নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঢাবি শিক্ষার্থীর খোলা চিঠি


প্রকাশিত: ০১:৩৯ পিএম, ১২ মে ২০১৭

দেশের চলমান ধর্ষণের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকরা। এ সমস্যা থেকে মুক্ত হতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চেয়ে নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী ফারহানা লিজা।

পাঠকের জন্য এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণে চিঠিটি জাগো নিউজে হুবহু প্রকাশ করা হলো:

প্রিয় মা....,আমার সালাম নিবেন।
কেমন আছেন মা? এই খোলা চিঠি কোনদিন আপনার কাছে পৌছাবে কিনা আমি জানিনা! যদি কোনদিন, কোনসময় আপনার দৃষ্টিগোচর হয় মনের ভেতর তার তীব্র আশা নিয়ে লেখাটা। সবাই আপনাকে আপা ডাকে। এটাই হয়ত নিয়ম। নিয়ম ভাঙার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। আমি নিজস্ব ভাবে শুদ্ধ চিন্তায় মা ডাকলাম। মায়ের কাছেই তো মেয়ে সবথেকে নিরাপদ। মায়ের কাছে যে কথা বলা যায়, যা চাওয়া যায়, পৃথিবীর আর কোথায়ও তা সম্ভব নয়।

মা,
আপনি বিচক্ষণ। যেভাবে আপনি ভাবতে পারেন তার নূন্যতম কিছু বোঝার ক্ষমতা আমার নাই। তবে রাজনীতির বাহিরে, দলীয় চিন্তার বাহিরে ও তো আপনি কতকিছু করেন!
আমার মতো মেয়ে বাঁচার শেষ আশ্রয় হিসেবে আপনার কাছে সাহায্য চেয়েছে। কতটা অসহায় হয়ে আমি আপনাকে জানাতে চেয়েছি, আপনার সাহায্য চেয়েছি আপনি অবশ্যই বুঝবেন।

আমি বাঁচতে চাই মা। সুস্থ ভাবে বাঁচতে চাই। আপনি হয়ত জানেন না, আমি রোজ বাহিরে বের হবার আগে ভাবি হলে ফিরে আমার মফস্বলে থাকা দুঃখীনি মায়ের সঙ্গে কি আর একবার কথা বলতে পারবো? আমার ৫ বছর বয়সের একটা ছোট্ট বোন আছে, আমি ভাবী সে সুস্থ থাকবে তো? বেঁচে থাকবে তো? কোনো হায়নার দল তার ছোট্ট শরীরে নিজের সুখ মেটাতে তার শরীর টাকে ধারালো ব্লেড দিয়ে ছিড়ে ফেলবে না তো? আমার ভয় হয় মা। ভীষণ ভয়। আমি মেয়ে বলে আমার ভয় হয়। আমার একার পক্ষে তো হাজার জনের সঙ্গে যুদ্ধ করা সম্ভব নয়। ভাবী, আমাকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে আমার বাবা আমাকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়বে না তো? আমার মা গলায় সুতির ওড়না বেঁধে সিলিং ফ্যানে ঝুলবে নাতো!

মা, আপনি সব পারেন। আপনার একটা সই এ সব হয়! আপনার মনোবলের দৃঢ়তায় পদ্মা সেতু যেখানে বিশ্বব্যাংক কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে, আপনার মনোবলে যেখানে সব যুদ্ধাপরাধীর প্রাপ্য শাস্তি হয়েছে, আপনার বিচক্ষণতায় যেখানে বিশ্বে বাংলাদেশের নাম উজ্জল হচ্ছে, সেখানে আপনার একটু চোখ ফেরানোতেই আমার মতো হাজার হাজার মেয়ে নির্ভয়ে বাঁচতে পারবে! রাতে এটা চিন্তা করে ঘুমুতে হবে না যে কাল কি আমি কারো শিকার হয়ে যাবো? রাতে ঘুমের আগে এটা ভাবতে পারবো.. আমাদের একজন মমতাময়ী মা আছেন। মা আছেন তো, কিচ্ছু হবে না। আমাদের মা আমাদের গায়ে ফুলের টোকা লাগতে দিবেন না।

কিছুদিন আগে একটা প্রোগ্রামের জন্য গণভবনে যাবার সৌভাগ্য আমার হয়েছিলো। প্রচণ্ড রোদে ৪ ঘণ্টা বসে থেকে সবার কথা শুনে আপনি যখন বলেছিলেন, রোদে তোমাদের খুব কষ্ট হলো। এরপর থেকে শামিয়ানার ব্যবস্থা করা হবে। আজকে তোমরা এখানে খেয়ে যাবে। নিজের বাড়ি মনে করে খাবে। আপনার এই এক কথায় সব কষ্ট কোথায় চলে গিয়েছিলো, খাবার সময় নিজের বাড়ি মনে করে এক পিস রোস্ট বেশি নিয়েছিলাম। মা বলেছেন নিজের বাড়ি মনে করতে, চোখ ভর্তি পানি নিয়ে আমি অবাক হয়ে আপনার দিকে তাকিয়েছিলাম সেদিন। মা গো, সেই আপনার মেয়েদের জন্য একটা বার আপনি দৃঢ় হোন। প্লিজ মা.....

আপনি দৃঢ় কণ্ঠে একটা ধর্ষককে প্রকাশ্যে শাস্তি দিলে আরও দশটা ধর্ষকের মনোকামনা উড়ে যাবে। কারণ আপনার কথাই একটা শক্ত আইন। তারা যেন এটা না ভাবে যে, কোনো শাস্তি নাই, বিচার নাই যা ইচ্ছা তা করার দেশে ধর্ষণ আমার জৈবিক অধিকার। বরং তারা যেনো এটা ভাবে যে, এই সব পেয়েছির দেশে এই অসহায় মেয়েগুলোর একজন চমৎকার মা আছেন। যিনি তার মেয়েদের আগলে রাখেন। এখানে অসংগতিপূর্ণ চিন্তা মস্তিস্কে আনাও বিরাট ভুল!!!

অসম্ভব আশা নিয়ে আমি আপনার কাছে কিছু চেয়েছি, মা আমাদের সুস্থভাবে বাঁচার ব্যবস্থা করে দিন। আমাকে নির্ভয় করুন।

অনেক কিছু লিখেছি, কোন শব্দের পর কোন শব্দ বসালে আপনার অসম্মান হতে পারে এটা ভেবে শুদ্ধ লিখতে গিয়ে আরও জট পাকিয়ে ফেলেছি। আপনার মনোকষ্টের কারণ হলে আমাকে ক্ষমা করবেন।

মা বলে ডেকেছি, মায়ের কাছে বাঁচতে চেয়েছি। আমি সত্যিই জানি না কোনদিন আপনি এই চিঠি দেখবেন কিনা তবে এটা জানি যদি কোনোভাবে আপনি এই চিঠির ব্যাপারে অবগত হতে পারেন, তাহলে অবশ্যই কিছু করবেন।

অসহায় মেয়েকে বাঁচাতে যা লাগে আপনি ব্যবস্থা নিবেন এটাই বিশ্বাস।

ভালো থাকবেন। শুভ কামনা।

ফারহানা লিজা।
রোকেয়া হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।