সাহিত্য : মরহুম গোলাম সামদানী কোরায়শী


প্রকাশিত: ০৭:২০ এএম, ০৯ এপ্রিল ২০১৭

সাহিত্য ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মরহুম গোলাম সামদানী কোরায়শীকে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) ২০১৭ প্রদান করা হয়। তাঁকে নিয়ে আজকের আয়োজন-

গোলাম সামদানী কোরায়শী নেত্রকোনা জেলার কাউরাট গ্রামে ১৯৩০ সালের ৫ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ১৯৫৪ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি কামেল পাস করেন এবং ‘মোমতাজুল মোহাদ্দেসীন’ টাইটেল ও স্বর্ণপদক লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে অনার্স ও এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।

কোরায়শীর চাকরিজীবন শুরু হয় ১৯৬১ সালে বাংলা একাডেমিতে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সঙ্গে ‘আঞ্চলিক ভাষার অভিধান’র সহকারি সম্পাদক হিসেবে। তাঁর মেধা, বহু ভাষায় পাণ্ডিত্য ও প্রাচীন পাণ্ডুলিপি পাঠোদ্ধারের দক্ষতা এই মূল্যবান অভিধানটি সংকলনে বিশেষ ভূমিকা যুক্ত করে। সাহিত্যের সব শাখায় বিচরণকারী কোরায়শীর মৌলিক সাহিত্যকর্মের পাশাপাশি অনুবাদ একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

তিনি আরবি, ফার্সি, উর্দু, হিন্দি, সংস্কৃত ও ইংরেজি ভাষার বেশ কিছু মূল্যবান গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদ করেন। তাঁর অনুবাদকর্মের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হচ্ছে ইবনে খালদুনের ‘আল মুকাদ্দিমা’র মূল আরবি থেকে অনুবাদ। সেমেটিক মিথলজি অবলম্বনে তাঁর রচিত বিশেষ উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘স্বর্গীয় অশ্রু’, ‘মহাপ্লাবন’, ‘পুত্রোৎসর্গ’, ‘চন্দ্রতাপ’, ‘যষ্ঠিমায়া’ ইত্যাদি। অসংখ্য ছোটগল্প ছাড়াও তিনি নাটক ও কবিতা রচনা করেছেন। শিশুদের জন্য তাঁর সমৃদ্ধ রচনার তালিকায় রয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’ এবং ‘ছোটদের দুদু মিয়া’। তাঁর রচিত আত্মজৈবনিক রচনা ‘সিন্ধুর এক বিন্দু’ ত্রিশ থেকে ষাটের দশকে পূর্ববঙ্গের তৎকালীন সাধারণ জনজীবনের মূল্যবোধ, জীবন সংগ্রাম ও সামাজিক ইতিহাসের এক অনবদ্য উপাখ্যান।

prize

স্বাধীনতা সংগ্রামের কিছু পূর্বে গোলাম সামদানী কোরায়শী স্থায়ীভাবে ময়মনসিংহের নাসিরাবাদ কলেজে বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপনায় যুক্ত হন। এ সময় তিনি লেখালেখির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী সংগ্রাম শিবিরের আহ্বায়ক হওয়া থেকে শুরু করে সর্বশেষ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ময়মনসিংহের আহ্বায়কের বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে যান। তিনি ময়মনসিংহের উদীচী ও সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। এছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি এবং বাংলাদেশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

ব্যক্তিজীবনে কোরায়শী ছিলেন অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও সংস্কৃতিমনা। বিশেষ করে ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তাঁর অবদান অসামান্য।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও রাজনৈতিক বিশ্বাসের পক্ষে তিনি কলম ধরেছেন ১৫ আগস্ট-পরবর্তী বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখা কলাম ও বেশ ক’টি মূল্যবান প্রবন্ধে।

সাহিত্যকর্মের জন্য কোরায়শী ১৯৮৭ সালে আবুল মনসুর আহম্মদ সাহিত্য পুরস্কার এবং ১৯৯০ সালে অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৯১ সালের ১১ অক্টোবর এই বহুভাষি পণ্ডিত ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক পরলোক গমন করেন।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।