যৌবনে ফিরেছে বুড়িগঙ্গা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০৫:০৯ এএম, ১২ আগস্ট ২০১৭

বুড়িগঙ্গা নদীকে বলা হয়ে থাকে প্রাচীন ঢাকার প্রাণ। এ নদীকে কেন্দ্র করেই প্রাচীন ঢাকার কলেবর বৃদ্ধি। বুড়িগঙ্গার কারণেই ঢাকা শহর তুলনামূলকভাবে আবর্জনা ও দূষিত পানি থেকে মুক্ত । বুড়িগঙ্গা নদী যদি ঢাকার ময়লা আবর্জনা না গ্রহণ করত তবে আজকের এ নগরী হয়তো বসবাসের মতো এমন উপযোগী থাকত না।

সারা বছর ঢাকার বিষাক্ত বর্জ্য পানি শোষণ করে নিয়ে নিজেই হয়ে পড়েছে বিশাল এক বিষাক্ত জলাধার। তবে বর্ষাকাল এলে বুড়িগঙ্গা তার পূর্ব রুপ অর্থাৎ পরিপূর্ণ যৌবন ফিরে পায়। বর্ষাকাল এলেই নদীটি ফিরে পায় প্রাণ। পরিষ্কার পানিতে থইথই করে নদী।

Burigonga1

চলছে বর্ষকাল। সাধারণ নদীর মতো বুড়িগঙ্গাও ফিরে পেয়েছে তার যৌবন। পানিও ব্যবহারের উপযুক্ত হয়ে উঠেছে। বুড়িগঙ্গা পাড়ের নিম্ন আয়ের বেশিরভাগ মানুষ নদীর পানিতেই গোসল করছেন। অথচ বছরের অন্য সময় এ পানিতে কেউ পা রাখতেও চায় না। কারণ ঢাকা শহরের মিল কারখানার সমস্ত ময়লা আবর্জনাময় বিষাক্ত পানি মিশে যায় এ নদীর পানিতে।ফলে বুড়িগঙ্গার পানি হয়ে ওঠে প্রাণঘাতী।

বর্ষায় নগরীর বর্জ্য পানি নদীতে মিশলেও অন্য সময়ের মতো তেমন দূষিত হয় না।বছরের পুরো সময় বুড়িগঙ্গার পানির রঙ থাকে কালো ও দুর্গন্ধময়। পানির বিষাক্ত গন্ধে চরম দুর্ভোগে পড়েন আশপাশের মানুষজন। বাসাবাড়ির তামা কাঁসার আসবাবপত্রের রঙ পালটে বিবর্ণ হয়ে যায়।নদীর আশপাশের জনগোষ্ঠীর জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে।

Burigonga2

বর্ষাকাল এলেই বুড়িগঙ্গার সারা বছরের চিরচেনা রূপ পাল্টে যায়। বুড়িগঙ্গার পরিষ্কার পানি ছাড়া যেন এর আশপাশের মানুষের জীবন চলেই না। নিম্ম আয়ের মানুষেরা বুড়িগঙ্গার জলেই দৈনন্দিন স্নান সেরে নেন।

শুক্রবার বিকেলে পোস্তগোলা সেতু থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত বুড়িগঙ্গার পাড় ঘেঁসে দেখা গেছে, নদীর বেঁড়িবাধে বসে মানুষ আড্ডা দিচ্ছেন। সবাই যেন মুগ্ধ চোখে বুড়িগঙ্গার পূর্ণ যৌবন অবলোকন করছেন।নদীর পরিষ্কার টলমলে পানির সঙ্গে কচুরিপানা ঢেউয়ের তালে তালে খেলা করছে।

Burigonga3

নদীর পাড়ে হাঁটতে আসা নিলয় হালদার জাগো নিউজকে বলেন, সারা বছর দূষিত বর্জ্য মিশ্রিত পানিতে বুড়িগঙ্গা সয়লাব থাকে। সেই সঙ্গে দুর্গন্ধ। খুব দরকার না পড়লে নদীর আশেপাশ দিয়ে কেউ যাতায়াত করতে চায় না। তবে বর্ষাকালে এলে বুড়িগঙ্গার চিরচেনা রূপ বদলে যায়। পরিষ্কার পানিতে টলটল করে নদী। এ পানি দেখার জন্যই প্রতিদিন অনেকেই আসেন নদীর পাড়ে।

বুড়িগঙ্গার পানিতে হাত মুখ ধোয়ার সময় কথা হয় এক বৃদ্ধার সঙ্গে। তিনি জানান, আরে বাপু আমরা তো গ্রামের মানুষ। নদীর পানিতে গোসল না করলে সাধ মিটে না। সাঁতার কাটতে ভালোলাগে। তবে ঢাকার শহরে যখন ত্রিশ চল্লিশ বছর আগে এসেছি তখন তো সাঁতার কাটতাম। কিন্তু বর্ষাকাল ছাড়া এ নদীতে এখন পা রাখার জো নেই।

Burigonga4

সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্যামবাজার সংলগ্ন মিল ব্যারাক পুলিশ লাইন থেকে সুত্রাপুরের সুয়ারেজ দিয়ে বর্জ্য পানি বুড়িগঙ্গায় প্রবেশ করছে। দূষিত পানি নদীতে মিশলেও বর্ষার কারণে ময়লা পানি চোখে পড়ছে না।

বুড়িগঙ্গার পাশে বসবাসকারী আব্দুর রহমান নামের এক কাঠ ব্যবসায়ী জাগো নিউজকে বলেন, বুড়িগঙ্গার কথা ভাবলে খারাপ লাগে। ছোটবেলায় এ নদীতে কত সাঁতার কেটেছি।গরমের সময় তো সাঁতার কেটেই দিন গেছে। আর এখন গরমকালে বুড়িগঙ্গার দুর্গন্ধযুক্ত পানির জন্য আশপাশের লোকজনের থাকা দায় হয়ে পড়েছে।তবে বর্ষাকাল এলেই নদীটি ফিরে পায় হারানো যৌবন।

এসএম/ওআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।