লাল-সবুজের ভালোবাসায় বিদেশিরা
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যখন তুর্কি এয়ারলাইন্সের বিমানটা ‘টেক অফ’ করল; তখন ঝাপসা চোখে জানালা দিয়ে রাতের ঢাকা শহরটাকে শেষবারের মতো দেখলাম।
রাতের ঢাকা শহর দেখতে আমার এমনিতেই অনেক ভালো লাগত। কিন্তু তুর্কি বিমানের জানালা দিয়ে উপর থেকে এবারের দেখাটা অন্যরকম। সত্যিই যেন জাদুর শহর দেখলাম!
ঝাপসা চোখে দেখলাম শহরের সব আলো কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছে। ঠিক সেই মুহূর্তের খারাপ লাগাটা বলে বোঝানোর মতো নয়।
ফিনল্যান্ডে আসার পর দেশের জন্য এতোটা খারাপ লাগবে তা কখনও চিন্তাও করতে পারিনি। বাংলায় কথা বলতে না পারার যে কষ্ট, আমার কাছে মনে হয় এর চেয়ে বড় কষ্ট আর কিছু হতে পারে না।
প্রতিদিন শুধু মনে হয় যে, কবে দেশে যাব আর টিএসসির টং দোকানে বন্ধুদের সঙ্গে বসে এককাপ চা খাব। মনে হয় যেন ওই টং দোকানের চায়ের কাপেই আছে পৃথিবীর সব সুখ।
বাংলাদেশ নিয়ে আমার বিদেশি বন্ধুদের সবসময় অনেক গল্প বলি। তারাও খুব আগ্রহ নিয়ে আমার দেশের গল্প শোনে এবং অবাক হয়। তাদের এই অবাক হওয়াটা আমার ভীষণ ভালো লাগে। আমি দ্বিগুণ উৎসাহে আরও গল্প বলি।
তাদের মতে, একটা দেশ কীভাবে এতো সুন্দর হতে পারে? কীভাবে একটা দেশের মানুষ এতোটা আন্তরিক হতে পারে? কীভাবে একটা দেশের খাবার এতো সুস্বাদু হতে পারে। আমি শুধু মুচকি হাসি আর বলি, ‘কাম অ্যান্ড ভিজিট মাই কান্ট্রি উইথ মি অ্যান্ড ইয়ু উইল নো হাউ’।
মজার ব্যাপার হচ্ছে- আমার মুখে বাংলাদেশের এতো গল্প শুনে আমার জার্মান, নেদারল্যান্ডস এবং আমেরিকান বন্ধু আমার সঙ্গে বাংলাদেশে ঘুরতে আসবে এ বছরের শেষে।
আমার ব্যাগে বাংলাদেশের পতাকা দেখে তারা অনেক অবাক হয়। তখন আমি তাদের এ পতাকা অর্জনে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বলি। তাদের শোনাই যে, আমরাই একমাত্র জাতি যারা আমাদের মাতৃভাষা ‘বাংলা’র জন্য প্রাণ দিয়েছি।
তারা অবাক না হয়ে পারে না। দেশ এবং ভাষার জন্য এতো ভালোবাসা তারা এর আগে কখনও দেখেনি। আমি তাদের অবাক হওয়া দেখে বুঝতে পারি- বাংলাদেশের জন্য তাদের ভালোবাসার কথা।
তারা বাংলাদেশের পতাকা পরম মমতায় ছুঁয়ে দেখে। আর আমার বুকের ভেতরটা ভরে ওঠে এক অদ্ভুত ভালো লাগায়। মনে হয়, এই তো আমার দেশ আমার কাছেই আছে!
এসইউ/জেআইএম