তবুও নামুক শ্রাবণের বারিধারা

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:১৮ পিএম, ২৫ জুলাই ২০১৭
ছবি- মাহবুব আলম

বৃষ্টির কান্না নগরজুড়ে। আকাশে মেঘ দেখলেই রাজধানীবাসীর বলিরেখা দীর্ঘ হয়। বিশেষ করে দিনমজুর গোছের মানুষেরা এখন বৃষ্টি দেখলেই অাঁতকে ওঠেন। বাইরে বেড়ানোর জো থাকে না।

বৃষ্টির দিনে রাস্তায় এলেই আটকে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। জলজট আর যানজটে একাকার হয়ে যায় গোটা নগরী। সামান্য বৃষ্টিতেই থমকে যায় রাজধানী। বৃষ্টি মানেই শত দুঃখের হাতছানি। এত দুঃখ, এত ভোগান্তি, তবুও যেন শ্রাবণের বাদলা দিনের রূপ উপচে পড়ে। বৃষ্টিভেজা বর্ষার আবেদন যেন কোনোকালেই ফুরাবার নয়। শ্রাবণের বারিধারা মন-শরীর নাচিয়ে তোলে প্রতি ক্ষণে।

ঋতুরাজ বসন্ত। তবে সাহিত্য রসে বর্ষারই আধিক্য। ঠিক প্রকৃতিপ্রেমীদের মননেও। শ্রাবণের বৃষ্টিবেলাতেই নিজেকে মেলে ধরার স্বাদ-আহ্লাদে অস্থির হয়ে ওঠে মন। প্রিয়জনের সনে মন মেলাতে ব্যাকুলতার শেষ থাকে না। বৃষ্টির সাজে মন সাজাতে আনচানের অন্ত থাকে না।

rainn

তাই তো বর্ষা বন্দনায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন-
‘এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়,
এমন মেঘস্বর বাদল-ঝরঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়..’

শ্রাবণের ভারি বর্ষণে খুলে যায় মনের জানালা। ভাবজগৎ শিহরিত হয় বৃষ্টির ফোটায় ফোটায়। আন্দোলিত মনে কত কিছুই না ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। রাজধানীর জিয়া উদ্যানের ফুটপাত ধরে যেন বর্ষা উৎসব করছিল নীলিমা আর মিতিশা। সঙ্গে বন্ধু মাহমুদও আছেন। সকালে এসেছেন শ্রাবণের বৃষ্টি উপভোগ করতে। দু’জনই বোরখা পরা। তবে মুখ খোলা। বোরখা হলেও বসনে অসাধারণ মিল দু’জনের।

কথা হয় নীলিমার সঙ্গে। বলেন, ‘গ্রামে জন্ম। শৈশব-কৈশোরে বর্ষাকালে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেতাম। বৃষ্টিতে না ভিজলে বর্ষার রূপ দেখা যায় না। বৃষ্টির পানিতে পা ভেজানো। আহা! আজ সেই আনন্দই করলাম। ভিজেছি সকাল থেকে। এ বেলায় ছাতাকে উপলক্ষ করেছি মাত্র।’ বাসায় গিয়ে খিচুড়ি রাঁধবেন বলে জানান মিতিশা। বলেন, ‘এমন দিনে ভুনা খিচুড়ি আর মুরগির ঝোল না হলে প্রকৃতি ক্ষমা করবে না। বৃষ্টিতে মন মজালাম। এবার খাবারে।’

raIn

বর্ষা উপভোগে আর উদযাপনে রবীন্দ্রনাথের সম্ভবত কোনো বিকল্প নেই। কবিগুরু বলেছেন, ‘বর্ষা ঋতুটা বিশেষভাবে কবির ঋতু।’ রবীন্দ্রনাথের কবিতা আর গানের বিষয়বস্তু ধরে বিভাজন করলে দেখা যায় বর্ষাকে নিয়েই লেখা বেশি। তার লেখা গীতবিতানে প্রকৃতি পর্যায়ের গানের সংখ্যা ২৮৩। এর মধ্যে বর্ষা নিয়ে গানের সংখ্যাই ১২০টির মতো।

বর্ষার প্রেমে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন-
‘আজি অন্ধকার দিবা বৃষ্টি ঝরঝর,
দুরন্ত পবন অতি,
আক্রমণে তার বিদ্যুৎ দিতেছে উঁকি
ছিড়ি মেঘ ভার,
খরতর বক্রহাসি শূন্যে বরষিয়া।’

অথবা
‘আজি ঝর ঝর মুখর বাদল দিনে
জানি নে, জানি নে কিছুতেই
কেন মন লাগে না… ’

rain

বর্ষা উদযাপন চলছে ফেসবুকেও। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বর্ষার ছবি আর রূপের কথা লিখে তাদের ফেসবুক দেয়াল রাঙাচ্ছেন। গীতিকার ও সুরকার শাকির দেওয়ান তার দেয়ালে শ্রাবণের বাদল দিন উপলক্ষ করে লিখেছেন-

“দাহকাল পেরিয়ে এসেছি সেই কবে। এখন ভরা যৌবনা শ্রাবণ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। চারদিকে কেবলি বৃষ্টিভেজা হাতছানি। মেঘমেদুর-বর্ষণমুখর কালবেলা। দিনমানজুড়ে মেঘের ডম্বরু-কুন্তলা বালিকার চকিত চাহনি। বেশ তো আছি। 'ওরে যাসনে তোরা ঘরের বাহিরে'। ঘরেই যে আছি। ঘরেই বসবাস। নিজগৃহে পরবাস। এমনই দিনে তারে বলা যায়, 'এমন ঘনঘোর বরিষায়'। কিন্তু মন যে স্নাত হয়না। বুকের জ্বালা জুড়ায় না। এ আগুন নেভানো দায়। এহেন অলস বেলায় দাঁড়িয়ে কতো কথা-কতো স্মৃতি মনের অলিন্দে উঁকি দিয়ে যায়।”

এএসএস/ওআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।