রিকশা চালালেও রোজা ভাঙেননি সত্তরোর্ধ্ব হানিফা

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০২:২০ পিএম, ০৭ জুন ২০১৭

‘ওই বুড়া মিয়া, রিকশাডা একটু পিছে নেন। মোটরসাইকেল নিয়া ডাইন দিক দিয়া বাইর অইয়া যাই।’ বুধবার বিকেল আনুমানিক পৌনে ৫টায় শাহবাগ থানার সামনে বৃদ্ধ রিকশাচালককে উদ্দেশ করে প্রচণ্ড যানজটে আটকে পড়া ২০-২২ বছর বয়সী মোটরসাইকেল আরোহী এ কথা বলছিলেন।

জবাবে রিকশাচালক বললেন, ‘বাবারে, সামনে পিছনে এক ইঞ্চি জায়গাও নাই। কেমনে পিছামু। আমারও তো নামাজ পড়ার সময় হইয়া আইছে।’

একটু লক্ষ্য করতেই দেখা গেল মাথায় টুপি, গায়ে বোতাম খোলা শার্ট, লুঙ্গির ওপর গামছা বাঁধা শুশ্রুমণ্ডিত বৃদ্ধের শরীর বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝরছে। পেটের চামড়া কুঁচকে কয়েকটা ভাঁজ পড়েছে। বৃদ্ধ এ রিকশাচালকের বেশিরভাগ দাঁত পড়ে যাওয়ায় কথাগুলোও জড়িয়ে আসছিল। যানজট কমলে রিকশাচালক উল্টো দিকে ঘুরে শাহবাগ থানার সামনে দাঁড়ান।

কৌতূহলবশত কথা বলে জানা যায়, বৃদ্ধ রিকশাচালকের নাম হানিফা। বয়স ৭৬ পেরিয়ে ৭৭ বছরে পড়েছে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বোয়ালিয়া গ্রামের বাসিন্দা হানিফা গত ২৫ বছর ধরে ঢাকায় রিকশা চালান।

Hanifa

পরিবারে কে কে আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সংসার ছিল। বড় ছেলেটা মারা গেছে আর ছোট ছেলেটা মানসিক ভারসাম্যহীন। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেকে নিয়ে স্ত্রী গ্রামের বাড়ি থাকেন। তিনি হাজারীবাগের পশ্চিমে ঝাউচর এলাকায় মেসবাড়িতে থাকেন।

রিকশার ঘানি টানতে তো অনেক কষ্ট, তাই রোজা রাখেন কিনা জিজ্ঞাসা করতেই বৃদ্ধ কিছুটা উত্তেজিত কণ্ঠে বলেন, ‘এইডা কী জিগাইলেন? যত কষ্টই হউক রোজা ভাঙিনি, ভাঙমুও না। রোজা না রাইখ্যা খালি পেট ভইরা খাইলে কবরে গিয়া কী জবাব দিমু।’

সেহরিতে কী খান বলতেই এবার বৃদ্ধ ফোকলা হাসি হেসে বলেন, ‘আমার পরিবার এহানে থাকে না, হোটেলে সেহরি খাই। গত রাইতে মুরগির গোস্ত দিয়া ভাত খাইছি।’

বৃদ্ধ এ প্রতিবেদকের পরিচয় জানতে পেরে বলেন, এই বুড়া বয়সে রিকশার প্যাডেল টানতে খুব কষ্ট হয়। তাই স্বপ্ন দেখি মৃত্যুর আগে একটা সিএনজিচালিত অটোরিকশা কেনার। এজন্য ৭৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। পরিবার ও নিজের খরচ মিটিয়ে গত কয়েক বছরে ২৫ হাজার টাকা জমিয়েছি। জানি না কত দিনে বাকি টাকা জমবো। তবে আল্লাহ পাকের উছিলায় এ রমজানে কোনো বিত্তবান মানুষ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এলে স্বপ্নটা হয়তো পূরণ হবে। চলে যাওয়ার আগে বৃদ্ধ এই রিকশাচালক সাহায্য পাওয়ার আশায় নিজের মোবাইল নম্বরটা দিয়ে যান।

এমইউ/এএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।