যেভাবে এলো মে দিবস


প্রকাশিত: ১১:৫৭ এএম, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

মে মাসের প্রথম দিন আন্তর্জাতিক শ্রমদিবস যা মে দিবিস হিসেবে পরিচিত। দিনটিকে বিশ্বের অনেক দেশেই মে দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আবার বেশ কিছু দেশে লেবার ডে হিসেবে পালন করা হয়। ১৮৮৬ সালের পহেলা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের সামনে দৈনিক ৮ ঘন্টা কর্মদিবসের জন্যে আন্দোলন করেন কিছু শ্রমিক। সেদিন আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর গুলি চালান হয় এবং এতে প্রায় ১১ জন শ্রমিক মৃত্যুবরন করেন। এ কারনেই শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র আর কানাডায় এই দিনটি পালন করা হয়না!

মে দিবসের বিপ্লবের পূর্বে শ্রমিকদের উপর চলতো অমানুষিক নির্যাতন। প্রতিদিন ১০-১২ ঘন্টা এবং সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করানো হতো তবে বিনিময়ে পারিশ্রমিক দেয়া হতো খুবই নগন্য। শিল্প মালিকরা অধিক লাভ ভোগ করতো উল্টোদিকে শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করতো অনেকটা ক্রীতদাস প্রথার মতো।

১৮৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের একদল শ্রমিক দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার জন্য আন্দোলন শুরু করেন, এবং তাদের এ দাবী কার্যকর করার জন্য তারা সময় বেঁধে দেয় ১৮৮৬ সালের পহেলা মে। কিন্তু কারখানা মালিকগণ এ দাবী মেনে নিল না। ৪ মে ১৮৮৬ সালে সন্ধ্যাবেলা হালকা বৃষ্টির মধ্যে শিকাগোর হে-মার্কেট নামক এক বাণিজ্যিক এলাকায় শ্রমিকগণ মিছিলের উদ্দেশ্যে জড়ো হন। তারা ১৮৭২ সালে কানাডায় অনুষ্ঠিত এক বিশাল শ্রমিক শোভাযাত্রার সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে এটি করেছিলেন। আগস্ট স্পীজ নামে এক নেতা জড়ো হওয়া শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলছিলেন। হঠাৎ দূরে দাঁড়ানো পুলিশ দলের কাছে এক বোমার বিস্ফোরন ঘটে, এতে এক পুলিশ নিহত হয়। পুলিশবাহিনী তৎক্ষনাত শ্রমিকদের উপর অতর্কিতে হামলা শুরু করে যা রায়টের রূপ নেয়। রায়টে ১১ জন শ্রমিক শহীদ হন। পুলিশ হত্যা মামলায় আগস্ট স্পীজ সহ আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়।

এক প্রহসনমূলক বিচারের পর ১৮৮৭ সালের ১১ নভেম্বর উন্মুক্ত স্থানে ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।ফাঁসির মঞ্চে আরোহনের পূর্বে আগস্ট স্পীজ বলেছিলেন, `আজ আমাদের এই নি:শব্দতা, তোমাদের আওয়াজ অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হবে।` পরবর্তীতে ২৬ জুন, ১৮৯৩ ইলিনয়ের গভর্ণর অভিযুক্ত আটজনকেই নিরপরাধ বলে ঘোষণা দেন, এবং রায়টের হুকুম প্রদানকারী পুলিশের কমান্ডারকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়।

শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের `দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার` দাবী অফিসিয়াল স্বীকৃতি পায়। আর পহেলা মে বা মে দিবস প্রতিষ্ঠা পায় শ্রমিকদের দাবী আদায়ের দিন হিসেবে, পৃথিবীব্যাপী আজও তা পালিত হয়।

আরএএইচ/এইচএন/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।