সাহিত্য : রাবেয়া খাতুন


প্রকাশিত: ০৬:৫৬ এএম, ০৮ এপ্রিল ২০১৭

সাহিত্য ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রাবেয়া খাতুনকে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৭ প্রদান করা হয়। তাঁকে নিয়ে আজকের আয়োজন-

রাবেয়া খাতুন ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। রক্ষণশীল মুসলিম সমাজে জন্মেও নারীর অবরুদ্ধতার অবসান ঘটিয়ে মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। সমাজ সংস্কারের লক্ষ্যে অল্প বয়সেই রাবেয়া খাতুন লেখনীর সূচনা ঘটান, সাহিত্য-অঙ্গনে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন নিজের অবস্থান। কর্মজীবনে তিনি লেখালেখির পাশাপাশি সিনেমা, খাওয়াতীন ও অঙ্গনা পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন।

রাবেয়া খাতুনের প্রথম উপন্যাস ‘মধুমতি’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে। উপন্যাস, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, কিশোর উপন্যাস এবং স্মৃতিকথা মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। ফেরারী সূর্য, বায়ান্ন গলির এক গলি, দিবস রজনী, নীল নিশিথ, জীবনের আর এক নাম, ই ভরা বাদর মাহ ভাদর, মেঘের পরে মেঘ, একাত্তরের নয়মাস, বাগানের নাম মালনিছড়া, রমনা পার্কের পাঁচ বন্ধু, পাবনা মানসিক হাসপাতাল, শঙ্খ সকাল ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য বই। প্রায় এক হাজার ছোটগল্প লিখেছেন তিনি।

prize

বাংলাদেশের কথাসাহিত্যের সামগ্রিক অগ্রযাত্রায় রাবেয়া খাতুনের অবদান তাৎপর্যপূর্ণ। সাহিত্যকর্ম বিবেচনায় তিনি একদিকে গ্রামভিত্তিক মধ্যবিত্ত সমাজের রূপান্তরের রূপকার এবং অন্যদিকে নাগরিক মধ্যবিত্তের বিকাশ ও বিবর্তনের দ্রষ্টা। সর্বক্ষেত্রেই রয়েছে তাঁর নিজস্ব জীবনবোধ ও অন্তর্দৃষ্টিমূলক প্রতিভার সমন্বয়। ছোটগল্প, ভ্রমণসাহিত্য, স্মৃতিকথামূলক রচনা, শিশুসাহিত্যে তাঁর স্বকীয়তা বাংলা সাহিত্যে এক নতুন মাত্রা সংযোজন করে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ও গল্প রচনায় তাঁর অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

রাবেয়া খাতুনের উপন্যাস দুঃসাহসিক অভিযান, মেঘের পরে মেঘ, মধুমতি, কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি, মহাপ্রলয়ের পর অবলম্বনে পাঁচটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তাঁর জনপ্রিয় উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘মেঘের পরে মেঘ’ সব মহলে সমাদৃত।

prize

রাবেয়া খাতুন দীর্ঘদিন যাবৎ শিল্প, সাহিত্য, চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে জড়িত থেকেছেন। বাংলা একাডেমি কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের গঠনতন্ত্রের পরিচালনা পরিষদের সদস্য এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জুরিবোর্ডের বিচারক হিসেবে তিনি দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি শিশু একাডেমি, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ, ঢাকা লেডিস ক্লাব, বিজনেস ও প্রফেশনাল উইমেনস ক্লাব, বাংলাদেশ লেখক শিবির, বাংলাদেশ কথাশিল্পী সংসদ ও মহিলিা সমিতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন।

সাহিত্যকর্মে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রাবেয়া খাতুন ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৯৩ সালে একুশে পদক, ১৯৯৮ সালে ঋষিজ সাহিত্য পদক ও অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কার এবং ১৯৯৯ সালে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়া তিনি নাটকের জন্য ১৯৯৭ সালে টেনাশিনাস পুরস্কার এবং চলচ্চিত্রের জন্য ২০০৫ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার লাভ করেন।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।