ্রেট আর্ট ওয়ার্ক বাই জামিল আহমেদ, ডোন্ট মিস ইট!’

নাট্যকার অলোক বসু বলেন, ‘রিজওয়ান নিয়ে চারিদিকে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। বাংলাদেশের সংস্কৃতিকর্মীরা দলে-উপদলে বিভক্ত হলেও বৃহৎ একটি সাংস্কৃতিক পরিবারেরই সদস্য। এই পরিবারের প্রায় সব সদস্যই রিজওয়ান নিয়ে সরব। আমাদের সাংস্কৃতিক পরিবারের অন্যতম অভিভাবক আসাদুজ্জামান নূরের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে যাদের যাদের সাথে দেখা হলো, তাদের প্রায় সবাই রিজওয়ান নিয়ে আলোচনা-সমালোচনায় মশগুল ছিলো। এমনকি যার মেয়ের বিয়ে, সেই নূর ভাইয়ের সাথে ক্ষণিকের সাক্ষাতেও তিনি যে কথাটি বললেন, তাহলো- রিজওয়ান নিয়ে তোমার লেখাটা পড়েছি, নাটকটি দেখতে যাবো।’

rizwan

কবি মিনার মনসুর বলেন, ‘‘রিজওয়ান’ দেখা হলো আলম খোরশেদের প্ররোচনায়। বৃহৎ এক নির্মাণযজ্ঞ। নিরীক্ষা তো বটেই। এখানে সেখানে নির্মাণকর্মের কিছু কাঠখড় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। ছিল কিছু শিথিলতাও। তারপরও পিনপতন নীরবতার মধ্যে পৌনে দু’ঘণ্টার সন্ন্যাসের পর ঘরে ফিরেছি মহাকাব্যিক এক বেদনা বুকে নিয়ে- যা অবরুদ্ধ কাশ্মির উপত্যকা ছাপিয়ে পৃথিবীর তাবৎ রাষ্ট্রহীন মানুষের হাহাকারকে ছুঁয়ে বয়ে গেছে কালের করোটি ভেদ করে। রিজওয়ান-এর নির্মাতা ও কলাকুশলীদের অভিনন্দন।’

আজ রিজওয়ানের শেষ প্রদর্শনী। এ যেন শেষ হয়েও হলো না শেষের মতো। আকাঙ্ক্ষা রয়ে যাওয়ার মতো। তাই তো বলা যায়, রিজওয়ানের রেশ থেকে যাবে অনন্তকাল। সুতরাং শিল্প-সংস্কৃতির অঙ্গনে স্থায়ী হয়ে রইলো যে নাম, তার নাম ‘রিজওয়ান’।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।