শিশুর জন্ম নিবন্ধন কেন বাধ্যতামূলক

রোকুনুজ্জামান সেলিম
রোকুনুজ্জামান সেলিম রোকুনুজ্জামান সেলিম , সহ-সম্পাদক
প্রকাশিত: ০৭:০৪ এএম, ১০ মে ২০১৭

একজন নাগরিকের তার জন্মস্থানের সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আর এ সনদ পাওয়ার জন্য শিশুর জন্মের পর তার জন্ম নিবন্ধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী, শিশুর জন্মগ্রহণের পর জন্ম-নিবন্ধীকরণ করার কথা বলা হয়েছে। উন্নত বিশ্বের সব দেশেই শিশু জন্মের পরই নিবন্ধন করা হয়। বাংলাদেশেও প্রতিটি শিশু জন্মের পর পর জন্ম নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

আজকের শিশুরাই আগামী দিনে জাতির ভবিষ্যৎ। যেকোনো নাগরিকের নিবন্ধন থেকেই তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানা সম্ভব। তবে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে এ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হলেও গ্রামাঞ্চলে এখনো সব শিশুর জন্ম নিবন্ধন সঠিকভাবে করা হয় না। যার কারণে বাল্যবিয়েসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্তে প্রতিনয়তই সমস্যা পড়তে হয় সংশ্লিষ্টদের।

সম্প্রতি এক জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, অভিভাবকদের গুরুত্বহীনতার কারণে অনেক শিশুর জন্ম নিবন্ধন করা হয় না। তবে শিশুর সকল মৌলিক অধিকারের ন্যায় তার জন্ম নিবন্ধনও জরুরি। মা-বাবা বা অভিভাবকদের সদিচ্ছাই জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট।

জন্ম নিবন্ধন একজন নাগরিকের জাতীয়তা, বয়স, নামকরণ, স্থায়ী ঠিকানা, পিতা-মাতার নাম ইত্যাদি মৌলিক বিষয়ের নিশ্চয়তা দেয়। বয়স প্রমাণের ক্ষেত্রে জন্ম সনদের গুরুত্ব অপরিসীম। পাসপোর্ট, বিবাহ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দান, ভোটার তালিকা প্রণয়ন, জমি রেজিস্টেশনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদর্শন সরকার আইনের দ্বারা বাধ্যতামূলক রয়েছে।

জাতীয় সংসদে পাস হওয়া জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন-২০০৪ অনুযায়ী জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল ব্যাক্তির জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রেও এ নিবন্ধন জরুরি।

শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের (দেড় মাস) মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। তবে এ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিবন্ধন না করা হলে ১৮ বছরের কম বয়স সীমা বিনামূল্যে এবং ১৮ বছরের বেশি বয়স সীমা ৫০ টাকা ফি দিয়ে নিবন্ধন করা যাবে। পল্লী এলাকায় শিশু ইউনিয়ন পরিষদ, পৌর এলাকার পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নির্ধারিত অফিস, ক্যান্টনমেন্ট এলাকার সংশ্লিষ্ট ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এবং বিদেশে জন্মগ্রহণকারী কোনো বাংলাদেশি দূতাবাসে গিয়ে শিশুর জন্ম নিবন্ধন করাতে হবে।

জন্ম নিবন্ধনের সুবিধা
জন্ম নিবন্ধন থাকলে একজন শিশু বা পূর্ণ বয়স্ক মানুষ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পেতে পারেন। চাহিদামতো প্রকৃত বয়স প্রমাণে জন্ম নিবন্ধনের সনদপত্র অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুদের স্কুলে ভর্তি হওয়ার সময় প্রকৃত বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র জমা দিতে হয়। না হলে স্কুলে ভর্তি করানো যায় না।

পাসপোর্ট করতে প্রকৃত বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র জমা দিতে হয়। অন্যথায় পাসপোর্টই করা যায় না। নতুন ভোটার হতে হলে কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হয়। এ বয়স প্রমাণের জন্যও জন্মনিবন্ধন সনদ প্রয়োজন।

সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের চাকরির ক্ষেত্রে বয়স প্রমাণের জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ প্রয়োজন। এ ছাড়া বিয়ে করতে গেলেও জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন। কারণ, বিয়ে করার জন্য ছেলেদের ২১ এবং মেয়ের ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

শিশুসহ সকল নাগরিকের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র থাকা একটি মর্যাদার বিষয়। এ সনদ একজন মানুষকে রাষ্ট্রের গর্বিত নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং পারস্পরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতেরও ব্যবস্থা করে।

জমি ক্রয় ও বিক্রয়ের সময়ও জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া জটিল কোনো চিকিৎসা দেয়ার সময়ও (অপারেশন, থেরাপি), জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হয়। সরকারি সুযোগ-সুবিধা (শিশু খাদ্য, ফ্রি চিকিৎসা, বয়স্ক ভাতা, খাসজমি ও জলমহল বরাদ্দ) ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন। ব্যবসা বাণিজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও একজন ব্যবসায়ীর জন্ম সনদ প্রয়োজন হয়।

জন্ম নিবন্ধন না থাকার সমস্যা বা অসুবিধা
বয়স নির্ধারণ না থাকায় শিশুদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয়। যেমন- মেধাবী হওয়া সত্বেও ভালো স্কুলে ভর্তি হওয়া যায় না। সঠিক সময়ে সঠিক ও উন্নতমানের চিকিৎসা পাওয়া যায় না।

নিরাপত্তাসেবা থেকে বঞ্চিত হতে হয় শিশুদের। আদালতে মিথ্যা অভিযোগ প্রমাণের জন্যও প্রকৃত বয়স প্রমাণ করতে না পারার কারণে অনেক শিশুকে জেল বা হাজতে থাকতে হয়।

পাসপোর্ট করতে না পারায় প্রয়োজন সত্বেও বিদেশে যাওয়া যায় না। ভোটার হতে না পারায় রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি নির্বাচনে নিজের পছন্দ/অপছন্দ প্রয়োগ করা থেকে বঞ্চিত হতে হয়।

যোগ্যতা সত্বেও ভালো চাকরিতে যোগদান করা যায় না। বিয়ের মতো সামাজিক কাজেও বাধা আসে। এ ছাড়া জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকায় শিশুরা লেখাপড়া থেকে ছিটকে পড়ে বিপদগামী হয়। যা সমাজের জন্য বোঝা হয়ে পড়ে।

আরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।