রমজানে দূর হোক পানিশূন্যতা

ফারহানা মোবিন
ফারহানা মোবিন ফারহানা মোবিন , লেখক এবং চিকিৎসক
প্রকাশিত: ১০:১৩ এএম, ৩০ মে ২০১৭

পানি দেহের জন্য ভীষণ জরুরি। শুধু রমজান নয়, পুরো বছরজুড়ে প্রচুর পানি পান করুন। পানি দেহের প্রতিটি অঙ্গের জন্য সুফল বয়ে আনে। আমাদের দেহের ভেতরে কোন দাঁত নেই। তাই খাবার ভালোভাবে হজম হওয়ার জন্য প্রতিদিন গড়ে দেড়-দুই লিটার পানি পান করাটা খুবই দরকার। পানি খাবারের সাথে মিশে খাবার হজমে সাহায্য করে।

আমাদের দেহের অতি প্রয়োজনীয় একটি অঙ্গের নাম হলো কিডনি। কিডনি দেহের ছাকন যন্ত্রের মতো কাজ করে। দেহের জরুরি উপাদানগুলোকে রেখে অপ্রয়োজনীয় অংশগুলোকে সূত্রের সাহায্যে শরীরের বাইরে বের করে দেয়। এই অঙ্গ আমাদের পেটের দুইপাশে দুইটি রয়েছে। প্রচুর পানি খেলে কিডনি কাজ করে ভালোভাবে। তবে কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া পানি খাওয়াটা অনুচিত।

বেশি করে পানি পান করুন। রমজানে অবশ্যই পানি শূন্যতা দূর করবেন। তাহলে আসুন জেনে নেই পানি পানের উপকারিতা-

অ্যাসিডিটির প্রধান ওষুধ
প্রচুর পানি খেলে অ্যাসিডিটি বা গ্যাসট্রিকের পরিমাণ কমে যায়। বুকে জ্বালাপোড়া, বমি বমি ভাব, টক ঢেকুর ওঠা, পেটে ব্যথা, বুকে আলপিনের মতো খোঁচানো ব্যথা, পিঠে ব্যথাও কমে যায়। খাবার সঠিকভাবে হজম না হওয়ার জন্য এমন হয়।

দেহের চর্বি কমায়
রমজানে তেলে ভাজা খাবার খাওয়া হয় বেশি। তাই ইফতারের পর থেকে সাহরি পর্যন্ত প্রচুর পানি পান করুন। পানি দেহের ফ্যাট সেলগুলোকে কমিয়ে দেয়। ফলে ওজন কমাতে সুবিধা হয়। যারা প্রচুর খাবার নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়াম করে, ওজন কমাতে চায়, তাদের নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার ও প্রচুর পানি পান করা উচিত।

জন্ডিসের জন্য অপরিহার্য
প্রচুর পরিমাণ পানি দেহের বিলিরুবিনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। বিলুরুবিন হলো রক্তের একটি জরুরি উপাদান। যা নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেড়ে গেলে জন্ডিস হয়ে যায়। আবার গলব্লাডার বা পিত্তথলির কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য পানি পান করা দরকার।

ব্রণ দূর করতে
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করার জন্য পানি খুব দরকার। পানি নিয়মিত খেলে খাবার ঠিকমতো হজম হয়, ব্রণও ভালো হয়। পুরো দেহে রক্ত চলাচল ঠিকমতো হওয়ার জন্য ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় থাকে।

গর্ভবতীদের জন্য
গর্ভস্থ শিশু পেটে পানির থলের মধ্যে থাকে। নিয়মিত পান করলে সেই পানির ব্যাগটি ভালো থাকবে।

যেকোন অপারেশনের পরে
পানি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হওয়ার জন্য কাটা জায়গায় চাপ লাগবে না। রক্ত ঠিকমতো চলাচলের জন্য কাটা জায়গা দ্রুত শুকাবে।

অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বজায় রাখে
ঘাম ও প্রস্রাবের সাহায্যে দেহের দূষিত তরল পদার্থকে বাহিরে বের করতে সাহায্য করে পানি। এতে অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বজায় থাকে, হাত-পায়ের তলায় জ্বালাপোড়া কমবে। যাদের বারবার প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়। তারা প্রচুর পানি পান করুন।

অন্যান্য ক্ষেত্রে
মাতৃদুগ্ধদান কালীন, অতিরিক্ত গরমে দেহের লবণ পানির সাম্যাবস্থা বজায় রাখার জন্য, ডায়াবেটিক ও উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের হৃৎপিণ্ড ভালোভাবে কাজ করার জন্য প্রচুর পরিমাণ পানি পান করাটা জরুরি। জন্মনিয়ন্ত্রণকারী পিল খান, এমন নারীরা প্রচুর পানি পান করুন। কৌটার দুধ খায়, এমন শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় খুব বেশি। এই অবস্থা দূর করার জন্য প্রচুর পানি দরকার। দীর্ঘক্ষণ চোখ বা মস্তিষ্কের কাজ করার পরে পানি খেলে, মস্তিষ্কের প্রতিটি স্থানে রক্তের সাথে পানি পৌঁছে কর্মক্ষমতা বাড়ায়। রক্তে ইনফেকশনের (ইএসআর) পরিমাণ কমায়।

লেখক : রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার (গাইনি অ্যান্ড অবস), স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা এবং ডায়াবেটোলোজি, বারডেম হাসপাতাল।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।