এ শহর অচেনা

রোকুনুজ্জামান সেলিম
রোকুনুজ্জামান সেলিম রোকুনুজ্জামান সেলিম , সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৭:২২ এএম, ২৫ জুন ২০১৭

রাজধানীর বিজয় সরণি মোড়, চৌরাস্তা হওয়ায় প্রতিটি ট্রাফিক সিগন্যালে দশ থেকে পনের মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে বাস-মিনিবাসসহ সকল প্রকার যানবাহন। ফলে একবার সিগন্যালে আটকা পড়লে বাকি তিন পাশের গাড়ি চলে যাওয়ার পর আপনার পালা। অর্থাৎ একবার সিগন্যালের আশির্বাদে পড়লে ৩০ মিনিটের কমে ছাড়বে না! তবে আজ (রোববার) একেবারেই ভিন্ন চিত্র।

সকাল ৮টা, যেখানে কমপক্ষে ৫০-৬০টি যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে আজ কোনো গাড়ির দেখাই নেই। হঠাৎ ছুটে চলে আসা দুই-একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা দ্রুত গতিতে চলে যাচ্ছে। দেখা মিললো না দায়িত্বরত কোনো ট্রাফিক পুলিশেরও। ফাঁকা রাস্তায় দ্রুত ছুটে চলে আসা গাড়িগুলো মোড়ে হালকা ব্রেক কষে আশেপাশে অবস্থা দেখে চলে যাচ্ছে। তবে যানবাহন না পেয়ে অনেকেই দাঁড়িয়ে আছেন।

dhaka

তীব্র রোদে দাঁড়িয়েও কাঙ্ক্ষিত বাহন না পেয়ে অনেকেই চলছেন পায়ে হেঁটে। মাথায় ও হাতে বড় দুটি ব্যাগ নিয়ে হেঁটেই রওয়ানা দেন ৪০ ঊর্ধ্ব রফিক। জানান, ঈদে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে বের হয়েছেন, মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বাসযোগে হালুয়াঘাটে (ময়মনসিংহ) গ্রামের বাড়ি যাবেন। তীব্র রোদে গাড়ি না পেয়ে তাই হেঁটেই রওয়ানা দিয়েছেন।

তিনি একা নন, তার পেছনেই দেখা মিললো আরও বেশ কয়েকজনের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তনয়, পড়াশোনার পাশাপাশি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গতকাল (শনিবার) অফিস ছুটি হলেও আজ (রোববার) বাড়ি যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আজ অনেক রোদ। অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও গাড়ি না পেয়ে হেঁটেই চললাম। জানি না বাস পাওয়ার ক্ষেত্রে কী হবে?

dhaka

গাড়ি না পেয়ে তাদের সঙ্গে হেঁটে আসতে মহাখালী ফ্রাইওভারের কাছে দেখা মিললো বেশ কয়েকজন ভিক্ষুকের। ফুটপাতে বসে অপেক্ষা করছেন দানশীলদের জন্য। তবে জনমানব শূন্য ফুটপাতে তাদের কণ্ঠেও করুন সুর। বললেন, বাবা, আজ মানুষ নেই, ভোর থেকে বসে আছি।

মহাখালী রেল গেটে যাত্রীর আশায় দাঁড়িয়ে আছেন বেশ কয়েকজন রিকশাচালক। যাত্রী না পেয়ে অলস সময় পার করছেন তারাও। রিকশাচালক আলমগীর জানান, সকালে রিকশা নিয়ে বের হয়েছি, এখনো খ্যাপ (যাত্রী) পাইনি।

dhaka

তবে রিকশা চালক যাত্রী না পেলেও পাশেই গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন অনেকে। রাজধানীতে মানুষ কমে যাওয়ার সাথে যানবাহনে কমে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। গাড়ি না পেয়ে বিরক্ত প্রকাশের সঙ্গে সরকারকেও দোষারোপ করেছেন।

আবুল কালাম নামের একজন বলেন, দেখেন তো, সরকারিভাবে কিছু গাড়ি চালু রাখলে আমাদের এভাবে ভোগান্তি হতো? বিআরটিসি গাড়িগুলোরও দেখা মিলছে না। অন্য গাড়ি আসছে তবে আমার কাঙ্ক্ষিত রোডের না।

dhaka

অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আলিফ পরিবহনের একটি বাস পেয়ে উঠে বসলাম। গাড়িগুলো সিটিং সার্ভিস নামে চললেও সিটের বাহিরেও লোক নেয়া হয়, তবে আজ অন্য রকম। ৩৬ আসনের বাসটিতে যাত্রী মাত্র ১১ জন। মহাখালী ফ্লাইওভার থেকে বাড্ডার লিংক রোডের ৫.১ কিলোমিটার রাস্তা আসতে অন্যদিন এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় পার হলেও আজ লাগলো মাত্র ১৫ মিনিট! গুলশান-১ নম্বরেও তীব্র যানজটের দেখা নেই।

বাড্ডা গুদারাঘাটের ওয়াটার বাসগুলোও ভাসছে যাত্রীবিহীন। টিকিট কাউন্টারটাও বন্ধ। সত্যিই এ শহর যেন অচেনা।

আরএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।