স্বকীয়তা হারাচ্ছে ওসমানী উদ্যান

সাদ্দাম হোসাইন
সাদ্দাম হোসাইন সাদ্দাম হোসাইন
প্রকাশিত: ০৭:০৮ এএম, ০৬ আগস্ট ২০১৭

কেউ কাঁথা সেলাই করছে, কেউ ফুলের মালা গাঁথায় ব্যস্ত, কেউ জটলা বেঁধে তাস অার সিগারেট-গাঁজার ধোঁয়ায় অলস সময় পার করছে। গাছের শরীরে অাল্লাহর নাম এঁকে তাতে মগ্ন হয়ে কি যেন ভাবছে কেউ কেউ। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরের স্মৃতিফলকের ওপর শুয়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে ক্লান্ত পথিক। তারই মাঝে দু’একজন দর্শনার্থী এদিক-সেদিক হেঁটে বেড়াচ্ছে। এমন চিত্রই দেখা যাচ্ছে রাজধানীর গুলিস্তানে অবস্থিত ওসমানী উদ্যানে। পুরো উদ্যানটি ভাসমানদের পদচারণায় অার হৈ-হুল্লোড়ে মুখরিত। নেই প্রত্যাশিত দর্শনার্থীর পদচারণা।

osmani

প্রতিদিন জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা মানুষগুলো একটু সুযোগ পেলে খুঁজে ফেরে বিনোদনমুখী কোন পার্ক বা উদ্যান। তেমনি একটি ঐতিহাসিক উদ্যান ওসমানী উদ্যান। রাজধানীর ব্যস্ততম জনপদ গুলিস্তানের ডিএসসিসি নগর ভবনের সামনে এবং সচিবালয়ের পেছনে এর অবস্থান। প্রায় ২৩ একর বিস্তৃতির এ উদ্যানটিতে রয়েছে টাইলস করা মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতি সম্পর্কিত ১১টি সেক্টরের ফলক। রয়েছে পাথরে খোদাই করা অজানা অনেক তথ্য। সেইসঙ্গে নানা প্রজাতির ফুল, ফল ও সবুজ বৃক্ষের সমারোহ। রয়েছে কৃত্রিম দু’টি দ্বীপের মতো স্বচ্ছ পানির লেক। ঠিক যেন ফুল, ফল অার সবুজ পাতার সঙ্গে স্বচ্ছ লেকের পানির মিতালী প্রতিবিম্ব হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে পুরো উদ্যানে। কিন্তু এত সৌন্দর্যের মাঝেও উদ্যানটি যেন দিন দিন তার স্বকীয়তা হারাচ্ছে।

osmani

একসময় উদ্যানটিতে প্রান্তিক মানুষের স্বস্তির নিশ্বাস অার সবুজ বৃক্ষের মাঝে মুক্ত বাতাসের প্রতিধ্বনি হতো। এখন অার সেই পরিবেশ নেই। সকাল, বিকেল কিংবা রাতে ভাসমান মানুষের দৌরাত্ম্য চলে উদ্যানে। তাই কেউ অার এখানে স্বস্তির নিশ্বাসের খোঁজে অাসে না। অনেক ভাসমান মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাসও শুরু করেছে। রান্না-বান্না এমনকি রাত যাপন- সবই হয় এখানে। সেইসঙ্গে রাতে নিশিকন্যাদের দৌরাত্ম্য পুরো উদ্যানকে ভয়ানক করে তুলেছে।

osmani

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উদ্যানটি এখন উদ্বাস্তু, ভবঘুরে, মাদকসেবী, ছিনতাইকারী, প্রতারক চক্র ও যৌনকর্মীসহ নানা অপকর্মে জড়িত মানুষের অভয়ারণ্য। অপরাধীরা উদ্যানটিকে নিরাপদ স্থান হিসেবে গড়ে তুলেছে। রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত উদ্যানটি বন্ধ রাখার নিয়ম থাকলেও এখানে ঘটছে উল্টোটা। অজানা কারণে অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে রাতভর বিচরণ করছে এসব মানুষ। রাতভর চলে মদ, গাঁজা, যৌনকর্মসহ নানা অপকর্ম। এসব নিয়ন্ত্রণে নেই সঠিক তদারকি।

osmani

অথচ উদ্যানের প্রবেশমুখেই এর ব্যবহার বিধি সম্পর্কিত একটি সাইনবোর্ড টানানো রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘ফুল ও গাছের পাতা ছেঁড়া যাবে না।’ কিন্তু উদ্যান ঘুরে কোন ফুলের দেখা মেলেনি। সব ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে ভাসমান মানুষ। নিয়মে বলা হয়েছে, ‘গাছের ডাল ভাঙা যাবে না, যত্রতত্র ময়লা ফেলা ও টয়লেট ব্যতীত অন্য কোথাও প্রস্রাব পায়খানা করা যাবে না।’ কিন্তু পুরো উদ্যানে ময়লা-অাবর্জনার ছড়াছড়ি। মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরের পাশেই এক ব্যক্তি প্রকাশ্যেই প্রস্রাব করছেন। নিয়মে আরো বলা হয়েছে, ‘বাস্তুহারা, ভিক্ষুক এবং ভবঘুরে এ উদ্যানে প্রবেশ করা নিষেধ।’ কিন্তু উদ্যানটি বর্তমানে তাদের জন্যই অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে। এখানে এখন হাঁস-মুরগি, ছাগল-গরুও পালন করা হয়। কর্তৃপক্ষ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যে, ‘এখানে নিয়মের বাহিরে কোনো কার্য ঘটলে তার জন্য অার্থিক জরিমানাসহ শাস্তি রয়েছে।’ কিন্তু তেমন শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কখনো দেখেনি কেউ।

osmani

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও পরিবেশ বাঁচাও অান্দোলনের (পবা) নির্বাহী সদস্য তোফায়েল অাহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওসমানী উদ্যান রাজধানীর একটি হৃদপিণ্ড। কিন্তু এটি এখন ভাসমান মানুষের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে। কর্তৃপক্ষ দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে এটি অচিরেই তার স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলবে।’

osmani

উদ্যানের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সম্পত্তি বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘অামরা মাঝে মাঝে অভিযান পরিচালনা করি। নির্দিষ্ট অানসার সদস্য না থাকায় এমনটা হচ্ছে।’

osmani

নগর ভবনের সামনের অংশে উদ্যানের সীমানা প্রাচীর ভাঙার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে অবগত নন বলে জানান। তবে কালকেই বিষয়টি দেখবেন বলে জানান ডিএসসিসি’র সম্পত্তি বিভাগের এ প্রধান কর্মকর্তা।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।