যে গ্রামে স্বাগত জানায় গোলাপ

আব্দুর রাজ্জাক সরকার আব্দুর রাজ্জাক সরকার
প্রকাশিত: ০৫:৩৬ এএম, ০২ মে ২০১৭
ছবি : আব্দুর রাজ্জাক সরকার

গ্রামের বুক চিরে চলে গেছে আঁকাবাঁকা সরু পথ। দু’পাশে বিস্তীর্ণ গোলাপের বাগান। যতদূর চোখ যায়, শুধু সারি সারি লাল গোলাপ। ফুটে থাকা গোলাপের সুগন্ধ আর চোখ জুড়ানো দৃশ্য নিয়ে সেজে আছে পুরো গ্রাম। গোলাপের রাজ্য এই গ্রামের নাম সাদুল্লাপুর। তবে অনেকের কাছে এটি ‘গোলাপ গ্রাম’ নামে পরিচিত। লাল টকটকে গোলাপ মাথা নাড়িয়ে দর্শনার্থীদের স্বাগত জানায় এ গ্রামে।

তুরাগ নদীর তীরে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নে এই গোলাপ গ্রাম সাদুল্লাহপুরের অবস্থান। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রামের প্রায় ৮০ ভাগ লোকের পেশা গোলাপ চাষ। সারা বছর ফুলের চাষ হয় এখানে। লাল গোলাপের পাশাপাশি সাদা গোলাপ, জারবেরা ও গ্ল্যাডিওলাস ফুলেরও চাষ হয় এখানে।

Rose

কথা হয় স্থানীয় গোলাপচাষি জব্বার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, গ্রামের অধিকাংশ মানুষের সংসার চলে গোলাপ বিক্রি করে। গোলাপ বিক্রি করে লাভও মোটামুটি সন্তোষজন। তবে অতিবৃষ্টিতে আমাদের একটু সমস্যায় পড়তে হয়। ছোট ছোট গাছের চারা নষ্ট হয়ে যায়।

জব্বার হোসেন আরো জানান, প্রতিদিন বিকেল হওয়ার একটু আগে থেকে বাগান থেকে গোলাপ ফুল তোলার কাজ শুরু হয়। সাদুল্লাহপুর ও এর আশপাশে রয়েছে তিনটি ফুলের হাট। ফুল তুলে এসব হাটে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন জেলার বড় বড় ফুল ব্যবসায়ীরা ফুল কিনতে আসেন এসব হাটে। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত চলে ফুল বেচাকেনা। ভোর হওয়ার আগেই গোলাপ গ্রামের ফুল পৌঁছে যায় ঢাকার শাহবাগ, খামারবাড়িসহ বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা ফুল বিক্রির দোকানে। ঢাকার বাইরেও যায় এই গ্রামের ফুল।

Rose

ঢাকার খুব কাছে হওয়াই যান্ত্রিক জীবনের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী ভিড় জমান এই গোলাপ গ্রামে। একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত আশিকুর রহমান জানান, ঢাকার এতো কাছে এতো সুন্দর একটি গ্রাম আছে জানতাম না। এক বন্ধুর কাছ থেকে এই গ্রামের খবর জানতে পেরে ঘুরতে এসেছি। গ্রামের স্নিগ্ধ প্রকৃতি এবং গোলাপের মন মাতানো সৌরভ মনকে ভরিয়ে তোলেছে। এখন থেকে ছুটি পেলেই চলে আসবো এই গোলাপ রাজ্যে।

কংক্রিটের নগরীর ব্যস্ততা থেকে যারা একটু মুক্তি পেতে চান তারা যেতে পারেন এই গ্রামে। ঢাকার খুব কাছেই অসাধারণ একটি বিকেল কাটানোর জায়গা এই গোলাপ গ্রাম। শান্ত-চুপচাপ এই গ্রামের রাস্তায় হেঁটেও শান্তি। গোলাপের সৌরভে আপনার যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি অনেকটা দূর হয়ে যাবে।

Rose

কীভাবে যাবেন :
ট্রলারে করে সাদুল্লাহপুর যেতে চাইলে গাবতলী মাজার রোড কিংবা মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বর থেকে রিকশায় দিয়াবাড়ি বটতলা ঘাট যেতে হবে। ঘাট থেকে ৩০ মিনিট পরপর সাদুল্লাহপুরের উদ্দেশে ট্রলার ছাড়ে। জনপ্রতি ভাড়া ৩০ টাকা। ট্রলার থেকে নেমে ৫০ গজ সামনে গেলে পাবেন বাজার। এই বাজার পার হলেই রাস্তার দুই পাশে সারি সারি গোলাপ বাগান। হেঁটে অথবা রিকশাযোগে গোলাপ গ্রাম ঘুরে দেখতে পারেন। তবে গোলাপের কাঁটা থেকে সাবধান। গ্রুপ বেধে গেলে ট্রলার চুক্তি করেও নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে ৮০০-১০০০ টাকা পড়বে। ৩৫ জন একসঙ্গে উঠা যায় ট্রলারে।

মোটরসাইকেল অথবা প্রাইভেটকার নিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে মিরপুর বেড়িবাঁধ ধরে বিরুলিয়া সেতু হয়ে সোজা গেলে আকরান বাজার। এই বাজার থেকে একটু সামনে এগোলেই দেখা পাবেন গোলাপ গ্রামের।

খাবার :
দুপুরের খাবার সঙ্গে নিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। তবে এখানে হোটেলেও খাওয়ার সুব্যবস্থা আছে। সাদুল্লাহপুর ঘাটের বটতলার হাটে মিরচিনি, মুরালি, দই ও মিষ্টিসহ আরো অনেক খাবার পাবেন। আছে অতুলনীয় গরুর দুধের চা ও দুধমালাই।

এআরএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।